ডেস্ক রিপোর্ট : কারো পৌষ মাস, কারো সর্বনাশÑ প্রচলিত এ প্রবাদটি এখন মিলছে পাবলিক পরীক্ষার ক্ষেত্রেও। পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করে টাকা গচ্চা দিয়ে যাচ্ছেন অভিভাবকরা, আর ব্যবসা বাড়ছে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের। কারণ তাদের উত্তরপত্র পুনর্মূল্যায়নের প্রবিধান যুগোপযোগী না হওয়ায় প্রত্যাশা থেকে বঞ্চিত হয় শিক্ষার্থীরা। চ্যালেঞ্জ করেও মেলে না কাক্সিক্ষত ফল।
ফল পুনর্মূল্যায়ন কী, এ সম্পর্কে ধারণাই নেই শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। শুধু জানা আছে, নিজের ফল নিয়ে শিক্ষার্থীদের অসন্তুষ্টি থাকলে তা দূর করতে ফল প্রকাশের পরদিন থেকে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত খাতা পুনর্মূল্যায়নের সুযোগ দেওয়া হয়। প্রতিপত্রের জন্য তাদের গুনতে হয় ১৫০ টাকা করে। অথচ আবেদনের পর বোর্ড কী করে তাদের ফল মূল্যায়ন করল তা শিক্ষার্থীরা জানলই না।
এ প্রসঙ্গে শিক্ষাবিদ ড. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো পরীক্ষার ফলকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আবেদন করা হলে দ্বিতীয় ও তৃতীয় পরীক্ষকের কাছে উত্তরপত্র মূল্যায়ন হয়ে থাকে। অথচ এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষাসহ অন্য পাবলিক পরীক্ষার ক্ষেত্রে নিয়মটা পুরোপুরি উল্টো। তাই এতে শিক্ষার্থীরা প্রত্যাশিত মূল্যায়ন থেকে বঞ্চিত হয়। কারণ বোর্ড উত্তরপত্র পুনর্মূল্যায়ন করে না। তারা মূলত উত্তরপত্রে সব প্রশ্নের সঠিকভাবে নম্বর দেওয়া হয়েছে কিনা, প্রাপ্ত নম্বর গণনা ঠিক রয়েছে কিনা, প্রাপ্ত নম্বর ওএমআর শিটে তুলতে ভুল হয়েছে কিনা কিংবা প্রাপ্ত নম্বর অনুযায়ী ওএমআর শিটে বৃত্ত ভরাট ঠিক আছে কিনাÑ এসব দেখে।
দশ বছরের মধ্যে এইচএসসি ও সমমানে পাসের হার এবার সর্বনিম্ন। এ বছর পাসের হার ৬৮ দশমিক ৯১ শতাংশ। পাস করেছেন ৮ লাখ ১ হাজার ৭১১ পরীক্ষার্থী। আর মোট জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৩৭ হাজার ৯৬৯ জন। এদের মধ্যে কাক্সিক্ষত ফল না পেয়ে পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করেছেন ১ লাখ ৩৯ হাজার ৫৯৬ শিক্ষার্থী। প্রায় তিন লাখ পত্রের বিপরীতে তারা বোর্ডগুলোকে দিয়েছে সাড়ে চার কোটি টাকা।
এদিকে ঢাকা বোর্ডে আবেদনকারী এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক শামসুন্নাহার বলেন, খাতা পুনর্মূল্যায়ন মানে উত্তরপত্র নতুন করে দেখা। কিন্তু আমি জানতে পেরেছি, বোর্ড থেকে যা করা হয় তা হলোÑ নম্বর গণনা কিংবা কোথাও নম্বর দিতে ভুলভ্রান্তি হয়েছে কিনা সেসব বিষয় মিলিয়ে দেখা। বিষয়টি জেনে উত্তরপত্র মূল্যায়ন ফি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। তার মতো অজস্র অভিভাবকেরও ধারণা, তাদের আবেদনের পর পুনর্মূল্যায়ন করা হয় উত্তরপত্র।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ড পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক উপকমিটির আহ্বায়ক তপন কুমার বলেনÑ এখন পত্র এবং রচনামূলক, নৈর্ব্যত্তিক আলাদা আলাদা নম্বর প্রকাশ করা হয়। এতে দেখা যায়, অনেক শিক্ষার্থী দুই এক নম্বরের জন্য কাক্সিক্ষত গ্রেড পাননি। এসব শিক্ষার্থীই ফল পুনর্নিরীক্ষার আবেদন করেছেন। কোনো একটি বা দুইটি বিষয়ে জিপিএ-৫ পাননি, সে বিষয়গুলোয় চ্যালেঞ্জ করছেন অনেক শিক্ষার্থী। আর উচ্চমাধ্যমিকে এ সংখ্যা আরও বেশি হয়। কারণ এ ফলের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার বিষয়টি যুক্ত।
শিক্ষা বোর্ডগুলোর তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা বোর্ডে ৪৭ হাজার ৭০০ শিক্ষার্থী ১ লাখ ৩৩ হাজার ২০০ পত্রের ফল পরিবর্তনের আবেদন করেছেন। সবচেয়ে বেশি আবেদন পড়েছে ইংরেজিতে। এ বিষয়ের দুটি পত্রের আবেদন পড়েছে ১২ হাজার ৩২৫টি। চট্টগ্রাম বোর্ডে ১৪ হাজার ৯৪৯ পরীক্ষার্থী ফল পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করেছেন। এ বোর্ডেও ইংরেজি প্রথম পত্রে ৬ হাজার ৪৮৮টি আবেদন পড়েছে। সিলেট বোর্ডে ৬ হাজার ১২৬ পরীক্ষার্থী ১৭ হাজার ৬৯৪টি পত্রের ফল পরিবর্তনের আবেদন করেছেন। বরিশাল বোর্ডে ৩৬ হাজার ৪১৩টি পত্রের জন্য আবেদন করেছেন ১২ হাজার ৩১৪ আবেদনকারী। রাজশাহীতে পুনর্নিরীক্ষণের জন্য ১২ হাজার ২৭০ শিক্ষার্থী ৩১ হাজার ২৪৫টি পত্রের আবেদন করেছেন। যশোর বোর্ডে ১১ হাজার ২৩১ জন আবেদন করেছেন ২৩ হজার ৪৬৬টি পত্রের নম্বর বদলের জন্য। দিনাজপুর বোর্ডে পুনর্নিরীক্ষণের জন্য ১০ হাজার ৪৬ পরিক্ষার্থী ২১ হাজার ২৬টি পত্রের বিপরীতে আবেদন করেছেন। এবার সবচেয়ে খারাপ ফল করা কুমিল্লা বোর্ডেও আবেদনের হিড়িক পড়েছে। পুনর্নিরীক্ষণের জন্য এই বোর্ডে আবেদন করেছেন ১২ হাজার ৭০ শিক্ষার্থী। তারা ৩৩ হাজার ৭৩৩টি পত্রের ফল পুনর্নিরীক্ষার আবেদন করেছেন। এই বোর্ডে ইংরেজিতে ফল খারাপের জন্য সার্বিক ফলাফলেও প্রভাব পড়ে। এ বিষয়ে আবেদন পড়েছে ১২ হাজার ৯৭০টি। আইসিটিতে আবেদন পড়েছে ২৮ হাজার ১৫টি। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে ১৪ হাজার ৯১৭ শিক্ষার্থী ফল পরিবর্তনের জন্য আবেদন করেছেন। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে আবেদন করেছেন ১০ হাজার ২৪৩ জন। দৈনিক আমাদের সময়