পঞ্চম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষা বাতিল করে অষ্টম শ্রেণীতে নেয়া হলেও মেধাবৃত্তি বণ্টনের জন্য আলাদা পরীক্ষা থাকবে। এ ক্ষেত্রে দুটি বিকল্প প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে। তা অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় সারসংক্ষেপ পাঠাচ্ছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। একই সারসংক্ষেপে পঞ্চমের পরিবর্তে অষ্টম শ্রেণীতে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী নেয়ার প্রস্তাবও যাচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হুমায়ুন খালিদ শিক্ষাবার্তাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে মঙ্গলবারও সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষ মন্ত্রী অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার জানিয়েছেন, চলতি বছর থেকেই পঞ্চম শ্রেণী শেষে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষা তুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ পরীক্ষা এ বছর থেকে অষ্টম শ্রেণী শেষে নেয়া হবে। তবে পরীক্ষার নাম কি হবে তা ঠিক করবে মন্ত্রিসভা। এসব প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য শিগগিরই মন্ত্রিসভায় এ সংক্রান্ত সারসংক্ষেপ পাঠানো হবে।
পঞ্চম শ্রেণীর পিইসি পরীক্ষা বাতিলের পর এ স্তরে দীর্ঘদিন চালু থাকা মেধাবৃত্তির ভাগ্য কি হবে তা নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা চলছে। ইতিমধ্যে আন্দোলনকারী অভিভাবকরা প্রস্তাব দিয়েছেন, আগের মতোই পঞ্চম শ্রেণীতে সীমিত আকারে বৃত্তি পরীক্ষার আয়োজন করা হোক।
এ বিষয়ে মঙ্গলবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী বলেন, যেহেতু পরীক্ষা থাকছে না, তাই বৃত্তি থাকবে কিনা- তা আলোচনা হয়নি। আর থাকলে কিভাবে রাখা হবে, সেটা আলোচনা করে ঠিক করতে হবে। তবে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারণী সূত্র জানায়, মন্ত্রিসভার জন্য প্রস্তুতকৃত খসড়া সারসংক্ষেপে দুটি বিকল্প প্রস্তাব রাখা হয়েছে। একটি হচ্ছে, উপজেলাভিত্তিক একটি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার আয়োজন। আরেকটি হচ্ছে ছাত্রছাত্রীদের সারা বছর ধরে মূল্যায়ন করা হবে। এ মূল্যায়ন নম্বর এবং বার্ষিক পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে বৃত্তি দেয়া হবে।
এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব বলেন, সারা বছর শিক্ষার্থীকে অ্যাসেসমেন্ট করার পরিকল্পনা আমাদের আছে। কিন্তু এটা এখন পর্যন্ত চালু করা যায়নি। কেননা এটির সঙ্গে স্কুলগুলোকে অনলাইন কানেকটিভিটি এবং তথ্যপ্রযুক্তিতে উপযুক্ত করার সম্পর্ক আছে। এখন পর্যন্ত খুব কম স্কুলই এ মূল্যায়নের জন্য উপযুক্ত। যদিও আমরা এ পদ্ধতিতে যাব।
কিন্তু এখন তা সম্ভব হচ্ছে না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ২০১০ সালের শিক্ষা নীতিতেই প্রাথমিকে উপজেলাভিত্তিক প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার কথা আছে। আমরা সেটা গ্রহণ করব। এ পরীক্ষার ভিত্তিতেও বৃত্তি বণ্টন করা যায়। আইসিটিতে স্কুলগুলো সমৃদ্ধ না করা পর্যন্ত বৃত্তি বণ্টনের জন্য হয়তো এ পরীক্ষাই আমাদের মাধ্যম হতে পারে। তবে চূড়ান্তভাবে আমরা কোন পন্থা অবলম্বন করব, সেটা মন্ত্রিসভা নির্ধারণ করে দেবে।
২০০৯ সালের আগে পঞ্চমে আলাদা বৃত্তি পরীক্ষা হতো। ওই বছর পিইসি পরীক্ষা চালুর পর এ পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতেই বৃত্তি দেয়া হচ্ছে।
১৮ মে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের এক সভায় প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত করা হয়। এরপর ৩০ মে এক বৈঠকে প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয় নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, শেষবারের মতো এ বছর পঞ্চম শ্রেণী শেষে সমাপনী পরীক্ষা নেয়া হবে। এ সিদ্ধান্ত প্রকাশের পর অভিভাবকরা আন্দোলন করছিলেন। তারা চাচ্ছেন, এবছর থেকেই এ পরীক্ষা বাতিল হোক। পাশাপাশি দাবির পক্ষে উচ্চ আদালতে একটি রিট দায়ের করা হয়।
এমন প্রেক্ষাপটে সমাপনী পরীক্ষার বিষয়ে মন্ত্রী নতুন সিদ্ধান্তের কথা জানালেন। তিনি মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি নিশ্চিত হয়েই বলছি, এ বছর থেকেই পঞ্চম শ্রেণী শেষে সমাপনী পরীক্ষা থাকবে না। একবারে অষ্টম শ্রেণী শেষে এ পরীক্ষা হবে।’
মন্ত্রী আরও বলেন, বর্তমানে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক ও অবৈতনিক আছে। কিন্তু এবার থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যা পর্যায়ক্রমে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক করা হবে।
পঞ্চম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষা বাতিল করে তা অষ্টম শ্রেণীতে নেয়ায় জেএসসি (জুনিয়র স্কুল সার্র্টিফিকেট) পরীক্ষা আর থাকবে না।
এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক সমিতির যুগ্ন সম্পাদক খাইরুল ইসলাম বলেন পঞ্চম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষা বাতিল করায় আমরা খুশি তবে প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে অষ্টম শ্রেণি উন্নিত করতে হবে। এ ব্যাপারে সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে গ্রাম-অঞ্চলে শিক্ষার পরিবেশ ব্যহত হবে। মানসম্মত শিক্ষা অর্জন সম্ভব হবে না।
তিনি শিক্ষাবার্তাকে আরও বলেন শিক্ষক সম্বনয়ের মাধ্যমে প্রতিটি বিদ্যালয়কে ২০১৭ সালে ৬ষ্ট শ্রেণি এবং পর্যায়ক্রমে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নিত করতে হবে।
তবে এ পরীক্ষার প্রস্তুতি বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ড অব্যাহত রেখেছে। ইতিমধ্যে প্রায় ২৪ লাখ ছাত্রছাত্রীর রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হয়েছে। নিবন্ধিত এসব পরীক্ষার্থীই হয়ে যাবে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার্থী।