চুয়াডাঙ্গায় ১৮ হাজার ৬৬১টি
নিজস্ব প্রতিবেদক |
চলতি বছর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘সহকারী শিক্ষক’ নিয়োগ পরীক্ষার জন্য অনলাইনে আবেদন করেছেন ২৪ লাখ ১ হাজার ৫৯৭ জন প্রার্থী। গত ১ থেকে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত এই আবেদন কার্যক্রম চলে। এই নিয়োগ পরীক্ষাবাবদ প্রতিজনের আবেদনের জন্য ১৬৮ টাকা ফি আদায় করা হয়। এই হিসাবে ২৪ লাখ ১ হাজার ৫৯৭ জন প্রার্থীর আবেদনে ৪০ কোটি ৩৪ লাখ ৬১ হাজার ৫৭৬ টাকা জমা হয়েছে সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ফান্ডে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের (ডিপিই) মহাপরিচালক আবু হেনা মোস্তাফা কামাল বলেন, সহকারী শিক্ষক নিয়োগে এবার রেকর্ডসংখ্যাক আবেদন জমা হয়েছে। এ বাবদ যে অর্থ জমা হয়েছে তা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ফান্ডে রয়েছে।
তিনি বলেন, নিয়োগ পরীক্ষা ও ফলাফল প্রকাশ করতে বিপুল পরিমাণে ব্যয় হয়ে থাকে। এ জন্য সারাদেশে বিপুল পরিমাণে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োজিত রাখতে হয়। সব মিলে অধিকাংশ অর্থ ব্যয় হয়ে যায়। তবে এবার রেকর্ডসংখ্যক আবেদন আসায় সরকারি রাজস্ব আয় কিছু হলেও হতে পারে।
জানা গেছে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার জন্য টেলিটক মোবাইল ফোনে এসএমএমের মধ্যমে ফি জমা নেয়া হয়। সে অনুযায়ী, টেলিটকে দুটি এসএমএস পাঠানোবাবদ ৪ টাকা কর্তন করা হয়। বাকি টাকা নিয়োগ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের ফান্ডে জমা দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেডের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার শাকিল আহমেদ বলেন, বেশি আবেদন জমা হলেই টেলিটক কোম্পানির খুব বেশি লাভ হয় না। পুরো অর্থই নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানে চলে যায়। তাই আবেদনকারীর কাছে দুটি এসএমএস বাবদ ৪ টাকা কর্তন করা হলেও আবেদনকারীকে একাধিক এসএমএস পাঠানো হয়। এ ছাড়া নিয়োগ সংক্রান্ত সব আপডেট এসএমএসের মাধ্যমে জানাতে হয়।
তিনি বলেন, প্রতি আবেদনে ৪ টাকা নিলেও টেলিটক কোম্পানির আয় হয়ে থাকে মাত্র দুই শতাংশের বেশি। আবেদন প্রতি ৪ টাকা কেটে বাকি টাকা নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানকে বুঝিয়ে দিতে হয়।
প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার জন্য একজন আবেদনকারী জান্নাত মুনিয়া বলেন, সব সরকারি প্রতিষ্ঠানেই ব্যাংকের মতো ফি নেয়া বন্ধ করা উচিত। ব্যাংক যদি পরীক্ষার ফি না নিয়ে নিয়োগ কার্যক্রম চালাতে পারে তাহলে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো কেন পারবে না?
তিনি প্রশ্ন রাখেন, সরকারি চাকরিতে নিয়োগে পরীক্ষা ফি বন্ধ হবে কবে?
সোহেল রানা নামে আরেক চাকরিপ্রার্থী বলেন, প্রতি মাসে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে আবেদন করার জন্য আমাকে কমপক্ষে এক থেকে দেড় হাজার টাকা গুনতে হয়। টিউশনি করে চলি। এর মধ্যে চাকরির আবেদনে মাসে মাসে এভাবে টাকা গুনতে হয়।
তিনি বলেন, ‘বলা হয়, বেকারত্ব একটি অভিশাপ। আর এই বেকারত্বকে পুঁজি করেই শতশত কোটি টাকা আয় করছে সরকার। একটি আসনের বিপরীতে শতশত প্রার্থী আবেদন করছেন। এই সুযোগই নিচ্ছে সরকারি সংস্থা বা বিভাগগুলো।’
ডিপিই সূত্রে জানা গেছে, নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ২৪ লাখ ১ হাজার ৫৯৭ আবেদনকারীর মধ্যে সর্বোচ্চ আবেদন রয়েছে চট্টগ্রাম জেলায়। এ জেলায় মোট ৯৮ হাজার ৯৬৯টি আবেদন পড়েছে। এরপরে ময়মনসিংহে ৮৮ হাজার ২১৮টি, কুমিল্লায় ৮৪ হাজার ৭২৮টি, দিনাজপুরে ৬২ হাজার ৯৭১টি, রংপুরে ৫৯ হাজার ৭১টি, জয়পুরহাটে ১৮ হাজার ১৭৮টি, বগুড়ায় ৬৪ হাজার ৭২৭টি, নওগাঁয় ৪৯ হাজার ৮৬৩টি, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩০ হাজার ২৭১টি আবেদন পড়েছে।
রাজশাহীতে ৫৭ হাজার ৩৮২টি, নাটোরে ৩৫ হাজার ২৫৭টি, সিরাজগঞ্জে ৫৮ হাজার ১৪৯টি, পাবনায় ৫১ হাজার ২৩১, কুষ্টিয়ায় ৩২ হাজার ৬০৯টি, মেহেরপুরে ১০ হাজার ৮৮৮টি, চুয়াডাঙ্গায় ১৮ হাজার ৬৬১টি, ঝিনাইদহে ৩৭ হাজার ৬১৭টি, মাগুরায় ২১ হাজার ৯৬২টি, যশোরে ৫৫ হাজার ৯৩২টি, নড়াইলে ১৫ হাজার ৬১৪টি, সাতক্ষীরায় ৪৫ হাজার ৬১টি, খুলনায় ৪৭ হাজার ১৮৮টি, বাগেরহাটে ৩২ হাজার ৯৭টি, জামালপুর ৫০ হাজার ৫০টি, শেরপুরে ২৫ হাজার ৪৬৬টি, নেত্রকোণায় ৪২ হাজার ৭৫৩টি, কিশোরগঞ্জে ৪৭ হাজার ৮৮৫টি, টাঙ্গাইলে ৬১ হাজার ৬৩০টি, গাজীপুরে ৩৫ হাজার ৫১৭টি, নরসিংদীতে ৩৮ হাজার ১৪৩টি, মানিকগঞ্জে ২৫ হাজার ৭১১টি, ঢাকায় ৬৪ হাজার ৫৫৮, নারায়ণগঞ্জে ২৭ হাজার ১২৭টি, মুন্সিগঞ্জে ১৮ হাজার ৭৫৯টি, রাজবাড়ীতে ২১ হাজার ৯০৬টি, ফরিদপুরে ৩৩ হাজার ৬৪৩টি, মাদারীপুরে ২৪ হাজার ৮০৭টি, শরীয়তপুরে ১৮ হাজার ৭৮৬টি, গোপালগঞ্জে ২৯ হাজার ২১৫টি, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৩৮ হাজার ৪০টি আবেদন পড়েছে।
চাঁদপুরে ৪৬ হাজার ৯১টি, লক্ষ্মীপুরে ২৩ হাজার ৩৩০টি, নোয়াখালীতে ৪০ হাজার ৭৩৯টি, ফেনীতে ২১ হাজার ৫০১টি, কক্সবাজারে ২৬ হাজার ৭৫০টি, বরিশালে ৬১ হাজার ৮৮৩টি, পিরোজপুরে ২৯ হাজার ২৭৮টি, ঝালকাঠিতে ১৯ হাজার ১৩৮টি, বরগুনায় ২১ হাজার ৭১৭টি, পটুয়াখালীতে ৪০ হাজার ৮০৭টি, ভোলায় ২৫ হাজার ১৪৫টি, সুনামগঞ্জে ৩৫ হাজার ৫১২টি, সিলেটে ৫০ হাজার ৩৭০টি, হবিগঞ্জে ৩৩ হাজার ৪৭৫টি, মৌলভীবাজারে ৩২ হাজার ১০৬টি, পঞ্চগড়ে ২১ হাজার ৬২৯টি, ঠাকুরগাঁওয়ে ৩১ হাজার ৭৯৭টি, নীলফামারীতে ৩৯ হাজার ৭৫২টি, লালমনিরহাটে ২৬ হাজার ১২২টি, কুড়িগ্রামে ৪৩ হাজার ২৯৪টি এবং গাইবান্ধায় ৫৫ হাজার ৫১৭টি আবেদন।