ডেস্ক রিপোর্ট:
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগে বৈষম্যমূলক কোটা বাতিলসহ ৫ দফা দাবি জানিয়েছে ‘অধিকার বঞ্চিত বেকার সমাজ’ নামে একটি সংগঠন। আজ বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) ‘কোটা বিষয়ক নাগরিক মত’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব দাবি জানান সংগঠনের নেতারা। জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
আরো পড়ুন: ৬৮ হাজার শিক্ষক নিয়োগের আবেদন শুরু কাল
তাদের দাবিগুলো হলো- বৈষম্যমূলক এই ফলাফল বাতিল করে এক ও অভিন্ন কাট মার্কে পুনরায় ফলাফল ঘোষণা করা হোক; কোটা বাতিলের সরকারি পরিপত্র মেনে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা; শিক্ষক নিয়োগে বিদ্যমান নিয়োগ মেধার ভিত্তিতে দ্রুত সম্পন্ন করে নতুন কোটামুক্ত পরবর্তী নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দ্রুত প্রকাশ; প্রতিবন্ধীদের জন্য কোটা সংরক্ষণ করে পোষ্য কোটাসহ সব কোটা সম্পূর্ণ বিলোপ এবং নিয়োগ পরীক্ষার মেধা তালিকার পাশাপাশি প্রাপ্ত নম্বর প্রকাশ করতে হবে।
সভায় তারা বলেন, প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগে এই মুহূর্তে ৬০ শতাংশ নারী কোটা, ২০ শতাংশ পারিবারিক বা পোষ্য কোটা, ২০ শতাংশ পুরুষ কোটা রয়েছে, যেখানে ২০ শতাংশ বিজ্ঞান কোটাকে সামগ্রিকভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে। সংবিধানে উল্লেখিত কর্মের সমতার অধিকারের বিষয়টি উপেক্ষা এবং কোটা বাতিলের পরিপত্র অবজ্ঞা করে এমন কোটা প্রয়োগ করা হয়েছে। যেখানে প্রতিবন্ধী ও অনগ্রসর শ্রেণিকে কোটা বঞ্চিত করে, অগ্রসর শ্রেণিকে কোটা দেওয়া হয়েছে।
তারা আরও বলেন, রেলওয়েতে চাকরির ৮৫ শতাংশ (রেলের স্থায়ী পদে অন্তত ২০ বছর চাকরি করেছেন এমন ব্যক্তির সন্তান কোটা ৪০ শতাংশ, প্রতিবন্ধী ও এতিম ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ২.৫ শতাংশ, আনসার ও ভিডিপি ৫ শতাংশ, বীর মুক্তিযোদ্ধা (বীর মুক্তিযোদ্ধার ছেলে-মেয়ে বা নাতি-নাতনি) ১৫ শতাংশ, জেলা ৫ শতাংশ ও নারী কোটায় বরাদ্দ থাকছে ৭.৫ শতাংশ) কোটায় নিয়োগ পায়, বাকি ১৫ শতাংশ নিয়োগ পায় মেধাবী কোটায়।
তারা বলেন, এসব কোটার বিরুদ্ধে আদালতে ২০২১ সালের মার্চ মাসে রিট পিটিশন করা হয। এর দীর্ঘ ৯ মাস পর ১৩ ডিসেম্বর প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগে কোটা বাতিলে রুল জারি করেন উচ্চ আদালত। আদালতের বিড়ম্বনা ও গাফিলতির সুযোগে কোটা বহাল রেখেই ফলাফল ঘোষণা করা হয়। এমন পরিস্থিতিতে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিগত সময়ে ৮টি মানববন্ধন করে এর প্রতিবাদ করি। এই মুহূর্তে ৫টি দাবিকে সামনে রেখে রাষ্ট্রকে বুঝানোর চেষ্টা করছি আমাদের কতটা ন্যায়বিচার বঞ্চিত করা হয়েছে, আমাদের দাবিগুলো কতটা যৌক্তিক।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেন, আমাদের স্বাধীনতার মূলমন্ত্র দেশ স্বাধীনের পর পরই ডাকাতি হয়ে গেছে। এরপরে আমরা সব সময় একটা গোষ্ঠীর স্বার্থ পূরণ করে আসছি। এখন আমাদের রাষ্ট্র চালায় ওইসব গোষ্ঠী। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে পাবলিক সেক্টরে কোনো ধরনের কোটা পদ্ধতি চালু নেই। আমাদের কেনো পাবলিক সেক্টরে কোটা পদ্ধতি চালু থাকলেও ৫% থেকে ১০% হতে পারে। সেটা কীভাবে ৬০% হয়।
তিনি আরও বলেন, কোটা দিয়ে স্বার্থগোষ্ঠী তৈরির কারণে এক ধরনের বিচ্ছিন্ন সমাজ তৈরি হয়ে গেছে। বেড়ে যাচ্ছে বেকারত্বের সংখ্যা। যে কারণে আজকে সন্ত্রাস থেকে শুরু করে সব ধরনের অপকর্মের সঙ্গে জড়িত হচ্ছে ছাত্ররা।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক নাছির উদ্দিন বলেন, শিক্ষকরা হচ্ছেন জাতির মেরুদণ্ড । সেই মেরুদণ্ড নিয়োগে কোটা কেন থাকবে? আমাদের বিভিন্ন জায়গায় কোটা রয়েছে। রাষ্ট্রীয় একটা সুবিধাভোগিদের সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য কোটা ব্যবস্থা চালু রয়েছে। ফলে একটা বড় অংশ ঝরে পড়ছে। আমরা যেখানে বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করছি, বৈষম্যহীন সমাজ তৈরির চেষ্টা করছি, সেখানে কোটা পদ্ধতি চালু রেখে বৈষম্য তৈরি করা হচ্ছে। দেশে দিনদিন শিক্ষিত বেকারত্ব বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু তা দূর করতে সরকার কোনো ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে না। আমরা বলি আমাদের দক্ষ লোক নেই। একজন শিক্ষার্থী দক্ষ হয়ে উঠে তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে। আজকে আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর বর্তমান অবস্থা এতোটাই খারাপ যে, এখান থেকে দক্ষ হয়ে কেউ বের হচ্ছে না। আমি বলতে চাই, দক্ষ লোক না খুঁজে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ঠিক করুন যাতে তারা দক্ষ শিক্ষার্থী তৈরি করতে পারে। আমরা চাই আমাদের ছেলেমেয়েরা তাদের সব অধিকার ফিরে পাক। তারা যাতে বঞ্চিত না হয়।
অধিকার বঞ্চিত বেকার সমাজের আহ্বায়ক তারেক রহমানের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন নাগরিক পরিষদের আহ্বায়ক মো. শামসুদ্দিন, বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদের মুখপাত্র ইমতিয়াজ হোসেন প্রমুখ।