ডেস্ক,৬ আগষ্ট:
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড এবং সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডে বেতন দেওয়ার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে চলেছে আন্দোলন। তবে সে দাবি মেনে না নিলেও প্রধান শিক্ষকদের এখন ১১তম গ্রেডে বেতন দিচ্ছে সরকার। আর সহকারী শিক্ষকরা পাাচ্ছেন ১৩তম গ্রেডে। তবে গত বছর তাদেরকে এই নতুন ধাপে বেতন দেওয়া হলেও নতুন করে সমস্যার আবর্তে জড়িয়ে পড়েছেন শিক্ষকরা।
জানা গেছে, নতুন বেতন স্কেল নির্ধারণের পর টাইমস্কেল নিয়ে নতুন জটিলতায় পড়েছেন প্রধান শিক্ষকরা। এছাড়া পদোন্নতি, শ্রান্তি-বিনোদন ভাতা, চাকরি স্থায়ীকরন নিয়ে জটিলতাসহ নানা কারণে তাদের মধ্যে ক্ষোভ দানা বাঁধছে। অপরদিকে সহকারী শিক্ষকদের নতুন গ্রেডে বেতন কমে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এছাড়া গ্রেডসহ আরও কিছু জটিলতা থাকার কারণে ক্ষুব্ধ সহকারী শিক্ষকরাও।
প্রধান শিক্ষক সমিতির সিনিয়ার যুগ্ন সাধারন সম্পাদক স্বরুপ দাস বলেন, ১১তম গ্রেড দেওয়ার পর ২০১৫ সাল থেকে তা কার্যকর হয়েছে। কিন্তু টাইমস্কেল বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে অধিকাংশ প্রধান শিক্ষক প্রায় ৮/৯ মাসের টাকা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সবমিলিয়ে নতুন গ্রেডে তারা ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা কম বেতন পাচ্ছেন। এমনকি দ্বিতীয় শ্রেণীর ঘোষণা হলেও তারা এখনো তৃতীয় শ্রেণীর সুবিধা পাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন।
তিনি আরো বলেন, বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয়ে আটকে আছে। এ কারণে অন্যান্য সমস্যাও সমাধান হচ্ছে না। এছাড়া ১৯৯৪ সালে রাষ্ট্রপতির একটি সিদ্ধান্তের কারণে প্রধান শিক্ষকদের পদোন্নতিও হচ্ছে না। ২৬ বছর ধরে অনেক শিক্ষক পদোন্নতি না পেয়েই অবসরে চলে যাচ্ছেন। নিয়মানুযায়ী শ্রান্তি-বিনোদন ভাতা তিন বছরে দেয়ার কথা থাকলেও তাও পাচ্ছেন না। চার থেকে পাঁচ বছর পর পর এই ভাতা পাচ্ছেন তারা।
‘নতুন বেতন গ্রেডের কারণে টাইম স্কেল নিয়ে যে জটিলতা তৈরি হয়েছে, সে কারণে প্রতি মাসে শিক্ষকরা ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। দ্রুত এর সমাধান দাবি করছি। পাশাপাশি পদোন্নতি, শ্রান্তি-বিনোদনসহ যে সমস্যাগুলো রয়েছে সেগুলোও সমাধানের চেষ্টা করছি। এছাড়া ১০ম গ্রেড নিয়ে যে দাবি আছে তাও দ্রুত পূরণ করার দাবি জানাচ্ছি।’
এদিকে নতুন গ্রেডে বেতন কমার শঙ্কায় রয়েছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাড়ে তিন লাখ সহকারী শিক্ষক। তারা বলছেন, বেতন স্কেল উন্নীত করার পরিপত্রে পরিষ্কার বলা নেই, ১৩তম গ্রেডের উচ্চধাপে নাকি নিম্নধাপে তাদের বেতন নির্ধারণ করা হবে। যদি নিম্নধাপে নির্ধারণ করা হয়, তাহলে শিক্ষকদের বেতন কমে যাবে। উচ্চধাপে নির্ধারণ করা হলে সবাই আর্থিকভাবে লাভবান হবেন।
জানা গেছে, ইতোমধ্যে প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের বেতন স্কেল এক ধাপ বাড়িয়ে ১৩তম গ্রেডে নিয়েছে সরকার। অবশ্য তাদের চাওয়া ছিল ১১তম গ্রেড। ১৩তম গ্রেডে বেতন নির্ধারণে জটিলতার কারণে উল্টো এখন তাদের বেতন কমে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। শিক্ষকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে যে, নতুন গ্রেডে বেতন নির্ধারণ করা হলে সব শিক্ষকের মূল বেতন কমে যাবে।
শিক্ষকরা বলছেন, নতুন গ্রেডে যারা এইচএসসি কিংবা ডিগ্রি তৃতীয় শ্রেণী পেয়ে নিয়োগ পেয়েছেন তাদেরও নতুন গ্রেডে বেতন পাওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি নতুন যারা নিয়োগ পেয়েছেন তাদেরকে ১৫তম গ্রেডে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এখন ১৩তম গ্রেড যেন সব শিক্ষকই বেতন পান সে দাবি তাদের। কারণ নিয়োগের সময় সবাই সরকার নির্ধারিত সব শর্ত পূরণ করেই নিয়োগ পেয়েছিলেন। সেক্ষেত্রে ১৩তম গ্রেড প্রাপ্তিতে শিক্ষকদের মধ্যে কোনো বিভাজন চান না তারা।
শিক্ষকরা জানিয়েছেন, ১৩তম গ্রেডের নিম্নধাপে বেতন নির্ধারণ করলে শিক্ষকদের বেতন ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত কমে যাবে, যা চাকরিজীবনে আর সমন্বয় করা সম্ভব হবে না। ফলে পরবর্তীতে ইনক্রিমেন্ট পেলেও সেই হারেই বেতন বাড়বে। অথচ সরকারি চাকরিতে বেতন কমে যাওয়ার নিয়ম নেই। এসব সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি তাদের ১১তম গ্রেডে বেতন দেওয়ার যে দাবি তাও দ্রুত সমাধানের দাবি জানিয়েছেন তারা।
বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ বলেন, ‘নতুন গ্রেড দেওয়ার পর ফিক্সেশনসহ যে সমস্যাগুলো তৈরি হয়েছে তা বর্তমান সচিব স্যারের সময়েই সমাধান হবে আশা করি। গত ৩১ জুলাই একটি মিটিং হয়েছে। আশা করি, আমাদের উচ্চধাপে বেতন দেওয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘সচিব স্যারের মেয়াদেই ১১তম গ্রেড দেওয়ার বিষয়ে সমাধান আসবে বলেও আমরা আশা করছি। বিভাগীয় কোটা নিয়েও একটা দাবি আমাদের রয়েছে। আশা করি, দ্রুতই সব সমস্যার সমাধান হবে।’
অবশ্য এ বিষয়ে সম্প্রতি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আকরাম আল হোসেন বলেছেন, কারও বেতন কমানো হবে না। বেতন স্কেলের ধাপে ধাপে মেলানো হবে। না মিললে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরামর্শমতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
আর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. ফসিউল্লাহ বলেছেন, বেতন স্কেল নির্ধারণের সাধারণ নিয়ম হলো ধাপে মিললে মিলল। না মিললে পে-প্রটেকশন দিয়ে পরের ধাপের ইনক্রিমেন্ট পেয়ে তা সমান হবে বলে তিনি জানান।
এদিকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের চলতি দায়িত্বে থাকা সহকারী শিক্ষকদের প্রধান শিক্ষক পদে স্থায়ীকরণের জন্য গ্রেডেশন লিস্ট (জ্যেষ্ঠতা তালিকা) চেয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। আগামী ২০ আগস্টের মধ্যে এই তালিকা পাঠাতে বলা হয়েছে। গত ২৯ জুলাই অধিদপ্তরের যুগ্ম সচিব (পলিসি ও অপারেশন) খালিদ আহম্মেদ স্বাক্ষরিত একটি চিঠি দেশের সকল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর পাঠানো হয়েছে।
অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশের ৬৫ হাজার ৬২০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ১৮ হাজার সহকারী শিক্ষক প্রধান শিক্ষকের চলতি দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া আরও ২০ হাজার প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে।