বগুড়ায় নন এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের মানবেতর জীবন

বগুড়া জেলার ১২টি উপজেলায় এমপিও বিহীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে প্রায় দেড় শতাধিক। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২ হাজারেরও বেশি শিক্ষক-কর্মচারী কোনো প্রকার বেতন-ভাতা না পান না। এতে তারা পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

বগুড়া জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলার ১২টি উপজেলায় মোট ১৫২টি নন এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে এমপিও বিহীন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৪১টি, নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২৯টি, স্কুল এন্ড কলেজ ১১টি, উচ্চ মাধ্যমিক বেসরকারি কলেজ ৯টি, ডিগ্রী পর্যায়ে বেসরকারি কলেজ ৮টি। মাদ্রাসাগুলোর মধ্যে দাখিল মাদ্রাসা ৩৯টি, আলিম মাদ্রাসা ১২টি, ফাজিল মাদ্রাসা ১টি ও কামিল মাদ্রাসার সংখ্যা ২টি। এসব প্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তেমন কোনো আয় না থাকায় প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন ভাতা দিতে পারে না।

তাছাড়া এমপিওভুক্ত না হওয়ার কারণে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা সরকারি সুযোগ সুবিধা থেকেও বঞ্চিত। সু-দিনের আশায় অপেক্ষা করতে গিয়ে অভাব অনটনের কারণে কারো কারো সংসার ভেঙেছে। আবার কারো চাকরি জীবন শেষ হয়েছে। মানুষ গড়ার কারিগর খ্যাত শিক্ষকদের দেখা মেলেনি এমপিওভুক্ত নামের সোনার হরিণের। তারপরেও আগামীতে সুদিনের অপেক্ষায় বছরের পর বছর বিনা বেতনে চাকরি করে যাচ্ছেন বগুড়ার ২ হাজারের বেশি শিক্ষক।

বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার শবদলদিঘী বালিকা দাখিল মাদ্রাসার কৃষি বিজ্ঞানের সহকারী শিক্ষক সাহিনুর আলম জানান, ১৩ বছর ধরে তিনি বিনা বেতনে চাকরি করে আসছেন। ১৬ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত এ মাদ্রাসায় বর্তমানে শতাধিক ছাত্রী রয়েছে। ১৩ জন শিক্ষক, শিক্ষিকা ও ৩ জন কর্মচারী প্রতিষ্ঠার পর থেকে কোনো বেতন ভাতার মুখ দেখেননি। তাছাড়া বালিকা মাদ্রাসা হওয়ার কারণে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মাসিক ভাতা নেবারও সুযোগ নেই। বেতন ছাড়া চাকরি করতে গিয়ে তাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। সংসারে অভাব অনটন তাদের নিত্যসঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বাংলাদেশ নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশন বগুড়া জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সেকেন্দার আলী। তিনি দুপচাঁচিয়া উপজেলার তালোড়ার নওদাপাড়া দাখিল মাদ্রাসার সুপারিনটেন হিসেবে কর্মরত আছেন।

সেকেন্দার আলী বলেন, এমপিওভুক্তির আশায় ১৬টি বছর কেটে গেল বিনা বেতনে। এ মাদ্রাসাটি স্থাপিত হয় ২০০০ সালে। একাডেমিক স্বীকৃতি লাভ করে ২০০৪ সালে। বর্তমানে ৩ শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী, ১৫ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ২ জন কর্মচারী নিয়ে চলছে মাদ্রাসাটি। এ মাদ্রাসার কোনো আয় না থাকায় শিক্ষক-শিক্ষিকা ও কর্মচারীরা বিনা বেতনে চাকরি করে যাচ্ছেন। বেতন না পাওয়ায় এর প্রভাব পড়ছে তাদের সংসারে।

দীর্ঘদিন বেতন-ভাতা না পেয়ে সংসারের অভাব চলতে থাকার কারণে এ মাদ্রাসার শরীরচর্চা শিক্ষক ছানোয়ার হোসেনের সংসারে অশান্তি দেখা দেয়। গত ২ বছর ধরে তিনি আর মাদ্রাসায় হাজিরা দেন। বর্তমানে তিনি একটি ইটের ভাটায় কাজ করে সংসার চালিয়ে যাচ্ছেন। দীর্ঘদিন বিনা বেতনে চাকরি করার পর ওই মাদ্রাসার এবতেদায়ী শিক্ষক আবেদ আলী শেখের চাকরির বয়স শেষ হবার কারণে তিনি আগামী ২৮ জুন থেকে অবসর নিতে যাচ্ছেন। এ রকম শত শত শিক্ষক নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিনা বেতনে চাকরি করে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

১৫২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নন-এমপিওভুক্ত সম্পর্কে বগুড়া জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা গোপাল চন্দ্র সরকার বলেন, সাধারণত সংসদ সদস্যদের সুপারিশের ভিত্তিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এমপিওভুক্তি পেয়ে থাকে। স্থানীয় সংসদ সদস্যদের সদিচ্ছা থাকলেই এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি পাওয়া সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।

Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।