‘জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫’ অপশন বাদ দিয়ে অনলাইন বেতন নির্ধারণী আইবাস প্লাস (ibass++) সিস্টেম আপডেট করার দাবি জানিয়েছেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। তারা এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে আবেদন জানিয়েছেন। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে শিক্ষকদের পক্ষে চিঠি দিয়েছেন প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক দশম গ্রেড বাস্তবায়ন সমন্বয় পরিষদের সমন্বয়ক মু. মাহবুবর রহমান।
বিষয়টি নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের কাছে জানতে চাইলে তিনি সংশ্লিষ্ট শাখায় যোগাযোগ করার পরামর্শ দিয়েছেন।
আরো পড়ুন: দুই বছরে ১৮ হাজার কিন্ডার গার্টেন বন্ধ
সংশ্লিষ্ট শাখার এক কর্মকর্তা বলেছেন, শিক্ষদের দেওয়া চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২০ সালের ১২ আগস্ট জারি করা চিঠিতে ঘ অনুচ্ছেদে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। সাধারণত, যদি কোনো আদেশ জারি হয়, সেই আদেশ জারির তারিখ থেকে তার কার্যকারিতা ধরে নেওয়া হয়। এখন পুরনো কোনো আদেশ অনুযায়ী কেউ যদি নির্দিষ্ট তারিখের আগে সিইনএড করে থাকেন, তিনি এ আদেশের আওতায় পড়বেন না।
তিনি বলেন, ‘শিক্ষকরা ২০১৫ সালকে অপশন থেকে বাদ দেওয়ার কথা বলছেন, এটি সম্ভব না। যদি ওনাদের প্রাপ্য থাকে, তাহলে সেটি ভিন্ন কথা। তবে, ওনাদের প্রাপ্য আছে কি না, সে প্রশ্ন রয়ে গেছে। কেননা, চিঠি জারি হয়েছে ২০২০ সালে। তার আগের বিষয়টি এখানে কার্যকর হবে না। চিঠিতে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালের পর থেকে উচ্চ ধাপে বেতন স্কেল নির্ধারণ করা যাবে। এ কারণে এখানে একটা জটিলতা রয়ে গেছে। এর ভিত্তিতে ২০১৫ সালের পেছনে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’
‘আরেকটি বিষয় হচ্ছে, এই চিঠি যখন জারি হয়েছে, তার পরে শিক্ষকদের গ্রেড উন্নয়ন হয়ে গেছে। এর মাধ্যমে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং অপ্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সবাইকে একই গ্রেডের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। আগে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং প্রশিক্ষণহীনরা ভিন্ন ভিন্ন গ্রেডে ছিল। আগে প্রশিক্ষণ করে আসলে স্কেল বাড়ত, এখন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও প্রশিক্ষণহীন উভয়ের স্কেল সমানভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে। গ্রেড উন্নয়নের কারণে এখন এর আর কার্যকারিতা নেই। কারণ, সিইনএড প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হোক বা প্রশিক্ষণহীন হোক, সবাই সমান স্যালারি পাচ্ছেন। এ চিঠি জারির পরে এই সুবিধাটি আর কেউ ওভাবে নিতে পারেননি। কারণ, পরে তাদের সবার বেতন মার্জ হয়ে গেছে।’
‘শিক্ষকরা চাচ্ছেন ২০১৫ সালের আগে যারা নিয়োগ পেয়েছেন, তারা এ সুবিধা পেতেন। কিন্তু, ২০২০ সালের ১২ আগস্ট যে আদেশ জারি হয়েছে, সেখানে ২০১৫ সালের আগে উচ্চ ধাপে বেতন নির্ধারণের সুযোগ রাখা হয়নি। কিন্তু, কথা হচ্ছে, ওদের প্রাপ্যতার বিষয়টি। এতে যদি কিছু উল্লেখ না থাকে, তাহলে সেটি ধরে নেওয়া যাবে যে, তারা সেটি পাচ্ছে না। চিঠিতে যদি কোনো সাল উল্লেখ থাকে, তাহলে সে সাল থেকে কার্যকর হবে। এ চিঠিতে কোনো সাল উল্লেখ করা হয়নি। যদি কোনো সাল উল্লেখ করা না হয়, তাহলে চিঠি যেদিন জারি হয়, সেদিন থেকেই এটি কার্যকর হবে। সেক্ষেত্রে চিঠির শর্তের বাইরে কেউ এটি পাচ্ছেন না।’
এর আগে গত রোববার আইবাস প্লাস ((ibass++) সম্পর্কে জানতে চাইলে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত বলেন, আমাদের প্রতিনিয়ত সবকিছু আপডেট হচ্ছে। এটা সরকারি অ্যাকাউন্টিং সিস্টেম। এর মাধ্যমে বেতন প্রক্রিয়ার কার্যক্রম চলে। আমি আজকেই আইবাস প্লাস সিস্টেমের সঙ্গে জড়িতদের সঙ্গে কথা বলব।
তিনি বলেন, এটি সরকারের পদ্ধতিগত একটি প্রক্রিয়া। এ পদ্ধতির কারণে প্রাথমিকের কোনো শিক্ষক ক্ষতিগ্রস্ত হোক, সেটা আমরা কখনো চাই না। সিস্টেম চালু করা হয়েছে মূলত কাজ সহজ করার জন্য। আমরা আরও আপডেট পদ্ধতিতে যাবো। আমি আজকেই আইবাস প্লাস সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এটি নিয়ে কথা বলব।
জানা গেছে, ২০১৫ সালের আগে সিইনএড প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্কেল নিম্ন ধাপে হওয়ার কারণে মূল বেতন কমে যাওয়ায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন শিক্ষকরা। গত ২৩ মার্চ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোহাম্মদ কবির উদ্দীন স্বাক্ষরিত ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সিইনএড/ডিপিএড প্রশিক্ষণগ্রহণকারী সহকারী শিক্ষকদের বেতন নির্ধারণ’ বিষয়ে একটি পরিপত্র জারি করা হয়। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর সে চিঠি পাঠানো হয়।
শিক্ষকরা বলছেন, ওই পরিপত্রে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ২০২০ সালের ১২ আগস্ট জারি করা একটি পত্রের স্মারক নং উল্লেখ করে ঘ অনুচ্ছেদ প্রযোজ্য বলে উদ্ধৃতি দেওয়া হয়েছে। সেখানে কোনো সাল উল্লেখ করা হয়নি। কিন্তু, অনলাইন বেতন নির্ধারণী ibass++ সিস্টেম অপশনে জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অপশন সন্নিবেশ করায় শুধু ২০১৫ সালের পে স্কেলের পর যারা প্রশিক্ষণগ্রহণ করেছে, তাদের উচ্চ ধাপে বেতন নির্ধারণ করা সম্ভব হচ্ছে ।
শিক্ষকদের দাবি, ২০১৫ সালের আগে যারা সিইনএড প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি, তাদের উচ্চ ধাপে বেতন নির্ধারণ করা সম্ভব হচ্ছে না। অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারি করা পত্রে সাল উল্লেখপূর্বক কোনো নির্দেশনা নেই। তাই, অনলাইন বেতন নির্ধারণী ibass++ সিস্টেমের অপশন থেকে ২০১৫ সাল বাদ দিতে হবে। তাহলে সিইনএড প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্কেল নিম্ন ধাপে হওয়ার কারণে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষকদের বেতন নির্ধারণ উচ্চ ধাপে করা সম্ভব হবে।