প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষকদের আবাসন ব্যবস্থা হচ্ছে

ডেস্ক,২৯ এপ্রিল: সরকার অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা, বিনামূল্যে বই বিতরণ, দুপুরে খাবারের ব্যবস্থা, উপবৃত্তিসহ নানা কর্মসূচি চালুর পর এবার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষকদের আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রথম পর্যায়ে দুর্গম এলাকার শিক্ষকদের জন্য আবাসন সুবিধা দিতে সেসব এলাকায় আবাসিক ভবন নির্মাণ করা হবে। পর্যায়ক্রমে এ স্তরের সব শিক্ষকদের আবাসন সুবিধা গড়ে তোলা হবে বলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নেত্রকোনা জেলার মদন উপজেলার মাঘান ইউনিয়নের তলার হাওর ঘেঁষে অবস্থিত মান্দারুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। শতাধিক শিক্ষার্থীকে মাত্র দুই জন শিক্ষক পাঠদান করছেন। একই হাওরের অপরপ্রান্তে ফতেপুর ইউনিয়নের রুদ্ধশ্রী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও দুই জন শিক্ষক কর্মরত।

অথচ এ দুটি স্কুলেই পাঁচজন করে শিক্ষক কর্মরত থাকার কথা। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, শুধু শিক্ষক সংকটই নয়, দুর্গম যাতায়াতের কারণে হাওর, পাহাড় ও চরাঞ্চলে কর্মরত শিক্ষকরাও নিয়মিত স্কুলে যান না। কেউ কেউ স্থানীয় স্কুল-কলেজ পড়ুয়া বা এলাকার স্বল্প শিক্ষিত যুবকদের মাসিক চুক্তিতে ‘বদলি শিক্ষক’ দিয়ে স্কুল চালান।

সরকার অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা, বিনামূল্যে বই বিতরণ, দুপুরে খাবারের ব্যবস্থা, উপবৃত্তিসহ নানা কর্মসূচি চালুর পরেও মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা অর্জিত হচ্ছে না। শিক্ষক অনুপস্থিতির কারণে এসব এলাকায় শিক্ষার্থী ঝরে পড়া কমছে না। এ সংকট কাটিয়ে উঠতে দুর্গম এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের আবাসিক ব্যবস্থা চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

বিষয়টি স্বীকার করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন বলেন, ‘আবাসিক সংকট, যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ নানা কারণে দুর্গম (হাওর, পাহাড় ও চরাঞ্চল) এলাকার স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ দিলেও তারা থাকেন না। নিয়মিত স্কুলে যান না। এসব এলাকার শিক্ষার মান উন্নয়নে কিছু সিদ্বান্ত নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে-শিক্ষকদের আবাসন ব্যবস্থা, শিক্ষক নিয়োগে ওই এলাকার মানুষদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে। পিইডিপি-৪ (চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি) এর মাধ্যমে দ্রুত এ সিদ্বান্ত বাস্তবায়ন করা হবে।’

খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত পাহাড়ি ঢলে হাওর অঞ্চল তালিয়ে যায়। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বেশিরভাগ স্কুল পানিতে ডুবে যায়। বন্ধ হয়ে যায় সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। বর্ষা মৌসুমে ‘দ্বীপগ্রামে’র স্কুলে যেতে চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হয় শিক্ষকদের। বিশেষ করে ‘আফালের’ কারণে প্রায় বছরই হাওরে নৌকা ডুবিতে শিক্ষার্থীদের প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে।

২০১৭ সালে স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার বাংলাবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী নৌকা ডুবে মারা যায়। এভাবে প্রতি বছরই বর্ষা মৌসুমে দুর্ঘটনার শিকার হয় হাওরের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। আবার নভেম্বর মাস থেকে মে পর্যন্ত হাওরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পায় হেঁটে যাতায়াত করতে হয়। যে কারণে হাওরের দুর্গম এলাকার প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকদের অনুপস্থিতি বেড়ে যায়। পাহাড় ও চরাঞ্চলেও দুর্গম যোগাযোগের কারণে একই অবস্থা বিরাজ করছে। দুর্গম অঞ্চলে কর্মরত শিক্ষকদের প্রায় ৭০ ভাগ নারী শিক্ষক হওয়ায় এ সংকট তীব্র।

আরো পড়ুন  SLIP ফান্ডের অর্থ দিয়ে বিদ্যালয়ে বায়োমেট্রিক হাজিরা কেনার নির্দেশ

মদন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা স্বপন কুমার সূত্র ধর বলেন, হাওর এলাকায় বর্ষা মৌসুমে নৌকায় সর্বত্র যাতায়াত করা গেলেও শুকনা মৌসুমে পায়ে হেঁটে ছাড়া যাতায়াত করা কঠিন। তখন স্কুল মনিটরিং করা যায় না। এই সুযোগ নিয়ে শিক্ষকরা সঠিক সময়ে নিয়মিত স্কুলে আসেন না।

তিনি বলেন, হাওর এলাকায় শিক্ষক সংকটের পাশাপাশি কর্মকর্তা-কর্মচারী সংকট রয়েছে। আমার উপজেলায় তিন জন উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার পদ থাকলেও কর্মরত আছেন একজন। অফিসের অন্যান্য পাঁচটি পদের মধ্যে একজন কর্মরত। এই জনবল দিয়ে উপজেলার ৯৪টি স্কুল মনিটরিং করা কঠিন। দুর্গম এলাকায় শিক্ষক যেতে চান না, আমরা প্রতি মাসে শিক্ষক সংকটের কাথা ঊর্ধ্বতন অফিসে জানাচ্ছি। শিক্ষক নিয়োগ দিলেও তারা থাকেন না।’

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার শিক্ষকরা জানিয়েছেন, জেলা শহরে যেতে যে খরচ হয়, ২-৩ কিলিমিটার দূরের হাওরের স্কুলে যেতে তার চেয়ে বেশি খরচ হয়। তাছাড়া সময়মতো নৌকাও মেলে না। রাস্তা না থাকায় খেতের আইল পেরিয়ে দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে স্কুলে যেতে হয়। যাতায়াত সংকটের কারণে সময়মতো স্কুলে পৌঁছানো যায় না।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মো. গিয়াস উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘হাওর এলাকায় ব্র্যাকের ভাসমান স্কুলগুলো জনপ্রিয়তা পেয়েছে। আমরা প্রাথমিক শিক্ষা এনজিওর হাতে তুলে দিতে পারি না। যে কারণে দুর্গম এলাকার স্কুলে আবাসিক ব্যবস্থা চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পরীক্ষামলূক হাওর এলাকা চালু করা হবে। নিড বেসিস পর্যায়ক্রমে অন্যান্য দুর্গম এলাকায় চালু করা হবে।

Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।