নিজস্ব প্রতিবেদক,২৮ জানুয়ারী ২০২৩: তাহিয়া আক্তার। স্বপ্ন পূরণে কঠোর পরিশ্রমী এ তরুণীর জীবনে ২৪ জানুয়ারি দিনটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে। কারণ, এই দিনে একই সঙ্গে দুটি অর্জনের সংবাদ পেয়েছেন তিনি। এদিন সকালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে যোগ দেন তিনি। এর পরপরই জানতে পারেন, বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের (বিজেএসসি) অধীনে সহকারী জজ নিয়োগ পরীক্ষাতেও উত্তীর্ণ হয়েছেন।
তাহিয়া আক্তার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) আইন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী। তার বাড়ি নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায়। তবে বেড়ে উঠেছেন চট্টগ্রাম শহরে। ২০১৭ সালে চবি থেকে স্নাতকোত্তর শেষে সহকারী জজ পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়া শুরু করেন। কয়েকবার স্বপ্নের খুব কাছাকাছি পৌঁছলেও ধরা দেয়নি সাফল্য। সে জন্য চাকরির অন্যান্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায়ও অংশ নিতে থাকেন তিনি।
গত ১৪ ডিসেম্বর প্রকাশিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার ফলে উত্তীর্ণ হন তাহিয়া। এরপর গত ২৪ জানুয়ারি নোয়াখালীর ভাটিরটেক চৌমুহনী বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। সেদিনই প্রকাশিত হয় পঞ্চদশ বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসের চূড়ান্ত ফল। বিদ্যালয় থেকে ঘরে ফিরতে ফিরতে সেই ফলাফলে চোখ বুলাচ্ছিলেন তিনি। হঠাৎ দেখেন উত্তীর্ণ ১০৩ জনের মধ্যে ১০০ নম্বরে আছেন তিনিও।
পড়ালেখার প্রতিটি ধাপেই প্রতিভার স্বাক্ষর রাখা তাহিয়া হাজারও শিক্ষার্থীকে ডিঙিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ভর্তি পরীক্ষায় ৪১তম হন। এরপর সহকারী জজ হওয়ার স্বপ্ন বুনেন। এখন সেই সাফল্য ধরা দেয়ায় ভীষণ খুশি তিনি। আবেগাপ্লুত হয়ে তাহিয়া বলেন, ‘এখনো নিজের কাছে অবিশ্বাস্য লাগছে। স্বপ্ন সত্যি হলো। কষ্টের ফল পেলাম।’
পরিবার, চার বছর ছুঁইছুঁই সন্তানের দেখভাল করা নিয়ে তাহিয়ার সংগ্রাম কম ছিল না। তবে ব্যস্ততা থেকে যখনই সুযোগ পেয়েছেন, ডুবে ছিলেন পড়ালেখায়। স্বপ্ন ছোঁয়ার এই দীর্ঘ সফরে পাশে পেয়েছেন স্বামী ব্যাংক কর্মকর্তা ফরিদ উদ্দিনকে। পরীক্ষার জন্য চট্টগ্রাম-ঢাকা দৌড়াদৌড়ি, বইপত্র জোগাড় করে দেয়ার মতো কাজগুলোতে ছায়ার মতো পাশে ছিলেন ফরিদ উদ্দিন। এ ছাড়া শিক্ষক মা শাহানারা বেগমের অনুপ্রেরণাও ছিল সঙ্গে।
স্ত্রীর সাফল্য ছুঁয়ে গেছে ফরিদ উদ্দিনকেও। তিনি বলেন, ‘তাহিয়ার স্বপ্ন ছিল সহকারী জজ হওয়ার। আমি তার স্বপ্নসারথী হিসেবে পাশে থেকেছি। তার এত বছরের কষ্ট সফল হলো বলে দারুণ খুশি লাগছে।’
এখন শুধু সহকারী জজ হিসেবে নিয়োগের গেজেট প্রকাশের অপেক্ষা। তার জন্য সময় লাগবে। তার আগে অবশ্য তাহিয়া নিজের সবটুকু ঢেলে দিতে চান প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের। তিনি বলেন, ‘আমার মা-ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। এত দূর আসার পেছনে মা ও প্রাথমিকের অন্যান্য শিক্ষকের অবদান কম নয়। সেই ঋণের কিছুটা শোধ করতে চাই আমার শিক্ষার্থীদের মানুষের মতো মানুষ হওয়ার শিক্ষা দিয়ে।’