নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাংলাদেশে মানসম্পন্ন প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে শিক্ষকদের আরও বেশি দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান।
বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এলজিইডি ভবনে এডুকেশন ওয়াচের ‘প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা কোন পথে’- শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এ আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, “শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড এবং প্রাথমিক শিক্ষা হল সেই মেরুদণ্ডের ভিত্তিমূল। আমাদের শিক্ষকদের যে যোগ্যতা আছে, তারা যদি আন্তরিক হন তাহলে প্রাথমিক শিক্ষা সেক্টরে ৮০ ভাগ সমস্যা দূর করা সম্ভব।”
বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে ‘কোয়ালিটি এডুকেশন’ নিশ্চিত করতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
মন্ত্রীর বক্তব্যের আগে প্রতিবেদনে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার ক্ষেত্রে বিদ্যমান সমস্যাগুলো নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়।
এডুকেশন ওয়াচের গবেষণা প্রতিবেদনে পাঁচ ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে প্রাথমিক শিক্ষার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এগুলো হল- সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নতুন জাতীয়কৃত প্রাথমিক বিদ্যালয়, কিন্ডারগার্টেন, উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক বিদ্যালয় ও এবতেদায়ী মাদ্রাসা।
দেশের ১৫০টি উপজেলার গ্রামীণ এলাকা থেকে ৩২৬টি এবং শহর এলাকার ২৫২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেছে নিয়ে এই গবেষণা করা হয় বলে এডুকেশন ওয়াচের মুখ্য গবেষক সমীর রঞ্জন নাথ জানান।
প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা উপর আলোকপাত করে করা এই গবেষণায় ছয় ধরনের সমস্যা চিহ্নিত করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
এগুলো হল- শিক্ষার্থীদের মুখস্ত করার প্রবণতা বৃদ্ধি, প্রাইভেট পড়া ও গাইড বইয়ের উপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীলতা, পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন ও অনৈতিক পথে যেতে শিক্ষার্থীদের প্ররোচনা, প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক হলেও প্রাইভেট পড়া, কোচিং, গাইড বই, সাজেশন্স, নোট ইত্যাদি খাতে ব্যয় বৃদ্ধি এবং শহর ও গ্রামের শিক্ষার্থীদের সুযোগের বৈষম্য।
অনুষ্ঠানে ‘ক্যাম্পেইন ফর পপুলার এডুকেশনের’ নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, “প্রতিবছর প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় পাশের হার বাড়ছে, কিন্তু একটি শিক্ষিত মেধাবী প্রজন্ম গড়ে তোলার জন্য এটাই শেষ কথা নয়।”
পাশের হার বাড়াতে গিয়ে শিশুদের ‘শৈশব কেড়ে নিলে’ তা অত্যন্ত দুঃখজনক হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও অর্থনীতিবিদ কাজী খলীকুজ্জমান বলেন, বাংলাদেশে শিক্ষা নীতি আছে ঠিকই কিন্তু আইন নেই।
“শিক্ষানীতির পরিপন্থি কাজগুলো যখন হয়, তখন এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া অনেক সময় সম্ভব হয় না। সারাদেশে অবাধে কোচিং বাণিজ্য, গাইডবই বাণিজ্য চলছে এবং এর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না।”
‘শিক্ষকরা নিজেদের সুযোগ সুবিধা বাড়ানোর বিষয়ে যতটা সচেতন থাকেন, স্কুলের শিক্ষার মান বাড়ানো নিয়ে ততটা নন’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী বলেন, “প্রাথমিক শিক্ষকদের দাবি-দাওয়াগুলো আমি জানি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও এ ব্যাপারে অবগত আছেন। এ বিষয়গুলো মীমাংসার জন্য সরকার আন্তরিক।”
‘যেহেতু সমস্যা একদিনের নয়, তাই একটু সময় দিতে হবে’ মন্তব্য করে কাজের প্রতি আন্তরিকতা বাড়াতে শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানান মন্ত্রী।