বিডি নিউজ,২৬ অক্টোবর: বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ কোনটি? প্রশ্ন করে তার উত্তর বাছাইয়ে দেওয়া হয়েছে চারটি ধর্মগ্রন্থের নাম; ভর্তি পরীক্ষায় এমন প্রশ্ন হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে।
বুধবার বিকালে অনুষ্ঠিত চারুকলা অনুষদের ‘আই’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার৭৬ প্রশ্ন ছিল এটি। উত্তর বাছাইয়ের জন্য দেওয়া ছিল- (ক) পবিত্র কুরআন শরীফ (খ) পবিত্র বাইবেল (গ) পবিত্র ইঞ্জিল (ঘ) গীতা।
দুই নম্বর সেটের ৪১ নম্বর প্রশ্ন ছিল এমন- ‘মুসলমান রোহিঙ্গাদের উপর মায়েনমারের সেনাবাহিনী ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা সশস্ত্র হামলা চালায় কত তারিখে?’
পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর থেকে এই দুটি ‘সাম্প্রদায়িক প্রশ্ন’ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ব্যাপক সমালোচনা চলছে ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।রাবির সাবেক শিক্ষার্থী সালাউদ্দিন সুমন তার ফেইসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, “বিশ্ববিদ্যালয় তো যোজন যোজন দূরের বিষয়, দেশের কোনো কওমী মাদ্রাসায়ও এমন প্রশ্ন কখনো হয়েছে বলে শুনিনি! এমন প্রশ্ন যারা করেছে, তাদের মূর্খ বলা হলে মূর্খদের অপমান করা হবে। রাজনৈতিক পেশীশক্তি আর হরেক রকমের কোটার বিচারে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নামের বলদ নিয়োগ দিলে তো এমনই হবে!”
প্রশ্ন দুইটি সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষমূলক বলে অভিযোগ তুলে আব্দুল মজিদ নামের এক রাবি শিক্ষার্থী ফেইসবুকে লিখেছেন, “এখানে শুধু একটি ধর্মের বিশ্বাসকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরে অন্য ধর্মের বিশ্বাসকে ছোট করার অধিকার এদের কে দিয়েছে? এই রকম বিদ্বেষমূলক সাম্প্রদায়িক প্রশ্ন করে চারুকলাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে কি কলুষিত করা হচ্ছে না?
“এই ধরনের জঘন্য কাজের জন্য তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”
প্রশ্নকারীর বিচারের দাবি জানিয়ে জাকির হোসেন তমাল নামে রাবির সাবেক এক শিক্ষার্থী লিখেছেন, “এমন সাম্প্রদায়িকতা ও দায়িত্বজ্ঞানহীন প্রশ্ন তৈরির জন্য অবশ্যই প্রশ্নকারীদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। যেন আগামীতে কেউ এমন প্রশ্ন কেউ করতে না পারেন।”জুবায়ের আলম নামের এক সাবেক শিক্ষার্থী লিখেছেন, “এমনিতেই আমার ক্যাম্পাস নিয়ে আমি নিজে খুব লজ্জাবোধ করি মাঝে মাঝে। একটা বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে ড. কুদরত-ই-খুদার কোন ভাস্কর্য নেই, সত্যেন বোসের কোন ভাস্কর্য নেই, যেখানে আইজ্যাক নিউটনের কোন ছবি নেই, যেখানে জীবনানন্দ দাশের কোন চিহ্ন নেই। আছে শুধু ছাত্র রাজনীতির বিজ্ঞাপন, নিয়ম ভেঙে মিছিল, ছাত্র রাজনীতির লিফলেট। একটা ভালো বইয়ের দোকান পর্যন্ত নেই। আছে শুধু চোথা বিক্রির ফটোকপির দোকান আর বিসিএস আর চাকরির বইয়ে ভর্তি ফুটপাথ। এতকিছুর পরে যখন শুনি এই ধরনের প্রশ্ন করা হচ্ছে, আমার লজ্জাটা আরও কয়েকগুণ বেড়ে যায়।”
বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে এ ধরনের প্রশ্নের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ক্ষোভ প্রকাশ এবং প্রশ্নকারীর বিচারের দাবি উঠেছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রশ্ন প্রণয়নকারীদের বিচার দাবিতে মানববন্ধন করেছে প্রগতিশীল ছাত্রজোট ও কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক জোট।
মানববন্ধনে বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রী রাবি শাখার সভাপতি প্রদীপ মার্ডী বলেন, “চারুকলা অনুষদের ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সাম্প্রদায়িক চিন্তা সংযোজন করেছে। যেটা দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের জন্য অপমানজনক।”
মানববন্ধনে বক্তারা প্রশ্ন প্রণয়নকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন।
এছাড়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ছাত্র ফেডারেশন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।