প্রাথমিক প্রধান শিক্ষকদের বেতনস্কেল ১০ম গ্রেডে উন্নিত না হলে সমাপনি বর্জন ও কর্মবিরতি

নিজস্ব প্রতিবেদকchuadanga saroklipi1: ঘোষিত দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদা (বর্তমানে ১০ম গ্রেড) কার্যকর করার দাবিতে সমাপনী পরীক্ষা বর্জন ও কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা।
শিক্ষকদের দাবি, শ্রেণিতে (তৃতীয় শ্রেণি) শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য করা হয়েছে। শ্রেণি বিলুপ্ত করার পর গ্রেডেও প্রধান শিক্ষকদের বঞ্চিত করা হয়েছে।
শ্রেণি বিলুপ্ত হলেও আগের দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদা অনুযায়ী তাদের ১০ গ্রেডের অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানানো হয়েছে।

৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী ‘ঘোষিত প্রতিশ্রুতি’ বাস্তবায়িত না হলে আগামী ২৩ নভেম্বর সারাদেশে অনুষ্ঠিত সমাপনী পরীক্ষা বর্জন করার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতি নেতারা শিক্ষাবার্তাকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
শিক্ষক নেতাদের দাবি, এসবের পরেও দাবি আদায় না হলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও ও গ্রেড কার্যকরে আদালতে রিট করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

শিক্ষক নেতাদের দাবি, ২০১৪ সালের ৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ অনুষ্ঠানে প্রধান শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণির পদমর্যাদা দেওয়ার ঘোষণা দেন। ঘোষণা অনুযায়ী, একই দিন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হিসেবে প্রজ্ঞাপন জারি করে।

কিন্তু মন্ত্রণালয়ের এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তার গড়িমসির কারণে দেড় বছরেও প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া যায়নি বলে অভিযোগ করেন নেতারা।

দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদা বাস্তবায়নে তাদের ‘সেলফ ড্রয়িং কর্মকর্তা’ হিসেবে ঘোষণা ও তাদের ‘বাই নেম গেজেট’ প্রকাশ করার দাবি জানানো হয়েছে।

ঘোষণা বাস্তবায়ন হলে শ্রেণি বিলুপ্ত হলেও তারা ১০ম গ্রেড অনুযায়ী বেতনসহ সুবিধা পাবেন বলে আশা করছেন। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন শিক্ষক নেতারা।

শিক্ষক সমিতি সূত্র জানায়, তাদের দ্বিতীয় শ্রেণির পদমর্যাদা দেওয়ার প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার দেড় বছর পর প্রধান শিক্ষকরা আন্দোলন শুরু করলে তা কেড়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্র শুরু হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ১২ আগস্ট প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব (বিদ্যালয়-২) জাজরীন নাহার মাঠ হিসাবরক্ষণ অফিসকে একটি চিঠি দেন।

চিঠিতে বলা হয়, ‘১১তম (প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত) ও ১২তম (প্রশিক্ষণবিহীন) প্রধান শিক্ষকদের আপাতত নন-গেজেটেড পদমর্যাদার বিবেচনা করা হবে। নন-গেজেটেড হিসেবে বেতন-ভাতা পরিশোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ও তা কার্যকরে হিসাবরক্ষণ অফিসকে নির্দেশ দেওয়া হলো।’

গেজেট প্রকাশ না করায় প্রধান শিক্ষকদের নন গেজেটেড পদ হিসেবে মাঠ পর্যায়ের হিসাবরক্ষণ অফিসগুলোয় বেতন নির্ধারণে নতুন করে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি করেন শিক্ষক নেতারা।

সূত্র জানায়, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ১০ হাজার প্রধান শিক্ষকের পদ শূণ্য। প্রায় ৫ বছর ধরে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতি বন্ধ রয়েছে।

২০১০ সালে ‘সহকারী শিক্ষক’ থেকে প্রধান শিক্ষকে পদোন্নতি বিষয়ে উচ্চ আদালতে মামলার পর থেকে তা বন্ধ হয়ে যায়। ২৮ এপ্রিল ২০১৪ মামলাটি নিষ্পত্তি হয়ে যায়।

সূত্র আরও জানায়, কম সময়ে শূণ্য পদ পূরণের অজুহাতে নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষমতা চেয়ে ২০১৫ সালের ২৫ মে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এরপর ১১ আগস্ট জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে জানায়, দ্বিতীয় শ্রেণির পদে সরাসরি নিয়োগ ও পদোন্নতি বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সুপারিশে হয়।

ইতোমধ্যে প্রধান শিক্ষক পদের বেতন স্কেল ‘দ্বিতীয় শ্রেণির পদমর্যাদা’ প্রদান করার ফলে নতুন নিয়োগ ও পদোন্নতি পিএসসি’র পরামর্শের ভিত্তিতে হবে।

প্রধান শিক্ষকরা নির্দেশনাটি মেনে নেন। কিন্তু প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরতদের ১০ম গ্রেড (দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদা) সব সুবিধা প্রদান করার দাবি জানান তারা।

তাদের মতে, নতুন নিয়োগ ও পদোন্নতি পিএসসি’র মাধ্যমে হলে কম সময়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক মেধাবী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতি দেওয়া সম্ভব হবে।

সূত্র জানায়, গত ১৮ মার্চ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে দ্বিতীয় শ্রেণির পদমর্যাদা প্রদানের লক্ষ্যে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।

বৈঠকে প্রধান শিক্ষকদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে আগের নিয়ম (সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক) বজায় রাখার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।

নির্দেশ অনুযায়ী, চলতি বছর সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষকে পদোন্নতি ও আগামী বছর থেকে পিএসসি’র মাধ্যমে নিয়োগ-পদোন্নতি শুরু হবে।

কিন্তু অনুমোদিত ৮ম পে-স্কেলে প্রধান শিক্ষকদের বঞ্চিত করা হয়েছে বলে  কাছে দাবি করেন প্রধান শিক্ষক সমিতির আহ্বায়ক রিয়াজ পারভেজ।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা ও এর পরবর্তী সময়ে প্রজ্ঞাপন জারির পরও তা বাস্তবায়ন হয়নি। শ্রেণি না হোক, ঘোষিত দ্বিতীয় শ্রেণি অনুযায়ী ১০ম গ্রেডের সুবিধা চায় বঞ্চিত শিক্ষকরা।

৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সরকার তাদের দাবি বাস্তবায়ন না করলে দীর্ঘ কর্মবিরতি, সমাপনী পরীক্ষা বর্জন ও পদমর্যাদা বাস্তবায়নে প্রয়োজনে রিট করা হবে বলে জানান পারভেজ।

কর্মবিরতি ও সমাপনী পরীক্ষা বর্জনে প্রাথমিক শিক্ষায় বিপর্যয় নেমে এলে তার দায় সরকারকে নিতে হবে বলেও মন্তব্য করেন এ নেতা।

তিনি প্রশ্ন করে বলে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তকে পাশ কাটিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় কিভাবে হিসাবরক্ষণ বিভাগকে ‘নন-গেজেটেড’ পদমর্যাদার বেতন প্রদানের নির্দেশ দেয়!

প্রধান শিক্ষকদের সেলফ ড্রয়িং কর্মকর্তা ঘোষণা ও বাই নেম গেজেট প্রকাশ করতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়নে গড়িমসি করছে বলে অভিযোগ করেন সমিতির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম।

তিনি বলেন, প্রধান শিক্ষকরা সরকারের এত কাজ করার পরও মর্যাদাহীন। ঘোষিত বেতন স্কেল ও মর্যাদা বাস্তবায়ন না হলে কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব।

Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।