পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত হতাশাজনক

দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বর্তমান অনুপাতকে বেশ হতাশাজনক বলছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। ইউজিসি’র ২০১৫ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের ৩৪টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ লাখ ৪৪ হাজার ৩৬৩ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক আছেন মাত্র ১২ হাজার ৫৩১ জন। সে হিসেবে একজন শিক্ষককে সর্বোচ্চ ৬২ জন শিক্ষার্থীকে পড়াতে হচ্ছে। তবে কোনও কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন শিক্ষক ৫-২০ জন শিক্ষার্থীও পড়াচ্ছেন।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, শিক্ষা ছুটি ও অন্যান্য কারণে অনুপস্থিত শিক্ষকদের গণনার বাইরে রাখা হলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত আরও বাড়বে। তবে  শিক্ষক-শিক্ষার্থীর আনুপাতিক হার অনুকূল রাখা সম্ভব হলে শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে মনে করে ইউজিসি।

অন্যদিকে, ইউজিসি’র ওই প্রতিবেদনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাতকে সন্তোষজনক উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন শিক্ষককে ২৩ জন শিক্ষার্থী পড়াতে হয়। দেশের ৮৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট শিক্ষক ১৫ হাজার ৫৮ জন। এর মধ্যে পূর্ণকালীন ১০ হাজার ১৮৮ জন ও খণ্ডকালীন শিক্ষক ৪ হাজার ৮৭০ জন।

ইউজিসি’র চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান বলেন, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। ভালো শিক্ষক পাওয়া কঠিন হওয়ায় উন্নত প্রশিক্ষণ ও গবেষণার জন্য সরকারকে ইউজিসি’র আওতায় অথবা আলাদা ইনস্টিটিউট করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’

ইউজিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত সর্বোচ্চ ১:৬২, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটিতে ১:৫, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১:৫২, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১:৪৮, ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১:৩৫, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ১:৩৪, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১:৩০, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১:২৯, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১:২৮, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১:২৪, জাতীয় কবি কাজী নজরুল, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে  ১:২৩, রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১:২২, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত ১:২১, জাহাঙ্গীরনগর, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসে ১:২০।

এছাড়া, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ অনুপাত ১:১৮, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি এবং বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১:১৭, বাংলাদেশ প্রকৌশল এবং পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ১:১৬।

ঢাকা, খুলনা, শেরে বাংলা কৃষি, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি ও ঢাকা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে এ অনুপাত ১:১৪, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১:১৩, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১:১২, চট্টগ্রাম ভেটেরেনারি ও অ্যানিম্যাল সায়েন্সেসে ১:১১, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১:১০, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১:৭ এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত ১:৬।

এদিকে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০ লাখ ৭৩ হাজার ৬৯ জন শিক্ষার্থীরর বিপরীতে শিক্ষক আছে এক লাখ ৮১ জন, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ লাখ ৭ হাজার ৮২৯ জনের বিপরীতে ১৬৮ জন। আর ইসলামি ও আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ও অঙ্গীভূত এক হাজার ২৮৫টি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও শিক্ষক অনুপাত ১:২৬।

ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত ১:৩৪, সিটি ইউনিভার্সিটিতে ১:৭৫, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটিতে ১:৪১, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটিতে ১:৪৫, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১:৩৫, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ১:৪২, চট্টগ্রামের বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটিতে ১:৫০, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে ১:৩৯ এবং দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ে ১:৪২।

দেশের পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১:১৪, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১:২৮, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১:১৬, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১:১০ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ১:২১ এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত (১:৫১)।

দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু শিক্ষকের স্বল্পতা রয়েছে তা-ই নয়, ভালো শিক্ষকেরও অভাব রয়েছে।’

শিক্ষক নিয়োগ প্রসঙ্গে  সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘দেশে কতগুলো বিশ্ববিদ্যালয় প্রয়োজন,কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে কী পড়ানো উচিত, সব বিশ্ববিদ্যালয়ে সব বিষয় পড়ানোর প্রয়োজন আছে কিনা, তাও দেখা দরকার।’

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. একেএম নুরুন নবী বলেন, ‘শিক্ষক সংকট দূর করতে  পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। কিন্তু এই ক্ষমতা আমাদের  নেই। সরকার বাজেট দেবে,বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)  শিক্ষক নিয়োগের জন্য পদের অনুমোদন দেবে। তারপর এ সংকট দূর হবে।’

শিক্ষক স্বল্পতার বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকটি বিভাগে শিক্ষক সংকট রয়েছে। তবে দেশের অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েই শিক্ষক কম। আমরা শিক্ষার্থীরা চাই, দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-ছাত্র অনুপাত স্বাভাবিক থাকুক।  যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক স্বল্পতা রয়েছে, সেখানে ভালো শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হোক।’

Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।