প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে বাড়ছে জালিয়াতি

ডেস্ক: নিয়োগ পরীক্ষা ছাড়াই সরকারি প্রাথমিক স্কুলে নিয়োগপত্র পাওয়া যাচ্ছে। অর্থের বিনিময়ে হরহামেশাই নিয়োগপত্র কেনাবেচা হচ্ছে। সেই নিয়োগপত্রে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিপিই) উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের সাক্ষর রয়েছে। টাকার বিনিময়ে বিক্রি হচ্ছে বদলী ও পদায়নের নির্দেশপত্র। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন জেলার সরকারি স্কুলে ভুয়া নিয়োগপত্র ধরা পড়েছে। এরপরই নড়েচড়ে বসেছেন অধিদপ্তরের কর্তাব্যক্তিরা। একটি প্রতারক চক্র প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের যোগসাজোশে এসব জাল-জালিয়াতি করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়া হয়নি। তবুও মামুনুর রশিদ নামে এক ব্যক্তি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ পেয়েছেন! তাকে বাগমারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পদায়ন করতে রাজশাহী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই) থেকে চিঠি পাঠানো হয়। চিঠিটি পেয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ডিপিইও) চমকে ওঠেন। তিনি বিষয়টি ডিপিই মহাপরিচালককে লিখিতভাবে জানান। চিঠিটি ডিপিইতে আসলেই সব গোমর ফাঁস হয়ে যায়। ডিপিই কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর জাল করে নিয়োগপত্রটি তৈরি করা হয়। একইভাবে নওগাঁ ও চাঁপাইনববাগঞ্জ জেলায় আরও আট জনকে ভুয়া শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। জানতে চাইলে ডিপিইর মহাপরিচালক আবু হেনা মো. মোস্তফা কামাল বলেন, ডিপিইতে জাল-জালিয়াতি বেড়ে গেছে। অনেক কর্মকর্তার স্বাক্ষর জালিয়াতি করে নিয়োগপত্র ও বদলির নির্দেশ তৈরি করা হচ্ছে। এসব কার্যক্রম আমাদের জন্য উদ্বেগজনক। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি তদন্ত করছি। থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। পুলিশ বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। ডিপিইর কেউ জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জানা গেছে, ডিপিইর পলিসি ও অপারেশন শাখার সহকারী পরিচালক মির্জা আব্দুল্লাহ ও গবেষণা কর্মকর্তা তানভির রহমানের স্বাক্ষরে রাজশাহী প্রাথমিক জেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে একটি চিঠি পাঠানো হয়। চিঠিতে চারজনকে নিয়োগ দিতে বলা হয়। বিষয়টি সন্দেহ হওয়ায় ডিপিও মহাপরিচালককে জানান। বিষয়টি জানাজানি হলে ডিপিইতে তোলপাড় শুরু হয়। বিষয়টি তদন্ত করতে মহাপরিচালক রাজশাহীর ডিপিইওকে নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়াও একটি সতর্কবার্তা জারি করেছে অধিদপ্তর। জারি করা সতর্ক বার্তায় বলা হয়েছে, একশ্রেণির প্রতারক চক্র প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর স্ক্যান করে জালিয়াতির মাধ্যমে চাকরি দেওয়ার নামে ভুয়া নিয়োগপত্র তৈরি করে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে অর্থ নেয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। এতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ভাবমূর্তি দারুণভাবে ক্ষুণœ হচ্ছে। প্রতারক চক্রের কাছ থেকে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক এবং তাৎক্ষণিক আইনিব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হলো। স্বাক্ষরের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিপিইর পলিসি ও অপারেশন শাখার সহকারী পরিচালক মির্জা আব্দুল্লাহ আমার সংবাদকে বলেন, আমার স্বাক্ষর কম্পিউটারে স্ক্যান করে চিঠি তৈরি করা হয়েছে। যেকোনো ব্যক্তির স্বাক্ষর এভাবে স্ক্যান করা যায়। প্রাথমিক স্কুলে নিয়োগ দেয় ডিপিও অফিস। আমি নিয়োগের সঙ্গে জড়িত না তার পরও আমার স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে। আরও দুই জন কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে। এটি ফৌজদারি অপরাধ। রাজশাহী জেলার সহকারী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, গত গত ১৫ অক্টোবর আমার কাছে একটি নিয়োগপত্র আসে। সেখানে চারজন ব্যক্তিকে স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক স্কুলে তাদের যোগদান করাতে নির্দেশ দেয়া হয়। বিষয়টি আমার সন্দেহ হয়। এরপর ডিপিইর স্যারদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সেটি ভুয়া প্রমাণিত হয়। এরপর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান আমাকে বিষটি তদন্ত করার নির্দেশ দেয়। ডিপিইর কর্মকর্তারা জানান, একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে ভুয়া নিয়োগপত্র ও বদলির আদেশ তৈরি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। এই চক্রের সঙ্গে ডিপিইর একাধিক কর্মকর্তা জড়িত রয়েছে। সম্প্রতি প্রাইমারি এডুকেশনাল অর্গানাইজেশন লি. (পিইওএল) ডিপিইর কর্মকর্তাদের নাম ও ঠিকানা ব্যবহার করে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বিকাশ একাউন্টের মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। শুধু তাই নয়; প্রতিষ্ঠানটি অধিদপ্তরের ঠিকানা ব্যবহার করে সরকারি প্রাথমিক স্কুলে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়েছে। বিষয়টি জানতে পেরে গত ২৯ অক্টোবর মিরপুর মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। এ ঘটনায় গত ৩০ অক্টোবর সতর্কমূলক বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে ডিপিই। উল্লেখ, গত বছরের ১৩ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জের আড়াই হাজার উপজেলার ৩৮নং পাঁচরুখী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মাহবুবা আক্তার ভুয়া বদলির আদেশ করান। সেই আদেশে তাকে উত্তর যাত্রাবাড়ীর ব্রাক্ষণচিরণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়। ভুয়া বদলির আদেশ নিয়ে জেলা শিক্ষা অফিসে যোগ দিতে যান। ডিপিইওর সন্দেহ হলে তিনি অধিদপ্তরকে জানালে বিষয়টি ধরা পড়ে। গত বছর মাহবুবা আক্তারের মতো আরও কয়েকজন শিক্ষক একই প্রতারণা করে ঢাকা মহানগর ও সিটি কর্পোরেশন এলাকার স্কুলের যোগ দিতে গিয়ে ধরা পড়েন।

Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।