নিজস্ব প্রতিবেদক, টাঙ্গাইল :
টাঙ্গাইলের মধুপুরে চলন্ত বাসে তরুণীকে গণধর্ষণের পর হত্যা ঘটনায় গ্রেপ্তার বাসের চালক হাবিব ও সুপারভাইজার সফেদ আলী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এ সময় একজন সাক্ষীর জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।
আজ বুধবার দুপুর আড়াইটা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত টাঙ্গাইলের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আমিনুল ইসলাম, গোলাম কিবরিয়া ও মো. শামছুল হক আলাদাভাবে তাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেছেন বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও মধুপুর থানার উপপরিদর্শক কাইয়ুম খান চৌধুরী।
একই বাসের আরেক হেলপার ময়মনসিংহের লিটন মিয়া ঘটনার সাক্ষী হিসেবে জবাববন্দি দেন। তিনি ঘটনার দুই দিন পর ওই বাসে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ঘটনাটি বাসের স্টাফদের কাছে জানতে পারেন।
এর আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় একই আদালতে বাসের সহকারী শামীম (২৬), আকরাম (৩৫) ও জাহাঙ্গীর (১৯) স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এ নিয়ে গ্রেপ্তার পাঁচ আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিসহ এক সাক্ষীর জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে। জবানবন্দি রেকর্ড শেষে বাসের চালক ও সুপারভাইজারকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
জবানবন্দিতে গ্রেপ্তারকৃতরা জানিয়েছেন, ওই দিন বাসে রূপাসহ ছয় থেকে সাতজন যাত্রী ছিলেন। অন্য যাত্রীরা সিরাজগঞ্জ মোড় এবং বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম প্রান্তে নেমে যান। বঙ্গবন্ধু সেতু পার হওয়ার সময় রূপা একাই বাসে ছিলেন। বাসটি টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার কাছাকাছি এলে বাসের সহকারী শামীম জোর করে রূপাকে বাসের পেছনের আসনে নিয়ে যান। এ সময় রূপা তার কাছে থাকা পাঁচ হাজার টাকা ও মোবাইল ফোন শামীমকে দিয়ে দেন এবং ক্ষতি না করতে অনুরোধ করেন। সেই অনুরোধ উপেক্ষা করে শামীম, আকরাম ও জাহাঙ্গীর তাকে ধর্ষণ করেন। রূপা চিৎকার শুরু করলে ধর্ষকেরা তার মুখ চেপে ধরেন। একপর্যায়ে ঘাড় মটকে রূপাকে হত্যা করা হয়। পরে মধুপুর উপজেলা সদর পেরিয়ে বন এলাকা শুরু হলে পঁচিশ মাইল এলাকার রাস্তার পাশে লাশ ফেলে দেওয়া হয়।
রূপার বাড়ি সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার আসানবাড়ি গ্রামে। তিনি বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে ঢাকা আইডিয়াল ল কলেজে এলএলবি শেষ পর্বে পড়াশোনা করছিলেন। পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি শেরপুর জেলায় ইউনিলিভার বাংলাদেশের প্রোমশনাল ডিভিশনে কর্মরত ছিলেন।
পুলিশ ও ওই তরুণীর পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার রূপা বগুড়ায় শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশ নেন। পরে বগুড়া থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার জন্য সন্ধ্যা ৭টার দিকে ছোঁয়া পরিবহনের বাসে ওঠেন। রাত ১০টা পর্যন্ত রূপার সঙ্গে তার বড় ভাই হাফিজুর রহমান প্রামাণিকের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ ছিল। কিন্তু এরপর থেকে রূপার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরের দিন শনিবার কোনো খোঁজ না পেয়ে হাফিজুর ময়মনসিংহ যান এবং ময়মনসিংহ কোতোয়ালি থানায় এ ব্যাপারে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
শুক্রবার রাতে পুলিশ টাঙ্গাইলের মধুপুর বনাঞ্চল থেকে এক অজ্ঞাত তরুণীর লাশ উদ্ধার করে। শনিবার টাঙ্গাইলে ময়নাতদন্ত শেষে টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় কবরস্থানে অজ্ঞাত পরিচয় লাশ হিসেবে তা দাফন করা হয়। ওই দিনই পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মধুপুর থানায় হত্যা মামলা করে। লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে হাফিজুর সোমবার রাতে মধুপুর থানায় যান। সেখানে লাশের ছবি দেখে তা বোন রূপার বলে শনাক্ত করেন।
পরে মধুপুর থানা পুলিশ মধুপুর অতিক্রম করার সময় ছোঁয়া পরিবহনের সেই বাসটি আটক করে। এ সময় বাসের চালক হাবিব (৪৫), সুপারভাইজার সফেদ আলী (৫৫), বাসের সহকারী শামীম (২৬), আকরাম (৩৫) ও জাহাঙ্গীরকে (১৯) আটক করা হয়।
রূপার বড় ভাই হাফিজুর বলেন, ‘আমার ছোট বোনটি অতি আদরের এবং আমাদের অহংকার ছিল। আমাদের অনেক আশা ছিল রূপা অনেক ভালো কিছু করবে। সে দেশ-দশের উপকারে আসবে কিন্তু ধর্ষকরা সব শেষ করে দিল।’
তিনি দোষীদের ফাঁসির দাবি জানান এবং এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। তিনি জানান, তারা লাশ উত্তোলনের জন্য আদালতে আবেদন করেছেন। রূপাকে তারা বাবার কবরের পাশে দাফন করতে চান।