ডেস্ক,১১ অক্টোবর ২০২১ঃ গোপালগঞ্জে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজের টাকার ভাগ না পেয়ে প্রধান শিক্ষককে দুই’দফায় মারধর করে হাসপাতালে পাঠিয়েছেন সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এমন একটি খবর ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতির (রিয়াজ পারভেজ-নজরুল ইসলাম) নেতৃবৃন্দরা সব সময় গোপালগঞ্জের শিক্ষক এবং কর্মকর্তাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছিলেন এবং বিষয়টি পর্যবেক্ষন করছিলেন।
প্রধান শিক্ষক সমিতির অপর অংশের মুখপাত্র হিসাবে স্বীকৃত এ এম জিয়াউর রহমান তার ফেসবুক পোষ্টে ১২ অক্টোবর গোপালগঞ্জ যাচ্ছেন আহত প্রধান শিক্ষকের পাশে দাড়াতে গোপালগঞ্জ যাচ্ছেন সেখানে ১০ নং সিরিয়ালে রিয়াজ পারভেজের নাম তার অনুমতি না নিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে। তার অনুমতি না নিয়ে এমন খবর প্রকাশ করায় প্রতিবাদ জানিয়েছে প্রাথমিক প্রধান শিক্ষক সমিতি নেতৃবৃন্দরা। পরবর্তীতে এমন ঘটনার পুণরাবৃত্তি ঘটলে আইসিটি আইনে মামলা করার ঘোষনা দেন শিক্ষক নেতৃবৃন্দ।
এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার নম্বর বিভাজন যেভাবে
এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক সমিতির সভাপতি রিয়াজ পারভেজ শিক্ষাবার্তাকে জানান,প্রধান শিক্ষককে মারধর করে আহত করেন এমন একটি খবর মিডিয়া প্রকাশ হওয়ার পর আমরা খুবই মর্মাহত। আমরা বিষয়টি পর্যবেক্ষন করছি। ইতিমধ্যে আমরা আমাদের কর্মসুচি ঘোষনা করেছি।
প্রধান শিক্ষক মনোজ কান্তি বিশ্বাস এর সাময়িক বরথাস্ত প্রত্যাহার করতে হবে।
সহকারি শিক্ষা অফিসার কর্তৃক দায়ের করা সাধারন ডায়েরি প্রত্যাহার করে নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে। তদন্তপূর্ব দোষি ব্যক্তি শাস্তি দিতে হবে।
আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে এ দাবি মেনে না নিলে প্রধান শিক্ষক সমিতি সারা দেশের শিক্ষকদের নিয়ে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলবে।
প্রধান শিক্ষক মনোজ কান্তি বিশ্বাস অভিযোগ করে বলেন, বিদ্যালয়ের উন্নয়ন বরাদ্দের টাকার পুরোটাই তিনি বিদ্যালয়ের উন্নয়নের পেছনে ব্যয় করতে চান। কিন্তু সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ১৩০০০ টাকার বায়োমেট্রিক হাজিরা ২৩০০০ টাকায় কিনতে বাধ্যা করান। এ নিয়েই মূলত সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে তাঁর দ্বন্দ্ব। আর এ কারণেই মারধর খেয়ে তাঁকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।
মনোজ কান্তি বিশ্বাস বলেন, গত ৩ অক্টোবর বিদ্যালয় ছুটির আগেই সদ্যভূমিষ্ট হওয়া নবজাতক ও অসুস্থ স্ত্রীকে দেখতে ক্লিনিকে যান প্রধান শিক্ষক। ওই দিন স্কুল ছুটির পর বিকেলে সংশ্লিষ্ট ক্লাস্টারের দায়িত্বরত সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা গৌতম চন্দ্র রায় স্কুল পরিদর্শনে আসেন। তাঁর সঙ্গে যান পার্শ্ববর্তী গোপালপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক সহকারী শিক্ষক। কর্মকর্তা আসার সংবাদ পেয়ে বিদ্যালয়ে ফিরে আসি আমি।
প্রধান শিক্ষক আরও বলেন, ‘পরিস্থিতি অস্বাভাবিক হতে পারে ধারণা করে আমি আমার মোবাইলের ভিডিও চালু করে সেখানে উপস্থিত হই। সেখানে উপস্থিত হওয়া মাত্রই স্কুলের দুই শিক্ষকের সামনে আমাকে লাথি ও কিলঘুষি মারেন সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা গৌতম চন্দ্র রায়। মার খেয়ে সেখান থেকে দৌড়ে নিরাপদ স্থানে যাই আমি।’
অভিযোগে ভুক্তভোগী প্রধান শিক্ষক বলেন, মঙ্গলবার (৫ অক্টোবর) সকাল ৯টায় প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে গেলে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. মহিদুল আলম মাহাত্তাব খানের সঙ্গীয় লোকজন তাঁকে স্কুল থেকে জোর করে বের করে দিতে যায়। তবে তিনি স্কুল ছেড়ে বের হতে চাননি। সেখানেও তাঁকে বেধড়ক মারপিট করে সভাপতির লোকজন। মোবাইলে সেই ঘটনার ভিডিও ধারণসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লাইভ যান তিনি। পরে সেখানেও তাঁকে বেধড়ক মারপিট করে এবং মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে গিয়ে ধারণকৃত ভিডিও চিত্র মুছে ফেলে।
নাম না প্রকাশ করা শর্তে ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘৩ অক্টোবর বিকেলে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. মহিদুল আলম মাহাত্তাব খানের উপস্থিতিতে সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার গৌতম চন্দ্র রায় স্কুলের প্রধান শিক্ষককে লাথি মারে। আবার ৫ অক্টোবর সকালে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির লোকজন প্রধান শিক্ষককে বেধড়ক মারপিট করেন। প্রধান শিক্ষক একটু সহজ সরল প্রকৃতির। তবে লোকজনের মারপিটে কেমন যেন তিনি অস্বাভাবিক হয়ে পড়েন। মাথা-পিঠে এত মার হলো যা বলার মতো না। অসম্ভব মার খাইলো। অনেকে এ ঘটনা নিয়ে মিথ্যা কথা বলতে পারে তবে আল্লাহ তায়ালা কিন্তু সবে না।’
প্রধান শিক্ষকের স্ত্রী কাকলী হীরা এব্যাপারে থানায় একটি অভিযোগপত্র দাখিল করেছে। মনোজ কান্তি বিশ্বাস গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এদিকে, দু’টি ঘটনারই প্রত্যক্ষদর্শী শিল্পী খানম ও শিপ্রা বিশ্বাস সাংবাদিকদের সামনে মুখ খুলতে না চাইলেও বলেছেন, তাঁদেরকে দিয়ে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে লিখিত নেওয়া হয়েছে। তাঁরা একপর্যায়ে কেঁদে ফেলেন এবং বলেন, প্রধান শিক্ষকের ওপর যে হামলা হয়েছে তা হৃদয়-বিদারক এবং চরম অমানবিক।
ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. মহিদুল আলম মাহাত্তাব খান প্রধান শিক্ষকের ওপর হামলার বিষয়টিকে অস্বীকার করে বলেন, তাঁর ওপর কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি। এ অভিযোগ অবান্তর। সাময়িক বরখাস্তের বিষয়টি নিয়ে প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলতে গেলে সে এলোমেলো কথা বলে মোবাইলে ভিডিও করতে শুরু করে। তাই তাঁর কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে ভিডিও চিত্র মুছে ফেলা হয়েছে; কিন্তু তাঁকে কোন মারধর করা হয়নি।
এব্যাপারে অভিযুক্ত সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা গৌতম চন্দ্র রায়ের সঙ্গে কথা বলতে গেলে ক্যামেরা সামনে হাত দিয়ে ক্যামেরা বন্ধ করে দেন এবং হাত জোর করে এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য অনুরোধ জানান। পরে তিনি রুম থেকে বেরিয়ে যান।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আনন্দ কিশোর সাহা জানান, এব্যাপারে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে একই বিদ্যালয়ের দু’জন সহকারী শিক্ষক ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পেয়ে মনোজ কান্তি বিশ্বাসকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের বিভাগীয় উপপরিচালকের অফিস আদেশে বলা হয়, ‘২৮ নং উরফি বড়বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনোজ কান্তি বিশ্বাসের বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা প্রদান এবং পরিদর্শনকারী কর্মকর্তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করায় সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ৩ (খ) মোতাবেক অসদাচারণের দায়ে বিধি ১২ (১) অনুযায়ী ৫ অক্টোবর ২০২১ তারিখ হতে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।’