এনটিআরসিতে হয়রানিতে হাজার হাজার প্রার্থী

ডেস্ক:%e0%a7%a7দেশে বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি ও হয়রানি বন্ধে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা চালু করে সরকার। আর শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষাসহ যাবতীয় বিষয় দেখভাল করে। কিন্তু সেবার বদলে এনটিআরসি থেকে হয়রানির শিকার হচ্ছেন হাজার হাজার প্রার্থী ও শিক্ষক এ অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জানা যায়, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিন শত শত চাকরি প্রত্যাশী বিভিন্ন ধরনের তথ্য জানতে অফিসটিতে ভিড় করলেও কেউ ভেতরে প্রবেশ করার অনুমতি পান না। অফিসের গেট থেকেই তাদের ফিরে যেতে হয়।

এ খবর জানার পর মঙ্গলবার রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় অবস্থিত এনটিআরসিএ অফিসে সাংবাদিকরা ছুটে গেলে তারাও প্রবেশ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। এমনকি প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান কথাও বলেননি। উল্টো পুলিশ ডেকে হয়রানি করার চেষ্টা করেন।

এ সময় গাজীপুর থেকে আসা মো. রুহুল আমিন সাংবাদিকদের অভিযোগ করে বলেন, ‘১২তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় প্রভাষক পদে ৮২ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছি। নিজ উপজেলার কোনও কলেজে আমার বিষয়ে প্রভাষক পদ শূন্য নেই। এখন আমি অন্য কলেজে নিয়োগ পাবো কিনা তা জানার জন্য এসেছিলাম। সকাল থেকে অপেক্ষা করেও ভেতরে ঢুকতে পারিনি’।

শরীয়তপুর থেকে এসেছিলেন নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘এক মাস আগে নদীভাঙনে আমাদের বাড়িঘর পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। এখন এলাকা ছেড়ে ফরিদপুর বসবাস করছি। শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার একটি কলেজে প্রভাষক পদে নিয়োগের জন্য আবেদন করেছি। নিয়ম অনুযায়ী নিজ উপজেলার প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। নদীভাঙনের কারণে ঠিকানা পরিবর্তন করা যাবে কিনা তা জানতে এসেছিলাম। দুই ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে অনেক অনুরোধ করেও অফিসের ভেতরে প্রবেশ করতে পারিনি’।

টাঙ্গাইল থেকে আসা মাহমুদুল হাসান অভিযোগ করেন, ‘১৩তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার ফল কবে দেবে, তা জানতে এসেছিলাম। ভেতরে ঢোকা তো দূরের কথা, লিফট থেকে নামার পর দাঁড়নোর জায়গাও পেলাম না। বাধ্য হয়ে চলে যেতে হচ্ছে। অথচ জামালপুর-৪ আসনের এমপির এপিএস পরিচয় দেওয়ার পর একজনকে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়েছে’।

রোকসানা পারভীন নামে একজন অভিযোগ করেন, ‘প্রভাষক পদে আবেদন করার পর আমার বিয়ে হয়েছে। আবেদন সংশোধন করে স্বামীর ঠিকানা দেওয়া যাবে কিনা জানতে এসেছিলাম। অনেক অনুরোধ করেও অফিসের ভেতরে ঢুকতে দেওয়ানি। অথচ পিএসসিতে বিসিএসের আবেদন সংশোধনের সুযোগ আছে।’

সনদ তুলতে এসেছিলেন বিধান। তিনিও কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করে ভেতরে ঢুকতে না পেরে সনদ ছাড়াই ফিরে যান।

ভুক্তভোগীরা সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করলে এ প্রতিবেদকসহ কয়েকজন সাংবাদিক ছুটে যান নায়েম ক্যাম্পাসের একটি ভবনের পাঁচতলায় অস্থায়ী অফিসে। লিফট থেকে নামার জায়গায়ও ফাঁকা ছিল না। লিফটের এক ফুট সামনেই কলাপসিবল গেট দিয়ে অফিসে প্রবেশের পথ আটকে রাখা হয়েছে। গেটে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে বড় বড় ৪টি তালা। অফিসের নোটিশ বোর্ডের ও তথ্যকেন্দ্র গেটের ভেতরে। কারও পক্ষে তথ্য জানার সুযোগ নেই।

সাংবাদিকরা নিজেদের পরিচয় দিয়ে ভেতরে প্রবেশের অনুমতি চাইলে গেটে দাঁড়িয়ে থাকা দারোয়ান তসলিম বলেন, ‘অফিসের ভেতরে প্রবেশ নিষেধ। চেয়ারম্যান স্যার দেড় বছর ধরে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন।’

সাংবাদিকরা ভিজিটিং কার্ড চেয়ারম্যানকে দেওয়ার জন্য বললে তিনি কয়েকজন কর্মকর্তাকে ডেকে আনেন। তারাও এসে বলেন, ‘ভেতরে ঢোকা যাবে না। চেয়ারম্যান স্যার কারও সঙ্গে দেখা করেন না।’ ভেতরে ঢোকা নিয়ে একপর্যায় সাংবাদিকদের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়েন তারা। পরে তারা ভেতরে গিয়ে কিছু সময় পর ফিরে এসে বলেন, ‘এবার দেখবেন মজা!’

এ ঘটনার কয়েক মিনিট পরেই নিউমার্কেট থানার পুলিশের এসআই আবুল এসে হাজির হন ঘটনাস্থলে। তিনি ভেতরে ঢুকে ফিরে এসে বলেন, ‘চেয়ারম্যান স্যার কারও সঙ্গে দেখা করবেননা। আপনারা এখান থেকে চলে যান।’ এসময় তিনিও সাংবাদিকদের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়েন।

এ ব্যাপারে এনটিআরসিএ’র চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) এএমএম আজাহারের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনিও কথা বলতে রাজি হননি।

Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।