ভর্তি মৌসুমে শিক্ষক সংকটের আশঙ্কা

ডেস্ক,১৩ এপ্রিল: চাঁদপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে রাজস্ব খাতে ইনস্ট্রাক্টর, জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর, ওয়ার্কশপ সুপার পদে শিক্ষক আছেন মাত্র ৫ জন। এসব পদে স্টেপ প্রকল্পের শিক্ষক আছেন ২০ জন। প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১৫২৪ জন।

মুন্সীগঞ্জ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে এসব পদে রাজস্ব খাতের শিক্ষক আছেন মাত্র ৪ জন, প্রকল্পের শিক্ষক আছেন ১৮ জন। একইভাবে শরীয়তপুর, ফেনী, ভোলা, বরগুনা, কক্সবাজার, লক্ষ্মীপুর, ঠাকুরগাঁও, গোপালগঞ্জ, কুড়িগ্রামসহ দেশের সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোও সরকারি শিক্ষকের চেয়ে প্রকল্পভুক্ত শিক্ষদের ওপর নির্ভরশীল।

অথচ এ প্রকল্প শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে আগামী ৩০ জুন। ফলে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর আসছে ভর্তি মৌসুমে এসব প্রতিষ্ঠানে এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষক যদি না থাকেন, তা হলে একাডেমিক কার্যক্রম চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। জানা গেছে, কারিগরি শিক্ষার মানোন্নয়নে ২০১০ সালে দক্ষতা ও প্রশিক্ষণ উন্নয়ন শীর্ষক (স্কিলস অ্যান্ড ট্রেনিং এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্ট বা স্টেপ) একটি প্রকল্প চালু করে সরকার।

নিয়োগের দীর্ঘসূত্রতা এড়াতে এ প্রকল্পের অধীনে ২০১২ এবং ২০১৪ সালে দুই ধাপে মোট ১০২৫ জন শিক্ষককে চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগ করে সরকার। পরে অনিশ্চয়তার কারণে তাদের অনেকেই চাকরি ছেড়ে চলে গেলেও উন্নয়ন খাতে বর্তমানে কর্মরত আছেন ৮৭৬ জন। এর মধ্যে দুদফা প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে আগামী জুনে শেষ হচ্ছে প্রকল্পটি। ফলে চাকরি হারানোর শঙ্কায় রয়েছেন প্রকল্পভুক্ত এসব শিক্ষকরা।

এই শিক্ষকরা বলছেন, ৩০ জুনের পর তার চাকরির ভাগ্য অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। তাদের প্রত্যেকেরই পরিবার আছে। ফলে বিদ্যমান চাকরি সংকটের বাজারে চাকরিচ্যুত হওয়ার আশঙ্কায় নির্ঘুম রাত কাটছে তাদের। অথচ কারিগরি শিক্ষার দুরাবস্থার সময় তারা হাল ধরেছিলেন। ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের (আইডিইবি) কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভাপতি একেএমএ হামিদ বলেন, সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনায় বারবার বলা হয়েছে দক্ষ কর্মশক্তি ও কর্মীর অভাব আছে। এমন পরিস্থিতিতে দক্ষ কর্মীদের কর্মক্ষেত্র থেকে বের করে দেওয়া হলে উন্নয়ন আরও ব্যাহত হবে।

আইডিইবির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাধারণ সম্পাদক শামসুর রহমান বলেন, রাজস্ব খাতে বর্তমানে ৬৫০ জনের মতো কারিগরি শিক্ষক রয়েছেন। সে কারণেই এই ৮৭৬ শিক্ষক না থাকলে আবারও ধসে পড়বে কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থা। বঙ্গবন্ধু ডিপ্লোমা প্রকৌশলী পরিষদের সভাপতি খবির হোসেন বলেন, জুন মাস থেকে যদি স্টেপের শিক্ষকরা না থাকেন তা হলে ৪৯টি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিটিতে ১৭-১৮ জন করে শিক্ষক সংকট হবে। এতে কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি ১০-১২ লাখ রোহিঙ্গাকে খাওয়াতে পারেন, তা হলে এই ৮৭৬ শিক্ষকের জন্যও ব্যবস্থা করবেন তিনি।

বাংলাদেশ পলিটেকনিক টিচার্স ফেডারেশনের (বিপিটিএফ) কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বলেন, ৮৭৬ শিক্ষক ও তাদের পরিবারের রুটি-রুজির বিষয় নিয়ে সরকারের ভাবা উচিত। এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, এই শিক্ষকদের সাধারণ কোনো নিয়মের মধ্য দিয়ে আত্তীকরণ কিংবা অন্য কোনো প্রকল্পে নেওয়ার সুযোগ নেই। কারণ তাতে সবাই যে একটা সমান অধিকার পেয়ে অ্যাপ্লাই করবে সে সুযোগ নষ্ট হবে। অধিকার ক্ষুণ্ন হলে আবার আদালতের হস্তক্ষেপে নিয়োগ বন্ধ হয়ে যাবে। সে কারণে একেবারে ভিন্নভাবে চেষ্টা করছি, কী করে এই অভিজ্ঞ যোগ্য শিক্ষকদের আমরা ধরে রাখতে পারি। এ ধরনের একটি চেষ্টায় সময় লাগবে। আমি মনে করি এই শিক্ষকদের অভিজ্ঞতা হারিয়ে ফেলা ঠিক হবে না। তবে এ মুহূর্র্তে নিশ্চয়তা দিতে পারছি না, কিন্তু চেষ্টা করছি।

সুত্র : আমাদের সময়

Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।