মাত্র ছয় বছর বয়স। বিদ্যালয়ের চৌকাঠে পা রাখার আগেই অন্য শিশুদের সঙ্গে খেলতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে গুরুতর আহত হয় সিয়াম। এরপর তাকে নেওয়া হয় ঢাকা মেডিকেলে। সেখানে চিকিৎসকেরা আপ্রাণ চেষ্টা করেও তার দুই হাত রক্ষা করতে পারেননি। সিয়ামের দুই হাত কেটে ফেলতে হয়। কিন্তু তাতে কি?
হাত না থাকলে তো আর জীবন থেমে থাকে না। দেখতে দেখতে সিয়ামের বয়স এখন ১২। তবু পঙ্গুত্ব তাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি; বরং নিজের অদম্য ইচ্ছার কাছে হার মেনেছে তার শারীরিক অক্ষমতা। পা দিয়ে লিখে সে শিশু শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণিতে উঠেছে। এবার অংশ নিচ্ছে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায়।
বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার আগরপুর আলতাফ মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র সিয়াম এবার আগরপুর ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে জেএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। তার সহপাঠীরা যখন হাত খুলে লিখছে, তখন বেঞ্চের ওপরে বসে মাথা নিচু করে পা দিয়ে অনবরত লিখে যাচ্ছে সে। গত বৃহস্পতিবার বাংলা দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষা শেষ করে কেন্দ্র থেকে বের হওয়ার পর জিজ্ঞেস করতেই হাসিমুখে সিয়াম বলল, ‘খুব ভালো হইছে।’
বাবুগঞ্জ উপজেলার বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নের চরহোগলপাতিয়া গ্রামের দিনমজুর সামসুল হক চৌকিদারের ছেলে সে। বাবা দিনমজুরি করেন। সংসার আর চলছিল না। তাই পাড়ি জমান ঢাকায়। সেখানে একটি প্রতিষ্ঠানে দারোয়ান হিসেবে কাজ পান। বেতন ৭ হাজার টাকা। ৩ হাজার টাকায় নিজের খাওয়া-থাকা বাদে বাকি ৪ হাজার টাকা পাঠান বাড়িতে। বাড়িতে স্ত্রী ও তিন ছেলেমেয়ে। বড় সিয়াম এবার অষ্টম, মেয়ে সিনথিয়া সপ্তম ও ছোট সাদিয়া শিশু শ্রেণিতে পড়ছে।
জমিজমা বলতে ৫ শতক জমির ওপর চৌচালা ঘর। এই ছোট্ট ঘরের মধ্যে ভিন্ন ভিন্নভাবে থাকে রুমা আক্তারের আরও তিন দেবরের পরিবার। ঘরের মধ্যে গাদাগাদি করে সন্তানদের আগলে আছেন রুমা আক্তার।
রুমা আক্তার বলেন, ‘ছেলেটার দুই হাত যখন কেটে ফেলে, তখন নিজেকে খুব অসহায় লাগছিল। মনে হয়েছিল ছেলেটার জীবন বৃথা হয়ে গেল। কিন্তু ছোটবেলা থেকে ওর স্কুল-পড়াশোনার প্রতি খুব আগ্রহ দেখে মনটা খুশিতে ভরে ওঠে। বলতে গেলে নিজের ইচ্ছায় ও আগ্রহে এতদূর আসছে।’
আগরপুর আলতাফ মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মুজাফ্ফর আলী বলেন, ‘পড়াশোনার প্রতি সিয়ামের আগ্রহ অনেক। এ রকম মনোবলের শিক্ষার্থী কম দেখেছি। আর পড়াশোনায়ও খুব ভালো সে।’