ডেস্ক :: দশকের পর দশক ধরে চলছে পাঠ্যবইয়ে ভুল। সরকার আসে সরকার যায়, পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান আসেন, চেয়ারম্যান যান, কিন্তু বইয়ে ভুল কম-বেশি থেকেই যায়।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে কর্মরতরা সরকারি কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষক, একই সঙ্গে তারা বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাও। আর বই লেখা ও সম্পাদনার কাজে যুক্ত থাকেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, এমনকী সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যও। তবু ভুল এড়ানো যায় না।
আরো পড়ুন: আইডিয়াল কলেজের গভর্নিং বডির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ
পাঠ্যবইয়ের ভুল নিয়ে প্রতি বছরই অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ হয়ে থাকে। তবে এখন ক্ষমতায় মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ। আর পাঠ্যবই সম্পাদনা- পরিমার্জনাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে যারা ছিলেন, তারাও সারাদেশে কমবেশি পরিচিত।
কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, কেউ শিক্ষক, কেউবা সরকারি কলেজের শিক্ষক। অথচ তারাই দেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, ঐতিহ্য নিয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জন্য ভুল তথ্য লিখেছেন। আর এসব ভুল দেখে শিক্ষাবিদ ও সচেতনমহল যারপরনাই বিরক্ত।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নবম-দশম শ্রেণির বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিতি বইয়ের ১৭৮ পৃষ্ঠায় একুশে ফেব্রুয়ারির শোকগাথা ইতিহাস বিকৃত করে সেটাকে উৎসবের রঙ দেয়া হয়েছে। একই বইয়ের ১৭৯ পৃষ্ঠায় স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে বিভিন্ন বাহিনীর কুচকাওয়াজ হয় এমন তথ্য লেখা হয়েছে।
বাস্তবে বিভিন্ন বাহিনীর কুচকাওয়াজ হয় শুধু ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে। একই বইয়ের ১৯৪ পৃষ্ঠায় মুজিবনগর সরকার গঠনের প্রক্রিয়ার অনুচ্ছেদে মেহেরপুরের বৈদ্যনাথ তলাকে ইউনিয়ন বলা হয়েছে। অথচ মুক্তিযুদ্ধের সব বইয়ে লেখা আছে এটি একটি গ্রাম।
অষ্টম শ্রেণির ‘বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিতি’ বইয়ে পয়লা বৈশাখের ইংরেজি তারিখ লেখা হয়েছে ২৫ মার্চ ২০২০। যা হবে ১৪ এপ্রিল আর এখন ২০২২ খ্রিষ্টাব্দ। একই বইয়ের ১১৯ থেকে ২১ পৃষ্ঠার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর অনুচ্ছেদে মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত বহু কিছু সংরক্ষণের বর্ণনা থাকলেও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে স্বাধীনতার মহানায়কের কোনো তথ্য নেই। সাতই মার্চের কোনো তথ্য নেই।
সপ্তম শ্রেণির ‘বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিতি’ বইয়ের ১০৫ পৃষ্ঠায় শহীদ মিনার নামের রচনায় ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস উঠে এসেছে। বায়ান্নর ২৬ জানুয়ারি নিখিল পাকিস্তান মুসলিম লীগের প্রথম অধিবেশনে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন ঘোষণা করেন উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা।
আসলে প্রকৃত তথ্য হলো ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ এটি ঘোষণা করেন। খণ্ডিতভাবে লেখা হয়েছে ভাষার ইতিহাস। বইয়ের ১০৯ নম্বর পৃষ্ঠায় সুন্দরবন সম্পর্কে লেখা হয়েছে সুন্দরবনের ৬২ শতাংশ খুলনায়।
অথচ প্রকৃত তথ্য হলো এটি বাগেরহাট, খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলা নিয়ে ৬২ শতাংশ। ষষ্ঠ শ্রেণির ইংরেজি গ্রামার বইয়ের ৮৯ পাতায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ঠিকানা লেখা হয়েছে সেগুনবাগিচা। অথচ জাদুঘরটি কয়েক বছর আগে আগারগাঁওয়ে স্থানান্তর করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. মশিউজ্জামান জানান, এই বইগুলো ইতিমধ্যে সারাদেশের শিক্ষার্থীদের হাতে চলে গেছে। এটি এ বছর আর সংশোধনের আর কোন সুযোগ নেই। আর বইয়ের এই ভুল সংশোধনের জন্য কোনো বরাদ্দও নেই।