ডেস্ক,২৪ অক্টোবর ২০২২: ফেসবুক তথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগে এমন বা ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি পরিপন্থী কোনও তথ্য উপাত্ত প্রকাশ করা যাবে না। এছাড়া সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট বা আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটতে পারে এমন কোনও পোস্ট, ছবি, অডিও বা ভিডিও আপলোড কমেন্ট, লাইক, শেয়ার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
রবিবার (২৩ অক্টোবর) মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) এ সংক্রান্ত অফিস আদেশ জারি করেছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনার আলোকে সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষককে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এই নির্দেশনার পরও যদি কোনও শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী এমন কাজ করেন তাহলে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আদেশে সতর্ক করা হয়েছে।
অফিস আদেশে বলা হয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের আওতাধীন মাধ্যমিক পর্যায়ের সরকারি, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কিছু শিক্ষক-কর্মচারী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তথা ফেসবুকে তাদের ব্যক্তিগত ওয়ালে ও বিভিন্ন গ্রুপে সহকর্মী, প্রতিষ্ঠান প্রধান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এবং কর্তৃপক্ষের গৃহীত সিদ্ধান্তের বিষয়ে অশোভন, অনৈতিক, শিষ্টাচার বহির্ভূত ও উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রদান করছেন।
এতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা ১৯৭৯, সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা- ২০১৮, সরকারি চাকরি আইন- ২০১৮, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন- ২০১৮, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা- ২০২১, স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বেসরকারি মাধ্যমিক স্কুল শিক্ষকদের চাকরি শর্ত বিধিমালা ১৯৭৯ এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, বাংলাদেশ সচিবালয়, ঢাকা কর্তৃক প্রকাশিত ‘সরকারি প্রতিষ্ঠানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার নির্দেশিকা, ২০১৯ (পরিমার্জিত সংস্করণ)’ এর পরিপন্থী।
এতে আরও বলা হয়, মাধ্যমিক পর্যায়ের সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত যে সকল শিক্ষক-কর্মচারী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তথা ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপ খুলেছেন, সে সব গ্রুপের সকল গ্রুপ অ্যাডমিনকে গ্রুপে কন্টেন্ট, পোস্ট অনুমোদনের ক্ষেত্রে সরকারি আইন, বিধি প্রতিপালনের নির্দেশনা প্রদান করা হলো। এ নির্দেশনাটি মাধ্যমিক পর্যায়ের সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠান প্রধানরা নিয়মিত মনিটরিং করবেন। মাধ্যমিক পর্যায়ের সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কোনও শিক্ষক-কর্মচারী বা কোনও ব্যক্তি কারও কন্টেন্ট, পোস্টে সংক্ষুব্ধ হলে ওই কন্টেন্ট, পোস্ট আপলোডকারীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রমাণসহ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর বরাবর আবেদন করবেন।
আদেশে আরও জানানো হয়, সরকারি প্রতিষ্ঠানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি ও এর সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কর্তৃক ‘সরকারি প্রতিষ্ঠানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার নির্দেশিকা, ২০১৯ (পরিমার্জিত সংস্করণ)’ প্রণয়ন করা হয়। উল্লিখিত নির্দেশিকায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাফতরিক এবং ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট তৈরি করা এবং এতে পরিহারযোগ্য বিষয়াদির উল্লেখ রয়েছে। এরূপ নির্দেশনার আলোকে সরকারের সকল মন্ত্রণালয়/বিভাগ এবং এর আওতাধীন অধিদফতর,পরিদফতর, দফতর, সংস্থার গণকর্মচারীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে নির্ধারিত বিষয়গুলো অনুসরণ করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
৯ দফা নির্দেশনা
১. সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে সরকার বা রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয় এমন কোনও পোস্ট, ছবি, অডিও বা ভিডিও আপলোড কমেন্ট, লাইক, শেয়ার করা থেকে বিরত থাকতে হবে;
২. জাতীয় ঐক্য ও চেতনার পরিপন্থী কোনও রকম তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
৩. কোনও সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগতে পারে এমন বা ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি পরিপন্থী কোনও তথ্য উপাত্ত প্রকাশ করা যাবে না। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট বা আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটতে পারে এমন কোনও পোস্ট, ছবি, অডিও বা ভিডিও আপলোড কমেন্ট, লাইক, শেয়ার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
৪. জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা অন্য কোনও সার্ভিস/পেশাকে হেয় প্রতিপন্ন করে এমন কোনও পোস্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
৫. লিঙ্গ বৈষম্য বা এ সংক্রান্ত বিতর্কমূলক কোনও তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ করা যাবে না।
৫. জনমনে অসন্তোষ বা অপ্রীতিকর মনোভাব সৃষ্টি করতে পারে এমন কোনও বিষয় লেখা, অডিও বা ভিডিও ইত্যাদি প্রকাশ বা শেয়ার করা যাবে না।
৭. ভিত্তিহীন, অসত্য ও অশ্লীল তথ্য প্রচার হতে বিরত থাকতে হবে।
৮. অন্য কোনও রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য সম্বলিত কোনও পোস্ট, ছবি, অডিও বা ভিডিও আপলোড, কমেন্ট, লাইক, শেয়ার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
৯. সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ‘কন্টেন্ট’ ও ‘ফ্রেন্ড’ সিলেকশনে সকলকে সতর্কতা অবলম্বন এবং অপ্রয়োজনীয় ট্যাগ, রেফারেন্স বা শেয়ার করা পরিহার করতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার বা নিজ একাউন্টের ক্ষতিকারক কন্টেন্টের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মচারী ব্যক্তিগতভাবে দায়ী হবেন এবং সে জন্য প্রচলিত আইন ও বিধি-বিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।