ওজন নিয়ে সবারই মাথাব্যথা। ওজন কমাতে অনেক কিছুই চলতে থাকে। নিয়মিত শরীরচর্চা না করা, জীবনযাপনের অনিয়ম, তেলযুক্ত খাবার খাওয়া ওজন বাড়ানোর জন্য যথেষ্ট। তবে অনেকেই মনে করেন বাদামে খেলে ওজন বাড়ে। এমন ধারণা একেবারেই ভুল। নিয়ম মেনে বাদাম খাওয়ার পরামর্শ দেন অনেকেই। বাদাম বিভিন্ন খনিজ এবং পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। যা আপনাকে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী করে তোলে।
অনেকেরই ধারণা, বাদাম শরীরের বাড়তি মেদ জমাতে সাহায্য করে আর তাই ডায়েট চার্ট থেকে বাদামকে দূরে রাখেন তারা। বাদাম একটি পুষ্টিকর শস্যদানা। এতে রয়েছে পটাশিয়াম, আয়রন, ভিটামিন বি৬, ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়ামসহ একাধিক জরুরি ভিটামিন ও খনিজ। বাদামে ফ্যাটের পরিমান বেশি থাকায় অনেকেই মনে করেন বাদাম খেলে বুঝি ওজন বাড়ে।
কিন্তু বাদাম কি আসলেই ওজন বাড়ায়? গবেষণায় কি বলে। চলুন জেনে নেওয়া যাক-
রোজ সকালে খালি পেটে ভিজিয়ে রাখা আমন্ড বা কাঠবাদাম খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। বাদামের মধ্যে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন ই, এ, বি ১, বি ৬, ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাসিয়াম রয়েছে। যা চুল এবং ত্বক উভয়ের পক্ষেই খুব ভাল। পিনাট বাটার খাওয়ার পরামর্শ দেন পুষ্টিবিদরা। কাঠবাদাম রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের মতন জটিল রোগ হওয়ার ঝুঁকি কমায়।
গবেষণা বলছে, ওজন বাড়াতে নয় বরং ওজন কমাতে বাদামের ভূমিকা অপরিহার্য। শুধু গবেষকরা নয়, পুষ্টিবিদরাও একই কথা বলছেন। বাদাম বহু গুণে সমৃদ্ধ। শরীরকে চাঙা রাখা, রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়ানো এসব কিছুতেই বাদাম এগিয়ে। কিন্তু বাদাম যে ওজন কমাতে পারে, সেই গুণটি এতদিন অনেকেরই জানা ছিল না। সাম্প্রতিক একটি গবেষণার হাত ধরে তা প্রকাশ্যে এসেছে।
গবেষণা আরও জানাচ্ছে, বাদাম ওজন বাড়িয়ে দেয় সে বিষয়টি একদম বাদও দেওয়া যাবে না। কারণ, ১০০ গ্রাম বাদামে রয়েছে ৫৬৭ ক্যালোরি, ২৫ গ্রাম প্রোটিন, ১৬ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট এবং ৫০ গ্রাম ফ্যাট। এর পাশাপাশি বাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, ওমেগা ৬ ফ্যাট। বাদাম খেলে অবশ্যই শরীরে ফ্যাট প্রবেশ করে। কিন্তু শুধু এই কারণে ডায়েট থেকে বাদাম বাদ দিয়ে দেওয়া যাবে না। এতে টি অ্যাসিডও ভরপুর মাত্রায় রয়েছে।
বাদামে প্রোটিনের পরিমাণ রয়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ, যা ওজন কমানোর জন্য একেবারে আদর্শ। ডায়েট করলে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় প্রোটিনজাতীয় খাবার বেশি করে রাখার কথা বলেন পুষ্টিবিদরা। শুকাতে চাইলে তাই চোখ বন্ধ করে খেতে পারেন বাদাম, মোটা হওয়ার কোনো ভয় নেই।
কাঠ বাদাম : কতটুকু খাবেন, ভিজিয়ে নাকি শুকনা?
পুষ্টিবিদরা জানান, বাদাম মানেই উপকারী। প্রতিদিন সকালে ভেজানো কাঠবাদাম খাওয়ার অভ্যাসে ওজন থাকবে হাতের মুঠোয়। সেই সঙ্গে চিনাবাদাম এবং কাজুবাদামও খুবই উপকারী। শুকাতে চাইলে সেগুলোর ওপর চোখ বন্ধ করে ভরসা রাখতে পারেন।প্রোটিন আর ফাইবারের পরিমাণ যেহেতু বেশি, ফলে দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে বাদাম। অফিসে কাজের ফাঁকেও খেতে পারেন বাদাম। এতে পেটও ভরবে, আবার ওজনও বাড়বে না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে কাজুবাদামের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। কারণ কাজুতে রয়েছে প্রোঅ্যান্থোসায়ানিডিন নামে এক ধরনের ফ্ল্যাভোনল, যা টিউমার কোষের বৃদ্ধি প্রতিরোধ করে। ক্যানসার রোগকে দূরে রাখার জন্য যে যে উপাদানের প্রয়োজন পড়ে, তারও কিছু কিছু মজুত রয়েছে কাজুতে।
কাজু কী ভাবে খেলে বেশী উপকার মিলবে?
কাজুতে রয়েছে উপকারী ফ্যাট, যা আমাদের শারীরের গঠনে কাজে আসে। তাছাড়া এই প্রাকৃতিক উপাদানে যে ফ্যাট বা স্নেহপদার্থ রয়েছে তার প্রভাবে ওজন বাড়ে না, বরং এই ফ্যাটের সহায়তায় বিপাকের হার বাড়ে। সেই সঙ্গে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং হাই কোলেস্টেরলের মতো রোগকেও দূরে রাখে।
কাজু বাদামের সঙ্গে অল্প পরিমাণে জল ও মধু মিশিয়ে ভালো করে ব্লেন্ড করে নিন। এবার এই মিশ্রণটি দুধের মধ্যে মিশিয়ে খান। উপকার পাবেন।
দিনে কতটা বাদাম খাওয়া উচিত?
সারাদিনে ৮ থেকে ১০টির বেশি চিনে বাদাম খাওয়া উচিত নয়। আর দৈনিক ৬টার মতো আমন্ড এবং ২টা ওয়ালনাট খাওয়া যায়। এই হিসেব মেনে চললেই কিন্তু অনায়াসে সুস্থ থাকতে পারবেন। একাধিক রোগব্যাধির ফাঁদ এড়াতে পারবেন। এমনকি ওজন বাড়ার আশঙ্কাও থাকবে না। তাই সবার প্রথমে এই হিসাবটা মাথায় রাখুন।
প্রতিদিন মুঠো মুঠো বাদাম খেলে ওজন তো বাড়বেই, তার পাশাপাশি পেট ফাঁপা, গ্যাস, অ্যাসিডিটি এবং ডায়ারিয়ার মতো সমস্যাও পিছু নিতে পারে। এমনকি হতে পারে অ্যালার্জিও। তাই সুস্থ থাকতে কথায় কথায় বাদাম খাওয়ার বদভ্যাস ছাড়ুন। তাহলেই কিন্তু সুস্থ থাকতে পারবেন।
স্বাস্থ্যকর খাবার হিসেবে বাদামের জুরি নেই। সুস্বাস্থ্যের জন্য অনেকেই খাদ্য তালিকায় রাখে। এমনকি ওজন কমাতে গেলেও বাদাম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।