ভারতের সিভিল সার্ভিসে যোগ দিতে হলে প্রার্থীদের ইউপিএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। প্রতিবছর লাখ লাখ মানুষ এই পরীক্ষায় দেন। তবে সম্প্রতি অ্যানালাইটিকস ইন্ডিয়া ম্যাগাজিন নামে একটি সংস্থা চ্যাটজিপিটির সামনে হাজির করে ইন্ডিয়ান পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষার সেট ‘এ’ প্রশ্নপত্র। ২০২২ সালের ইউপিএসসি প্রিলিমিনারির প্রশ্নপত্র ছিল সেটি। এই পরীক্ষায় ফেল করে বসে চ্যাটজিপিটি।
এনডিটিভির প্রতিবেদন অনুযায়ী, মোট ১০০ টি প্রশ্নের মধ্যে মাত্র ৫৪টি প্রশ্নের উত্তর দিতে পেরেছে চ্যাটজিপিটি। ভূগোল, ইতিহাস, ইকোলজি, বিজ্ঞান, কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স, সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ও পলিটিকসের ওপর দেওয়া হয় প্রশ্ন। ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল হিসেবে চ্যাটজিপিটির কাছে ইউপিএসসি সম্পর্কে বিশাল জ্ঞানভান্ডার থাকলেও ইউপিএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে যে দক্ষতা এবং চিন্তা করার ক্ষমতার প্রয়োজন— তা এই চ্যাটবটের নেই।
সম্প্রতি, সিঙ্গাপুরের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায়ও ফেল করে চ্যাটজিপিটি। সিঙ্গাপুরের সংবাদমাধ্যম দ্য স্ট্রেইটস টাইমস সম্প্রতি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চ্যাটবট চ্যাটজিপিটির একটি পরীক্ষা নেয়। মূলত সিঙ্গাপুরের পিএসএলই পরীক্ষার প্রশ্নপত্র দেওয়া হয় এই চ্যাটবটকে। এ পরীক্ষায় ফেল করেছে চ্যাটজিপিটি। পিএসএলই হলো সিঙ্গাপুরে সদ্য প্রাইমারি পাস করা শিক্ষার্থীদের একটি বাধ্যতামূলক পরীক্ষা। এই পরীক্ষার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে শিক্ষার্থীদের কে কোন কোন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যাবে তা নির্ধারণ করা হয়।
বিজনেস ইনসাইডারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চ্যাটজিপিটিকে পিএসএলই এর ২০২০, ২০২১, এবং ২০২২ এর গণিত, বিজ্ঞান এবং ইংরেজি বিষয়ের প্রশ্নপত্র দেওয়া হয়েছিল। গণিতের তিনটি পত্রে এটি ১০০ নম্বরের মধ্যে গড়ে ১৬ পেয়েছে। ডায়াগ্রাম বা গ্রাফ যুক্ত এমন কোনো প্রশ্ন বুঝতে বা উত্তর দিতে পারেনি চ্যাটজিপিটি। ফলে, ওই প্রশ্নগুলোর জন্য শূন্য নম্বর দেওয়া হয়েছে এটিকে।
কিন্তু চ্যাটজিপিটি সহ লিখিত প্রশ্নের উত্তরও সঠিকভাবে দিতে পারেনি। চ্যাটবটটিকে ৬০০০০০, ৫০০০, ৪০০, এবং ৩ এর যোগফল জিজ্ঞাসা করা হলে, এটি উত্তর দেয় ৬৫,৫০৩। সঠিক উত্তর হলো ৬৫,৪০৩। তবে চ্যাটজিপিটি বিজ্ঞান বিষয়ে তুলনামূলক ভালো করেছে। বিজ্ঞানে ১০০ নম্বরের মধ্যে গড়ে ২১ পেয়েছে চ্যাটবটটি।
গত জানুয়ারিতে চ্যাটজিপিটিতে যুক্তরাষ্ট্রের দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক পরীক্ষা নেওয়া হয়। দুটি পরীক্ষাতেই পাস করতে সক্ষম হয় এই চ্যাটবট। তবে কোনটিতেই ভালো নম্বর পায়নি এটি।
সিএনএন এর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন পরীক্ষার চারটি কোর্সে এবং পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হোয়ার্টন স্কুল অব বিজনেসে পরীক্ষা নেওয়া হয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চ্যাটবট চ্যাটজিপিটির। আইন পরীক্ষায় মোট ৯৫টি বহুনির্বাচনী প্রশ্ন এবং ১২টি রচনামূলক প্রশ্ন দেওয়া হয় চ্যাটজিপিটিতে। সবগুলি কোর্সে পাস করলেও পেয়েছে ‘সি প্লাস’ গ্রেড।
অপরদিকে, পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হোয়ার্টন স্কুলের বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কোর্সের পরীক্ষা গুলিতে তুলনামূলক ভালো করেছে এই চ্যাটবট। এই পরীক্ষা গুলিতে বি থেকে ‘বি মাইনাস’ পর্যন্ত গ্রেড পেয়েছে চ্যাটজিপিটি।
হোয়ার্টনের অধ্যাপক ক্রিশ্চিয়ান টেরউইশ বলেছিলেন, ‘বিজনেস ম্যানেজমেন্টের বেসিক অপারেশনস ম্যানেজমেন্ট ও প্রসেস অ্যানালাইসিসের প্রশ্নে চ্যাটজিপিটি খুব ভালো উত্তর দিয়েছে। তবে উচ্চতর বিষয়ের প্রশ্ন গুলিতে ভালো উত্তর দিতে পারেনি এমনকি সাধারণ গণিতে খুব আশ্চর্যজনক ভুল করেছে।’