স্টাফ রিপোর্টার : আজ স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির
জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস।
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। দিনটি সাড়ম্বরে পালন করবে
বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক
সংগঠন।
১৯৭২ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের বন্দীদশা থেকে মুক্তি
পেয়ে রক্তস্নাত স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখেন। স্বাধীন
বাংলাদেশে মহান এই নেতার প্রত্যাবর্তনে স্বাধীনতা সংগ্রামের বিজয় পূর্ণতা
পায়। স্বয়ং বঙ্গবন্ধু তার এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে ‘অন্ধকার হতে আলোর পথে
যাত্রা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস
উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী
দিয়েছেন। দিনটি সাড়ম্বরে পালন করবে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগসহ
বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন। এদিন পুরো জাতি বিভিন্ন
কর্মসূচির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাবে।
১৯৭১ সালের ২৫
মার্চ রাতে পাকিস্তানী হানাদাররা বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবুর রহমানকে তার ধানমন্ডির বাসা থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। তাকে
পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী করা হয়। বাঙালি যখন স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ
করছে, বঙ্গবন্ধু তখন পাকিস্তানের কারাগারে প্রহসনের বিচারে ফাঁসির আসামী
হিসেবে মৃত্যুর প্রহর গুণছিলেন। একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালিদের চূড়ান্ত
বিজয় অর্জিত হওয়ার পর বিশ্বনেতারা বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হন।
আন্তর্জাতিক চাপে পরাজিত পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী শেষ পর্যন্ত বন্দীদশা থেকে
বঙ্গবন্ধুকে সসম্মানে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।
২৯০ দিন পাকিস্তানের কারাগারে প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুর প্রহর গণনা শেষে লন্ডন-দিল্লি হয়ে তিনি ঢাকায় পৌঁছান ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি।
বঙ্গবন্ধু
হানাদারমুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসেন বিজয়ের মালা পরে। সেদিন
বাংলাদেশে ছিল এক উৎসবের আমেজ। গোটা বাঙালি জাতি রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করছিল
কখন তাদের প্রিয় নেতা, স্বাধীন বাংলার মহান স্থপতি স্বাধীন দেশের মাটিতে
আসবেন। পুরো দেশের মানুষই যেন সেদিন জড়ো হয়েছিল ঢাকা বিমানবন্দর এলাকায়।
বিমানবন্দর থেকে ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দান (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান)
পর্যন্ত রাস্তা ছিল লোকারণ্য। স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে পা রেখেই
আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন বঙ্গবন্ধু। দীর্ঘ ৯ মাস পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও
তাদের এ দেশীয় দোসরদের গণহত্যার কথা শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। সেদিন
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লাখো জনতার উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঘোষণা দেন,
‘রক্ত দিয়ে হলেও আমি বাঙালি জাতির এই ভালোবাসার ঋণ শোধ করে যাবো।’
এরপর
প্রতি বছর কৃতজ্ঞ বাঙালি জাতি নানা আয়োজনে পালন করে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ
প্রত্যাবর্তন দিবস। এবার আনন্দঘন পরিবেশে উদযাপিত হতে যাচ্ছে এ দিনটি।
একাদশ সংসদে বিজয়ী হয়ে তার দল গত ৭ জানুয়ারি সরকার গঠন করেছে। নেতাকর্মীরা
তাই আনন্দে আছেন।
এদিকে দিনটি পালনের অংশ হিসেবে বিকাল ৩টায় কৃষিবিদ
ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করে আওয়ামী লীগ। এছাড়া সকাল সাড়ে
৬টায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবন এবং সারাদেশে দলীয় কার্যালয়ে
জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে তার
প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হবে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক
ওবায়দুল কাদের এক বিবৃতিতে সংগঠনের সব শাখাকে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ
প্রত্যাবর্তন দিবসে আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের জন্য আহ্বান
জানিয়েছেন।