বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষক পদে নিয়োগে জারি করা পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করে কয়েকজন জাল সনদধারী প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। চূড়ান্ত সুপারিশের আগে প্রার্থীদের সনদ যাচাই-বাছাইয়ে তা ধরা পড়েছে। যদিও নির্বাচিত হলেও তারা চূড়ান্ত সুপারিশ পাবেন না বলে জানিয়েছেন বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) কর্মকর্তারা।
জানা গেছে, নতুন ৯৬ হাজারের বেশি শিক্ষক নিয়োগের জন্য জারি করা পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তিতে নির্বাচিত ২২ হাজার প্রার্থীর কাছ থেকে সনদ সংগ্রহ করে যাচাই-বাছাই করছে এনটিআরসিএ। যাচাই-বাছাইয়ে নির্বাচিত কয়েকজন শিক্ষক নিবন্ধনের জাল সনদধারী চিহ্নিত হয়েছেন। তবে, নির্বাচিত হওয়ার তালিকায় জাল সনদধারীদের সংখ্যা কত— তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
আরো পড়ুন: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কবে খুলবে জানালেন উপদেষ্টা রিজওয়ানা
জানতে চাইলে এনটিআরসিএর শিক্ষাতত্ত্ব ও শিক্ষামান শাখা নিয়োগ সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনা করা এক কর্মকর্তা বলেন, পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তিতে নির্বাচিত প্রার্থীদের মধ্যে থেকেও কয়েকজনকে পাওয়া গেছে; যারা জাল সনদধারী। তারা রোল নম্বর দিয়ে আবেদন করে নির্বাচিত হলেও জাল সনদের বিষয়টি সনদ যাচাইয়ে ধরা পড়ছে।
কতজন জাল সনদধারী শনাক্ত হয়েছেন?— এমন প্রশ্নের জবাবে ওই কর্মকর্তা বলেন, কয়েকটি টিম সনদ যাচাইয়ের কাজ করছে। চূড়ান্ত রিপোর্ট এখনও প্রস্তুত না হওয়ায় সংখ্যা বলা সম্ভব হচ্ছে না। তবে, জাল সনদ বা অন্যের রোল নম্বর ব্যবহার করে আবেদন করে কেউ নির্বাচিত হলে তারা চূড়ান্ত সুপারিশ পাবেন না।
জাল সনদেও কীভাবে নিয়োগের জন্য তাদের নির্বাচিত করা হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাধারণত কোনো একজন নিবন্ধিত প্রার্থীর রোল নম্বর ও তিনি কোন ব্যাচে নিবন্ধিত— এসব তথ্য সংগ্রহ করে অসৎ ব্যক্তিরা জাল সনদ তৈরি করেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, প্রার্থীর নামও একই থাকে। তবে বাবা-মায়ের নাম ও অন্যান্য তথ্য যাচাই করে আমরা নিশ্চিত হতে পারি, কোন সনদটি জাল ও কোনটি সঠিক।
কেউ যখন শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ কোনো প্রার্থীর সনদ জাল করে আবেদন করেন; তখন এনটিআরসিএ’র সার্ভারে উত্তীর্ণ প্রার্থীর রোল নম্বরটিই শনাক্ত হয়। তথ্যে মিল থাকায় হয়তো আসল প্রার্থীই আবেদন করেছেন বলে সার্ভার রিড করে। ফলে কম্পিউটার সিস্টেমও বিভ্রান্ত হয়ে তাদের নির্বাচিত করে। তবে পরে যাচাই-বাছাইয়ে অন্যান্য তথ্য দেখে জাল সনদের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়।
এনটিআরসিএর কর্মকর্তারা বলছেন, জাল সনদের বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করা হয়েছে। কোনো প্রার্থী জাল সনদ নিয়ে শিক্ষকতা করতে পারবেন না। সে সুযোগই নেই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কারো সনদ সম্পর্কে সন্দেহ থাকলে প্রতিষ্ঠান প্রধানের মাধ্যমে তা এনটিআরসিএ কার্যালয়ে পাঠাতে হবে। কোনো শিক্ষক জাল সনদধারী বলে শনাক্ত হলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রধানকে বলা হয়।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে এনটিআরসিএর সচিব মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, জাল সনদধারী কয়েকজন প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন বলে জানতে পারছি। যাচাই-বাছাইয়ে তারা ধরা পড়ছেন বলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। চূড়ান্ত রিপোর্ট না পাওয়ায় এখনও মোট কতজন শিক্ষক জাল সনদ নিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন- তা বলা যাচ্ছে না। তবে জাল সনদধারী প্রার্থীরা চূড়ান্ত সুপারিশ পাবেন না।
এর আগে চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতেও জাল সনদধারী ১২৩ জন প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছিলেন। যাচাই-বাছাইয়ে ধরা পড়ায় তাদের চূড়ান্ত সুপারিশ করা হয়নি।