শিশির দাস:১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯:
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদা পেলেও তাঁরা বেতন পাচ্ছেন ১১তম গ্রেডে। অথচ একই পদমর্যাদার অন্য সরকারি কর্মকর্তারা বেতন পান ১০ম গ্রেডে। আর সহকারী শিক্ষকরাও দীর্ঘদিন ধরে প্রধান শিক্ষকদের এক ধাপ নিচে বেতন গ্রেড নির্ধারণের দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলেন। বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে আওয়ামী লীগ তাদের এবারের নির্বাচনী ইশতেহারেও শিক্ষকদের বেতনবৈষম্য নিরসন করা হবে বলে অঙ্গীকার করেছিল। কিন্তু প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বেতন গ্রেড উন্নীতকরণের প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠালে তাতে অসম্মতি জানানো হয়েছে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পৌনে চার লাখ শিক্ষক। তবে বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য আবারও নানা ধরনের যৌক্তিকতা তুলে ধরে অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রাথমিকের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকরা এখন বেতন পাচ্ছেন ১১তম গ্রেডে। আর প্রশিক্ষণবিহীন প্রধান শিক্ষকরা বেতন পাচ্ছেন ১২তম গ্রেডে। তবে মন্ত্রণালয় শুধু প্রধান শিক্ষকদের বেতন ১০তম গ্রেডে উন্নীত করার প্রস্তাব করেছে। অন্যদিকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকরা এখন বেতন পাচ্ছেন ১৪তম গ্রেডে। আর প্রশিক্ষণবিহীন সহকারী শিক্ষকরা পাচ্ছেন ১৫তম গ্রেডে। মন্ত্রণালয় তাঁদের জন্য একটি মাত্র গ্রেড ১২তম দেওয়ার প্রস্তাব করেছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গ্রেডবৈষম্য নিরসন ও বেতন বৃদ্ধি প্রাথমিক শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের দাবি। এ বৈষম্য দূর করতে একটি প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিলাম। সেটি নাকচ করে দেওয়া হয়েছে। আমরা আবারও প্রস্তাব পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আগামী ২০ সেপ্টেম্বর বেতনবৈষম্য নিরসন নিয়ে আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করব। শিক্ষকদের এ ব্যাপারে ধৈর্য ধরার অনুরোধ জানাচ্ছি।’
মন্ত্রণালয় যুক্তি তুলে ধরে বলেছে, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে প্রাথমিক শিক্ষকদের ভূমিকা অনেক। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান অন্য যেকোনো পেশা থেকে আলাদা ও মর্যাদাকর। শিশুদের মনন ও মেধা বিকাশের মাধ্যমে সুপ্ত প্রতিভার উন্মেষ ঘটাতে স্নাতক ডিগ্রিধারী এবং উচ্চতর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ অপরিহার্য। সেই সঙ্গে উচ্চতর শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন সহকারী শিক্ষকদের উচ্চতর বেতন স্কেল ও পদমর্যাদা নিশ্চিত করাও জরুরি। প্রধান শিক্ষকরা যেহেতু দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদাপ্রাপ্ত, তাই তাঁদের বেতন অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তার মতো ১০ম গ্রেডে হওয়া বাঞ্ছনীয়।
বর্তমানে ডিপ্লোমা প্রকৌশলী ও ডিপ্লোমা নার্সদের দশম গ্রেডে চাকরিতে নিয়োগ দিচ্ছে সরকার। কিন্তু স্নাতক ডিগ্রিধারী ১৮ মাসের ডিপ্লোমা ইন এডুকেশন শেষ করে একজন সহকারী শিক্ষক ১৪তম গ্রেডে বেতন পান। তাই স্নাতক ডিগ্রিধারী ও উচ্চতর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকদের বেতন স্কেল (গ্রেড) ন্যায্যতার ভিত্তিতে প্রস্তাবিত ১২তম গ্রেডে নির্ধারণ করা যৌক্তিক। এতে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের মধ্যে বিরাজমান দীর্ঘদিনের বৈষম্যের অবসান ঘটবে এবং শিক্ষকদের হতাশা অনেকাংশে দূর হবে। ফলে শিখন-শেখানো কার্যক্রম বেগবান হবে এবং শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করা সহজ হবে।
বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতির মুখপাত্র এস এম ছায়িদ উল্লা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পৃথিবীর সব দেশেই শিক্ষকদের স্থান সবার ওপরে। অথচ আমাদের দেশের প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকদের মর্যাদা দ্বিতীয় শ্রেণির। আবার বেতনও এক গ্রেড নিচে। অথচ এখন যাঁরা শিক্ষকতায় আসছেন তাঁরা সর্বোচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত। সরকার যদি শিক্ষকদের এতটুকু মর্যাদা না দেয় তাহলে হয়তো ভবিষ্যতে মেধাবীরা আর প্রাথমিক শিক্ষায় আসবে না।’
বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে শিক্ষকদের গ্রেডবৈষম্য নিরসনের অঙ্গীকার করেছে। তাই আমরা আমাদের আন্দোলন স্থগিত করেছিলাম। আর আমাদের দাবি, প্রধান শিক্ষকদের এক ধাপ নিচের গ্রেডে বেতন নিশ্চিত করা। সে ক্ষেত্রে প্রধান শিক্ষকরা যদি দশম গ্রেড পান, আমাদের দাবি ১১তম গ্রেড। যদি আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী দাবি মেনে না নেয় তাহলে আমরা আবারও কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব।’
বর্তমানে সারা দেশে ৬৫ হাজার ৯০২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এগুলোতে তিন লাখ ২৫ হাজার সহকারী শিক্ষক ও ৪২ হাজার প্রধান শিক্ষক রয়েছেন।
সুত্র: কালের কন্ঠ