বিএসএফের গুলিতে কিশোরী নিহত: ভারতকে কড়া প্রতিবাদ জানাল বাংলাদেশ

Image

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যার ঘটনায় ভারতকে কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশনে চিঠি পাঠিয়ে এ প্রতিবাদ জানায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

গত ১ সেপ্টেম্বর রাতে কুলাউড়া সীমান্ত দিয়ে মাকে নিয়ে ভারতের ত্রিপুরায় অভিবাসী ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার সময় ১৩ বছরের স্বর্ণা দাসকে গুলি করে হত্যা করে বিএসএফ।

আরো পড়নু: অধ্যক্ষকে হাতুড়ি দিয়ে পেটাল শিক্ষার্থীরা, জোর করে পদত্যাগপত্রে সই

এ ঘটনায় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, কিশোরী স্বর্ণা দাসকে বিএসএফ গুলি করে হত্যা করে। চিঠির মাধ্যমে ভারতকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানানোর পাশাপাশি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। সীমান্তে এ ধরনের ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত ও অযৌক্তিক।

বাংলাদেশের সীমান্তে ভারতীয় বিএসএফ ধারাবাহিক হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে চললেও বিগত প্রায় দেড় দশক আওয়ামী লীগ সরকারের দিক থেকে তেমন কোনো প্রতিবাদ জানানো হতো না। অনেক মন্ত্রী পর্যন্ত সীমান্ত হত্যার বিষয়ে ভারতের হয়ে সাফাই গাইতেন। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পতন হয় আওয়ামী লীগ সরকারের। প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা।

২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ভোরে ১৫ বছর বয়সী ফেলানী খাতুনকে হত্যা করে বিএসএফ। সেই ঘটনার ১৩ বছরের বেশি সময় পর গত ১ সেপ্টেম্বর একই বাহিনী ১৩ বছরের স্বর্ণা দাসকে হত্যা করে। ফেলানী কুড়িগ্রামের অনন্তপুর সীমান্ত দিয়ে বাবার সঙ্গে ভারত থেকে বাংলাদেশে ফিরছিল। আর স্বর্ণা দাস মৌলভীবাজারের কুলাউড়া সীমান্ত দিয়ে মায়ের সঙ্গে ভারতের ত্রিপুরায় ভাইয়ের কাছে যাচ্ছিল।
ফেলানী হত্যাকাণ্ডের পর তার লাশ দীর্ঘ সময় ঝুলে ছিল কাঁটাতারের বেড়ায়। দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমে ঝুলে থাকা কিশোরী ফেলানীর লাশ প্রবল আলোড়ন তুলেছিল।

ভারতের পেনাল কোড কিংবা আন্তর্জাতিক কোনো আইনেই নিরস্ত্র নাগরিককে গুলি বা নির্যাতন করে মেরে ফেলার বিধান নেই। কেউ অবৈধভাবে সীমান্ত পারাপার করলে তাকে গ্রেপ্তার করে বিচার করা যেতে পারে। কিন্তু ভারত সীমান্ত ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে স্বীকৃত সব আন্তর্জাতিক ও দ্বিপক্ষীয় প্রটোকল অগ্রাহ্য করে সীমান্ত হত্যাকাণ্ড অব্যাহত রেখেছে।

স্বর্ণা দাস হত্যাকাণ্ড ১৯৭৫ সালে সীমান্ত নিয়ে বাংলাদেশ-ভারতের দ্বিপক্ষীয় প্রটোকলের স্পষ্ট লঙ্ঘন বলেও স্মরণ করিয়ে দিয়েছে ঢাকা। বিজ্ঞপ্তিতে এ ধরনের জঘন্য হত্যাকাণ্ডের যাতে পুনরাবৃত্তি না হয়, সে জন্য ভারতের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। একই সঙ্গে দিল্লির প্রতি সীমান্তের সব হত্যাকাণ্ড তদন্তের মাধ্যমে দায়ীদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ।

সীমান্ত নিয়ে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে স্বাক্ষরিত দ্বিপক্ষীয় দুটি প্রটোকল হলো– ‘জয়েন্ট ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ গাইডলাইন্স ফর বর্ডার অথরিটিজ অব দ্য টু কান্ট্রিজ, ১৯৭৫’ এবং ‘দ্য ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ কো-অর্ডিনেটেড বর্ডার ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান, ২০১১’।

জয়েন্ট ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ গাইডলাইন্স ফর বর্ডার অথরিটিজ অব দ্য টু কান্ট্রিজ প্রটোকলের ধারা ৮(আই) অনুসারে, এক দেশের নাগরিক যদি বেআইনিভাবে অন্য দেশে প্রবেশ করার চেষ্টা করে বা কোনো অপরাধে লিপ্ত হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী আত্মরক্ষায় যে কোনো ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারবে। তবে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার না করাই বাঞ্ছনীয়।

আর্টিকেল ৮(এম) অনুসারে, সীমান্ত দিয়ে যদি গরু পাচার করা হয়, তাহলে গরু ও গরু পাচারকারীদের সম্পর্কে তথ্য অপর পক্ষের সীমান্তরক্ষীদের কাছে হস্তান্তর করতে হবে এবং নিকটস্থ থানার পুলিশের কাছে মামলা করে গরু উদ্ধারে পদক্ষেপ নিতে হবে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বাস্তবে দেখা যায়, বিএসএফ এ প্রটোকলে উল্লিখিত নিয়মকানুন না মেনে সন্দেহভাজনদের ওপর সরাসরি গুলি চালায়। যেমনটি স্বর্ণা দাসের ক্ষেত্রেও করেছে।

স্বর্ণা মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নের কালনীগড় গ্রামের পরেন্দ্র দাসের মেয়ে ও স্থানীয় নিরোধ বিহারী উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিল। পরেন্দ্র দাস সাংবাদিকদের বলেন, তাঁর বড় ছেলে দীর্ঘদিন ত্রিপুরায় থাকে। তাকে দেখতে স্বর্ণা ও তার মা ১ সেপ্টেম্বর রাতে স্থানীয় দুই দালালের সহযোগিতায় লালারচক সীমান্ত দিয়ে ভারতে যাওয়ার চেষ্টা করে। রাত ৯টার দিকে ভারতের কাঁটাতারের বেড়ার কাছে পৌঁছালে বিএসএফ তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। স্বর্ণা ঘটনাস্থলে মারা গেলেও ভাগ্যক্রমে স্বর্ণার মা বেঁচে যান।

Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।