নিজস্ব প্রতিবেদক,২জুন:
শিগগরিই হচ্ছে না স্বর্ণ নীতিমালা। সরকারের অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে অনুমোদনের পর চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য ‘স্বর্ণ নীতিমালা-২০১৮’ মন্ত্রিপরিষদ সভায় তুলতে পাঠানো হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। গত মাসের শেষ সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, আগের স্বর্ণ নীতিমালায় (১৯৯৬ সালের) কী ছিল তা দেখে চূড়ান্ত করা হবে নতুন নীতিমালা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগের নীতিমালাটি সংযোজন করে পুনরায় পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা গেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এখন ১৯৯৬ সালে করা খসড়া নীতিমালাটি খুঁজে বেড়াচ্ছে।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এর আগে দেশে কখনও স্বর্ণ আমদানি করা হতো না। বরাবরই দেশের চাহিদার বড় অংশের যোগান আসতো চোরাচালানের মাধ্যমে। এখন বৈধভাবে স্বর্ণ আমদানি করা হবে। একইসঙ্গে প্রয়োজন ও সুযোগ এলে বাংলাদেশ স্বর্ণ রফতানিও করবে— এমন বিধান রেখে তৈরি করা হচ্ছে স্বর্ণ নীতিমালা- ২০১৮। তবে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে অনুমোদিত স্বর্ণ নীতিমালায় স্বর্ণ শিল্পকে সুষ্ঠুভাবে ও অধিকতর স্বচ্ছতার সঙ্গে পরিচালনায় করণীয় সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল। যাতে ভোক্তার স্বার্থ ও মানরক্ষার ওপরও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে এখন সেসব ক্ষেত্রে কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে।
তবে পরিবর্তন যা-ই হোক, তা হবে দেশ ও জনস্বার্থে- বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি জানিয়েছেন, ‘বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন থাকায় খোলাখুলি কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে যেহেতু প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে ১৯৯৬ সালে করা এ সংক্রান্ত নীতিমালাটি সংযোজনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তাতে মনে হয় ভবিষ্যতে নতুন নীতিমালাটি আরও সমৃদ্ধ হবে। কারণ ১৯৯৬ ও ২০১৮ সালে করা দুটি নীতিমালা একত্রিত করে নতুন নীতিমালাটি তৈরি করা হলে অবশ্যই তা সমৃদ্ধ হবে।’
কবে নাগাদ আগের নীতিমালাটি প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পাঠানো হবে জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘অনেক দিন আগের বিষয়। নীতিমালাটি কোথায় কী অবস্থায় আছে তা খুঁজে পেতে কয়েক দিন লাগতে পারে।’ এর কারণ ব্যাখ্যা করে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘এই ২২ বছরে এ মন্ত্রণালয়ের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী বদলি হয়ে গেছেন। এসেছেন অনেক নতুন কর্মচারী-কর্মকর্তা। তারা বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন। তাই পুরনো ডক্যুমেন্টস খুঁজে পেতে হয়তো কয়েক দিন দেরি হতে পারে। পাওয়া মাত্রই তা প্রধানমন্ত্রীর কর্যালয়ে পাঠানো হবে।’
জানা গেছে, অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিকে অনুমোদন পাওয়া স্বর্ণ নীতিমালার খসড়ায় অর্থমন্ত্রী ও বাণিজ্যমন্ত্রীর নির্দেশে সংশ্লিষ্ট স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে কয়েক দফায় বৈঠক করে তাদের মতামত নেওয়া হয়েছে। তাদের মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে স্বর্ণ নীতিমালার খসড়া প্রণয়ন করা হলেও আবার নতুন করে তাদের মতামত নেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র।
সূত্র বলছে, যদি খসড়া নীতিমালায় কোনও পরিবর্তন আসে তাহলে সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি অবগত করতে হবে। তা না হলে উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে। তাই হয়তো কিছুটা দেরি হতে পারে। যেকোনও ধরনের বিতর্ক এড়াতেই এটি করা হতে পারে।
জানা গেছে, গত ২৩ মে অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে অনুমোদন পাওয়া স্বর্ণ নীতিমালায় বলা হয়েছে, এটি জারি হওয়ার পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে সরকারি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে স্বর্ণ শিল্পের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে বাধ্যতামূলক (মূল্য সংযোজন কর) মূসক নিবন্ধন সনদ নিতে হবে। একইসঙ্গে মজুদ স্বর্ণালঙ্কারের সুনির্দিষ্ট ঘোষণাও প্রতিষ্ঠানকে দিতে হবে। পাশাপাশি দেশে বৈধ স্বর্ণের ঘাটতি দূর করতে ব্যাংকের মাধ্যমে স্বর্ণ আমদানির সুযোগ, আমদানিতে বন্ড সুবিধা দেওয়া, রফতানি বিকাশের সুযোগও থাকবে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোস্তাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, দেশের চাহিদা মিটিয়ে স্বর্ণ বাণিজ্যকে নিয়মের আওতায় আনতেই এ নীতিমালা করা হয়েছে। স্বর্ণ আমদানির পর ‘ভ্যালু অ্যাড’ করে আবার তা রফতনি করার সুযোগ রয়েছে এই নীতিমালায়।
জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেন, ‘এতদিন স্বর্ণ আমদানি হতো না, সব স্মাগল হতো। এখন স্বর্ণ আমদানি করা যাবে।’ অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘নীতিমালাটি এখন মন্ত্রিসভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। নীতিমালা পাস হলে স্বর্ণ আমদানির লাইসেন্স নিতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে।’
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে যেসব কাগজপত্র চাওয়া হয়েছে, তা সরবরাহ করতে হবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে। অধিকতর যাচাইবাছাই করতেই পুরানো কাগজপত্র চাওয়া হয়েছে।’ এতে নতুন নীতিমালাটি বেশি সমৃদ্ধ হবে বলে জানান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই সব কিছু বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে। সোনা বেচাকেনার জন্য একটা রেগুলেটরি ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি হচ্ছে। এই রেগুলেটরি ফ্রেমওয়ার্কের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক ডিলার নিয়োগ করবে, যাদের মাধ্যমে সোনা আমদানি হবে।’