নিজস্ব প্রতিবেদক,১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২:
২০২২ সালের সমন্বিত অনলাইন বদলি নির্দেশিকার ‘ফাঁদে’ আটকে যাচ্ছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের বদলি। প্রথম দিন ৬ হাজারের মতো বদলির আবেদন জমা পড়লেও বেশিরভাগ শিক্ষকই আবেদন করতে পারেননি। শিক্ষকরা বলছেন— অনলাইনে বদলি নীতিমালার যে শর্ত দেওয়া হয়েছে, তাতে বেশিরভাগ শিক্ষকেরই আবেদন করার সুযোগ নেই। নামমাত্র কিছু শিক্ষক বদলির আবেদন করতে পেরেছেন এবং পারবেন। নির্দেশিকার নিয়মের ‘ফাঁদে’ আটকে যাচ্ছেন প্রায় সব শিক্ষক।
পাইলটিংয়ের পর বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) থেকে অনলাইনে আন্ত-উপজেলায় (উপজেলার মধ্যে এক বিদ্যালয় থেকে অন্য বিদ্যালয়ে) বদলি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এরপর শিক্ষকরা বদলি হতে চাওয়া বিদ্যালয়ে আবেদন শুরু করেন। তবে বৃহস্পতিবার একদিনে ৬ হাজারের মতো সহকারী শিক্ষক আবেদন করতে পেরেছেন। বদলি হতে ইচ্ছুক হাজার হাজার সহকারী শিক্ষক আবেদন করতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেছেন।
বিগত সময়ে তদবিরে রাজধানীসহ মহানগর ও সুবিধাজনক স্থানে শিক্ষকরা পোস্টিং নেওয়ায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। এছাড়া তদবিরের মাধ্যমে সংযুক্তি নিয়েও অনেক শিক্ষক সুবিধাজনক স্থানে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে কর্মরত রয়েছেন। এছাড়া শূন্য পদে বদলির সুযোগ নেই। কারণ, এসব শূন্য পদে সম্প্রতি ৪৫ হাজার শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়ায় রয়েছেন।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নিয়মের বাইরে সফটওয়ারে বদলির আবেদন করার সুযোগ নেই। তবে প্রশাসনিকভাবে বদলির সুযোগ রয়েছে এখনও। মিউচ্যুয়াল বদলির সুযোগ রয়েছে, থাকবে সব সময়। নীতিমালা মেনেই বদলি করা হবে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিদ্যালয়) মহিবুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘একটি বিদ্যালয়ে চার জন শিক্ষক বা তার কম থাকলে নির্দেশিকা অনুযায়ী, ওই বিদ্যালয় থেকে বদলির সুযোগ পাবেন না কোনও শিক্ষক। এছাড়া একজন শিক্ষককের বিপরীতে ৪০ জন শিক্ষার্থীর বেশি থাকলে, সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয় থেকেও বদলি হতে পাবেন না কোনও শিক্ষক। এটা করা না হলে সুবিধাজনক জায়গায় বদলি হয়ে যাবেন শিক্ষকরা। এতে সমফস্বলের কিছু বিদ্যালয়ে শিক্ষক কমে যাবে। তাহলে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া নিশ্চিত হবে কীভাবে। তবে শূন্য পদে শিক্ষক নিয়োগের কাজ শেষ হলে তখন এই সমস্যা থাকবে না। সংযুক্তি নিয়ে কোথাও বেশি শিক্ষক কর্মরত থাকলে প্রাশনিকভাবে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের বদলি করা হবে।’
যে নিয়মের কারণে আটকে যাচ্ছেন শিক্ষকরা
সমন্বিত বদলি নির্দেশিকার ৩ দশমিক ৩ ধারায় বলা হয়েছে— যেসব বিদ্যালয়ে চার বা তার কম শিক্ষক কর্মরত আছেন, কিংবা শিক্ষার্থীর অনুপাত ১:৪০ এর বেশি রয়েছে, সেসব বিদ্যালয় থেকে সাধারণভাবে শিক্ষক বদলি করা যাবে না। নীতিমালার এই অংশ পূরণ না করার ফলে বেশিরভাগ শিক্ষক আবেদন করতে পারছেন না। প্রথম দিন আবেদন না করতে পেরে শতাধিক শিক্ষক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি তুলে ধরেছেন।
সফটওয়ারে ত্রুটির অভিযোগ
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বদলি হতে ইচ্ছুক শিক্ষকরা বলছেন— নীতিমালার ৩.৩ ধারায় ‘অথবা’ দিয়ে দুটি শর্ত দেওয়া হয়েছে। এর যেকোনও একটি পূরণ করলেই আবেদন করতে পারার কথা। কিন্তু দেখা গেছে, দুটি শর্ত পূরণ না হলে আবেদন নিচ্ছে না। এটি নীতিমালার কারণে নয়। সফটওয়ার ত্রুটির কারণে।
সহকারী প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ বলেন, ‘নিয়োগ সাপেক্ষে বদলি এবং অনলাইন বদলি চালু করলে শিক্ষকরা অনেকে আবেদন করার সুযোগ পাবেন। মিউচ্যুয়াল বদলির সুযোগ দিলে এই সমস্যা থাকবে না। আর সফটওয়ারে ত্রুটি থাকলে তা দ্রুত সংশোধন করা উচিত।’
প্রশাসনিক বদলি
বদলি নির্দেশিকায় প্রশাসনিক বদলির শর্তে বলা হয়েছে— আচরণবিধি লঙ্ঘন বা শৃঙ্খলাজনিত কারণে প্রশাসনিক বদলি করা যাবে। তবে সেক্ষেত্রে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় উপপরিচালক প্রশাসনিক বদলির জন্য মহাপরিচালক বরাবর সুপারিশ পাঠাবেন। প্রশাসনিক কারণে বদলি হওয়ার তিন বছরের মধ্যে কোনও শিক্ষক পুনরায় বদলির জন্য আবেদন করতে পারবেন না। একই উপজেলার বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে শ্রেণিকক্ষ বা শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সংখ্যার অনুপাতে শিক্ষকদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করার প্রযোজনে মহাপরিচালক বিদ্যালয়ভিত্তিক শিক্ষক সমন্বয় বদলির আদেশ জারি করবেন।