‘নীরব এলাকা’ বিমানবন্দরে সরবেই বাজছে হর্ন

Image

রোববার দুপুর ২টা। রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকার সামনে আড়াআড়ি দাঁড়িয়ে যাত্রী তুলছিল কয়েকটি বাস, সেই সঙ্গে অবিরাম বেজে চলছিল হর্ন। যদিও এলাকাটি সম্প্রতি ঘোষণা করা ‘নীরব এলাকা’।

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সংলগ্ন এলাকা ও এর উত্তর-দক্ষিণে দেড় কিলোমিটার (স্কলাস্টিকা স্কুল থেকে হোটেল লো মেরিডিয়ান পর্যন্ত) এলাকাকে সম্প্রতি শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা, ২০০৬ এর বিধি-৪ অনুযায়ী ১ অক্টোবর থেকে ‘নীরব এলাকা’ ঘোষণা করা হয়।

অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের নির্দেশনা বাস্তবায়নে উদ্যোগটি নিয়েছে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক), ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি), পরিবেশ অধিদপ্তর, সড়ক বিভাগ ও পরিবহন মালিক সমিতি।

তবে ছয় দিন পর রোববার ওই এলাকায় গিয়ে এ নিয়ম মানতে আগ্রহ দেখা যায়নি। সেখানে দায়িত্বরত স্বেচ্ছাসেবীরা বললেন, সবচেয়ে বেশি বাজান প্রাইভেট কারের চালকরা।

স্থানীয়রা বলছেন, নীরব এলাকা ঘোষণার পর শব্দ দূষণের দিক দিয়ে উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি।

উত্তরার স্কলাস্টিকা পয়েন্ট এলাকার ফুটপাতের ওপর একটি স্টিলের খুঁটিতে সাইবোর্ডে লেখা ‘নীরব এলাকা শুরু: ঢাকা সড়ক বিভাগ’। দক্ষিণে লো মেরিডিয়ান পয়েন্টের সামনে ‘নীরব এলাকা’ সম্বলিত সাইনবোর্ড রয়েছে।

চালকদের দাবি, সড়কে হর্ন ছাড়া যানবাহন চালানো কঠিন। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, সড়কে পথচারীরা ‘শৃঙ্খলা মানেন না’, ফুটব্রিজ ব্যবহার না করে যত্রতত্র সড়ক পার হন তারা। এমন পরিস্থিতিতে হর্ন না দিলে দুর্ঘটনা আরও বাড়বে।

তবে এই সড়কে ফুটব্রিজ ব্যবহার ছাড়া পথচারীর পক্ষে রাস্তা পারাপার কঠিন।

লো মেরিডিয়ানের সামনে হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে দায়িত্ব পালন করছিলেন গ্রিন ভয়েস নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্য মো. মোস্তাফিজুর রহমান।

সরকারি তিতুমীর কলেজের সমাজকর্ম বিভাগের এই শিক্ষার্থী বলেন, “আমরা তো আসলে জানিই না যে হর্ন বাজানো ‘অপরাধ’। এটা আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। বাসের চালকরা কিছুটা বুঝেছেন; কিন্তু প্রাইভেট কারের চালকরা বেশি বাজান। এজন্য আমরা আমরা আপাতত সচেতন করছি এবং মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া লিফলেট বিতরণ করছি। মঙ্গলবার থেকে আইন প্রয়োগ শুরু হবে।”

তার সঙ্গে থাকা একই কলেজের একই বিভাগের শিক্ষার্থী মো. শিমুল বলেন, ১ থেকে ৭ অক্টোবর পর্যন্ত স্কলাস্টিকা, বিমানবন্দর ও লো মেরিডিয়ান এলাকায় মোট ১০০ স্বেচ্ছাসেবী দায়িত্ব পালন করেছেন।

বিমানবন্দর এলাকায় দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, “আমরাও সচেতন করার জন্য লিফলেট দিয়েছি। (শনিবার) মোবাইল কোর্টও পরিচালনা করা হয়েছে। বাসের যারা মালিকপক্ষ আছেন, সবাইকে ডেকে এটা বলে দিচ্ছি। আমরা সাধ্য অনুযায়ী চেষ্টা করছি।”

‘হর্ন না বাজালে তো বিপদ’

বিমানবন্দর এলাকায় গাজীপুর থেকে গুলিস্তানগামী ‘আজমেরী গ্লোরী’ পরিবহনের চালক মো. রিয়াদ আপনমনে হর্ন বাজাচ্ছিলেন। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “যাত্রীরা যেখান-সেখান দিয়ে রাস্তা পার হয়। হুট করে সামনে চলে আসে। হর্ন না বাজালে তো বিপদ ঘটবে। সবাই সচেতন না হলে তো হবে না।”

প্রজাপতি পরিবহনের চালক আফজাল হোসেন বলেন, “বিমানবন্দর মোড়ে স্টেশনের প্রবেশপথে প্রচুর যাত্রী-পথচারী সড়ক পার হন। এখানের ফুটব্রিজটির চলন্ত সিঁড়ি অনেকদিন ধরেই নষ্ট। ফলে যাত্রীরা প্রায়ই রাস্তার মাঝ দিয়ে দৌড় দেন। ফলে এ পথে হর্ন বাজাতে হয়।”

মোটরসাইকেলে রাইড শেয়ার করেন ফজলুল ইসলাম। অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বললেন, “এই আইন একদিনে মানাইতে পারবেন না। অনেক দিন ধরেই মানুষ হর্ন বাজায়ে অভ্যস্ত। সেটা তো আর রাতারাতি পরিবর্তন হবে না। তবে আমার জায়গা থেকে আমি সতর্ক থাকতে চেষ্টা করব।”

Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।