ডেস্ক,১৯ জানুয়ারী: ‘প্রধানমন্ত্রী চাইলে কিনা হয়! পদ্মাসেতুর কাজ নিজস্ব অর্থায়নে শুরু করে তিনি বিশ্বে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। আমাদের স্বপ্ন দেখিয়েছেন। জননেত্রী শেখ হাসিনায় আমাদের আস্থা রয়েছে। তিনি নজর দিলেই আমরা জাতীয়করণের আওতায় আসবো। তার আশ্বাসের অপেক্ষায় রয়েছি।’
জাতীয়করণের দাবিতে গত পাঁচদিন ধরে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করছেন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা। শুক্রবার জাগো নিউজকে এসব কথা বলেন শিক্ষক-কর্মচারীদের ছয়টি সংগঠনের জোট ‘বেসরকারি শিক্ষা জাতীয়করণ লিয়াঁজো ফোরাম’। যদিও দাবি পূরণে এখনও শিক্ষা মন্ত্রণালয় কিংবা সরকারে উচ্চ পর্যায়ের সবুজ সংকেত তারা পাননি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ জানুয়ারি থেকে এমপিওভূক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা জাতীয়করণের এক দফা দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে। গত ১৫ জানুয়ারি থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বেসরকারি শিক্ষা জাতীয়করণ লিয়াঁজো ফোরামের ব্যানারে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করে আসছেন শিক্ষকরা। প্রচণ্ড শীতে শিক্ষক-কর্মচারীরা খোলা আকাশের নিচে রাত যাপন করছেন।
শুক্রবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, আন্দোলনকারী অধিকাংশ শিক্ষক-কর্মচারীই ক্লান্ত। অবসন্ন শরীর-মন নিয়ে শুয়ে পড়ছেন প্রেস ক্লাবের সামনে।
অনশনে অংশ নেয়া শিক্ষক নেতারা বলছেন, শুধু শিক্ষকদের জন্য নয়, ষোল কোটি মানুষের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করা, শিক্ষার মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নের জন্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করে উন্নত জাতি গঠনে শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ সময়ের দাবি।
শিক্ষক-কর্মচারীদের ছয়টি সংগঠনের জোট ‘বেসরকারি শিক্ষা জাতীয়করণ লিয়াঁজো ফোরাম’ এর যুগ্ম মহাসচিব দেলোয়ার হোসেন খোকন বলেন, স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে প্রথম প্রাথমিক শিক্ষা জাতীয়করণ করে শিক্ষার ইতিহাস উজ্জ্বল করেছেন। ৭৩ দিন আন্দোলনের পর বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের বেতন ৭৫ টাকা ও সহকারী শিক্ষকদের বেতন ৫০ টাকা এবং রেশনিংয়ের ব্যবস্থা করেন। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ শেষ করার লক্ষ্যেই ২০১৩ সালে বেসরকারি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক শিক্ষা জাতীয়করণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
‘কিন্তু আমাদের দাবি এখনো অপূর্ণ রয়ে গেছে। গত ৮ বছরে বেসরকারি শিক্ষক সমাজের কঠোর আন্দোলনেও দাবি পূরণ হয়নি। আমাদের জাতীয়করণ করা হোক।
‘আমরা বিশ্বাস করি, প্রধানমন্ত্রী চাইলে সব সম্ভব। তিনি সুনজর দিলে, আশ্বাস দিলেই আমরা আন্দোলন প্রত্যাহার করবো। ফিরে যাবো। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কাজ শুরু করবো।
যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক লিটন শেখ বলেন, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় বেসরকারি শিক্ষকরা ৯৭ শতাংশ দায়িত্ব পালন করেন। আর সরকারি শিক্ষকরা দায়িত্ব পালন করেন মাত্র ৩ শতাংশ। অথচ আমরাই জাতীয়করণের বাইরে।
জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী আমরা শুধু বেতন পাচ্ছি। আর সরকারি শিক্ষকরা সকল ধরনের সুবিধা পাচ্ছেন। তারা বেতন স্কেল অনুযায়ী পূর্ণ বাড়ি ভাড়া পাচ্ছেন আর আমরা পাচ্ছি নির্ধারিত মাত্র এক হাজার টাকা। আমাদের বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট নেই। টাইম স্কেলও বন্ধ। চিকিৎসা ভাতা পাই মাত্র পাঁচশ টাকা। উৎসব ভাতা নেই। বোনাসও বেতনের মাত্র ২৫ শতাংশ। সব দিক দিয়ে আমরা পিছিয়ে।
তিনি আরও বলেন, পৃথিবীর অন্যান্য দেশে শিক্ষকরা বিশেষ সুবিধা পান। আদালতে বসার চেয়ার পান, ভিআইপি সুবিধা পান, সরকারের নির্বাহী বিভাগের অনুমতি ছাড়া শিক্ষকদের হয়রানি বা গ্রেফতার করা যায় না। তবে বিপরীত চিত্র শুধু বাংলাদেশে। আশা করছি সরকার আমাদের ইজ্জত দিবেন।