শিক্ষাবার্তা ডেস্কঃ
প্রাইমারি শিক্ষার মানোন্নয়নে বড় ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আগামী পাঁচ বছরে এক লাখ ৬৫ হাজার শিক্ষক নিয়োগ ও পদায়ন করা হবে। একই সঙ্গে প্রায় বিদ্যমান তিন লাখ শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। উন্নয়ন করা হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোর ব্যবস্থা। এজন্য চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিপি-৪) প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৪ হাজার ৬৫৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে জিওবি ৩১ হাজার ৮৪৮.৫৭ কোটি টাকা এবং প্রকল্প সাহায্য ১২ হাজার ৮০৫ কোটি টাকা। প্রকল্প সাহায্য হিসেবে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা
বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকা, ইইউ, ডিএফআইডি, অস্ট্রেলিয়ান এইড, কানাডিয়ান সিডা, সুইডিশ সিডা ও ইউনিসেফ ঋণ সহায়তা দেবে।
মঙ্গলবার রাজধানীর শেরে বাংলানগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এ প্রকল্পসহ মোট ১৬ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব
করেন একনেক চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রকল্পটি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়িত হবে। চলতি বছর থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদকালে এটি বাস্তবায়িত হবে।
পরে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সভার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। তিনি জানান, প্রকল্পের আওতায় প্রি- প্রাইমারি এবং প্রথম হতে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বর্তমান পাঠ্যসূচির সংশোধন এবং সব বিদ্যালয়ে যোগ্যতাভিত্তিক টিচিং লারনিং শিক্ষা উপকরণ প্রদান ও নির্দিষ্ট সময়ে পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ করা হবে।
শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে এক লাখ ৬৫ হাজার ১৭৪ জন শিক্ষক নিয়োগ ও পদায়ন করা হবে। এছাড়া এক লাখ ৩৯ হাজার ১৭৪ জন শিক্ষকের ডিপ-ইন এড প্রশিক্ষণ প্রদান; শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও প্রতি শিক্ষকের বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ প্রদান; ৫৫ হাজার শিক্ষকদের ইনডাকশন/প্রতিষ্ঠানিক/বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ প্রদান; ১৭শ’ শিক্ষকের এক বছর মেয়াদে সাব ক্লাস্টার প্রশিক্ষণ, ২০ হাজার শিক্ষকের এক বছর মেয়াদে আইসিটি ট্রেনিং, ৬৫ হাজার শিক্ষকের লিডারশিপ ট্রেনিং; ২৫৯০ সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা/উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও শিক্ষকের বৈদেশিক প্রশিক্ষণ।
এর বাইরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত ৩৫ হাজার কর্মকর্তা ও শিক্ষকের বৈদিশিক প্রশিক্ষণ; ২০০ জন শিক্ষক/কর্মকর্তার এক বছর মেয়াদে বৈদেশিক মাস্টার্স; ১১৪০ জন প্রশিক্ষক এক লাখ ৩০ হাজার জন প্রাথমিক শিক্ষকদের ব্রিটিশ কাউন্সিলের (সিঙ্গেল সোর্স) মাধ্যমে ইংরেজি বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান; বিশ্ব গণিত অলিম্পিয়াড আয়োজন; সকল বিদ্যালয়কে প্রি-প্রাইমারি শিক্ষার উপোযোগিকরণ (৩৫৮.২০ কোটি টাকা)।
এদিকে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘পদ্মাসেতু রেলসংযোগ’ প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। রেল সংযোগের মোট ব্যয় ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে জি-টু-জি পদ্ধিতে চীন সরকার দেবে ২১ হাজার ৩৬ কোটি টাকা। এ বিষয়ে এরই মধ্যে চীনের সঙ্গে একটি চুক্তিও সই হয়েছে।
পদ্মাসেতুর রেলসংযোগের মূল কাজ এখনও শুরু হয়নি। শুধু ভূমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন কাজ চলছে। ফলে এর সময় ও ব্যয় বেড়েছে। রাজধানী ঢাকা থেকে পদ্মাসেতু হয়ে ১৬৯ কিলোমিটার নতুন রেলপথ যশোর পর্যন্ত যাবে। এ প্রকল্প নির্মাণে চার হাজার ২৬৯ কোটি ২৭ লাখ টাকা ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। বাস্তবায়নে আরও দুই বছর সময় বেড়েছে প্রকল্পটির।
সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের আরও বলেন, এর আগে ২০১৬ সালের ৩ মে পদ্মাসেতু হয়ে নতুন রেলসংযোগ স্থাপনের জন্য ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পের অনুমোদন দেয় সরকার।
‘প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মেয়াদ ছিল ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। এখন তা ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।’
নানা কারণে প্রকল্প সংশোধন ও সময় বেড়েছে বলে জানান তিনি। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, একনেক সভায় মোট ১৬টি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। বাজেটের আগে শেষ সভায় প্রকল্পগুলোর মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৬ হাজার ২৩৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রকল্প সাহায্য ৪৩ হাজার ২২১ কোটি টাকা। বাকি
টাকা দেবে সরকার।
অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হচ্ছে- রূপসা ৮০০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প, কন্সট্রাকশন অব নিউ ১৩২/৩৩ কেভি অ্যান্ড ৩৩/১১ কেভি সাবস্টেশন আন্ডার ডিপিডিসি প্রকল্প, ১৪টি চিনিকলে বর্জ্য পরিশোধনাগার (ইটিপি) স্থাপন প্রকল্প, যশোরে ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল, কক্সবাজার, পাবনা ও আব্দুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড জননেতা নুরুল হক আধুনিক হাসপাতাল প্রকল্প, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের উন্নয়ন প্রকল্প, তথ্য কমিশন ভবন নির্মাণ প্রকল্প, বাংলাদেশ বেতার, সিলেট কেন্দ্র আধুনিকায়ন ও ডিজিটাল সম্প্রচার যন্ত্রপাতি স্থাপন প্রকল্প, সাতক্ষীরা সড়ক ও সিটি বাইপাস সড়ককে সংযুক্ত করে সংযোগ সড়কসহ তিনটি লিংক রোড নির্মাণ প্রকল্প, ঢাকার তেজগাঁওয়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বহুতল আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প, আশুগঞ্জ অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার নদীবন্দর স্থাপন প্রকল্প, বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা ও বালুর তীরভূমিতে পিলার স্থাপন, তীর রক্ষা, ওয়াকওয়ে ও জেটিসহ আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্প, গুরুত্বপূর্ণ ১৯টি পৌরসভা অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, ঢাকা মহানগরীর ড্রেনেজ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ এবং খাল উন্নয়ন প্রকল্প, পাঁচটি র্যাব ফোর্সেস ট্রেনিং স্কুল কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্প।