ডেস্ক | :
নিউইয়র্ক নগরের স্কুলগুলোয় শিক্ষার্থী বহিষ্কারের হার আগের চেয়ে ব্যাপক মাত্রায় বেড়েছে। সাময়িক ও স্থায়ী বহিষ্কার মিলিয়ে গত বছরের শেষার্ধে শহরটির স্কুলগুলোয় শিক্ষার্থী বহিষ্কারের হার আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২১ শতাংশ বেড়েছে। গত ৩০ মার্চ শহরের শিক্ষা বিভাগ প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
গত বছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে নিউইয়র্ক শহরের স্কুলগুলো থেকে মোট ১৪ হাজার ৫০২ জন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়। আগের বছরের একই সময়ে এই সংখ্যা ছিল ১২ হাজার ৮ জন। স্কুলের কর্মকর্তা, কর্মচারীর সঙ্গে অসদাচরণ, সহপাঠীদের ওপর হামলা, স্কুলের সম্পদের ক্ষতিসাধন, স্কুল ক্যাম্পাসে অস্ত্র আনাসহ বিভিন্ন অভিযোগে এসব শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়।
নিউইয়র্ক ডেইলির প্রতিবেদনমতে, নিউইয়র্কের স্কুলগুলোয় বিভিন্ন অপকর্মের কারণে শিক্ষার্থী বহিষ্কারের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় মেয়র বিল ডি ব্লাজিও ‘পুনর্বাসনমূলক বিচার’ শীর্ষক একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছিলেন। এর মাধ্যমে বহিষ্কারের মতো ঘটনা কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হয়। এর ফলও পাওয়া যায়। ব্যবস্থাটি চালুর পর ২০১৬ সালে বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষার্থী বহিষ্কারের ঘটনা কমে আসে। কিন্তু গত বছর এটি আবারও বেড়ে উচ্চমাত্রায় গিয়ে ঠেকেছে।
‘পুনর্বাসনমূলক বিচার’ ব্যবস্থা চালুর পরও শিক্ষার্থী বহিষ্কারের এই পরিসংখ্যান নিউইয়র্ক নগরের স্কুলগুলোয় অপরাধ বেড়ে যাওয়ার প্রমাণ বহন করে। এর আগে নিউইয়র্ক নগরের পুলিশ বিভাগও (এনওয়াইপিডি) এমন তথ্যই দিয়েছিল।
অভিভাবকেরা এই পরিস্থিতিকে ‘উদ্বেগজনক’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। নিউইয়র্ক নগরের অভিভাবক ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট মোনা ডেভিডস বলেন, ‘এটা আশঙ্কাজনক কিন্তু বিস্ময়কর নয়। কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ ও আমরা অভিভাবকেরা বহু আগে থেকেই স্কুলগুলোতে অস্ত্রের উপস্থিতি ও সহিংসতা বাড়ছে বলে সতর্ক করে আসছি। কিন্তু আমাদের কথায় কোনো গুরুত্বই দেওয়া হয়নি।’
৩০ মার্চ প্রকাশিত প্রতিবেদনে চলতি বছরের প্রথম তিন মাসের হিসাবও তুলে ধরা হয়। এতে দেখা যায়, আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বিভিন্ন স্কুলে সাময়িক ও স্থায়ী বহিষ্কারের লেখ ঊর্ধ্বমুখীই রয়েছে। গত বছরের ৭ সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের ২৩ মার্চ পর্যন্ত শিক্ষাবর্ষের প্রথম ১২১ দিনে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় শিক্ষার্থী বহিষ্কারের হার বেড়েছে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীর সংখ্যা যেখানে ছিল ২৩ হাজার ৮২৫, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে এসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫ হাজার ১০৬ জনে।
বিষয়টি মোকাবিলায় বিভিন্ন কার্যক্রমের কথা বলে এলেও শিক্ষা বিভাগ এখনো এ ক্ষেত্রে তেমন কোনো উন্নতির প্রমাণ রাখতে পারেনি। গত জানুয়ারি থেকেই শিক্ষা বিভাগ স্কুলশিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রশিক্ষণের কথা বলে আসছে। সেই সময় থেকেই সংকট মোকাবিলায় করণীয় বিষয়ে স্কুল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু এসব প্রশিক্ষণ এখন পর্যন্ত কোনো ফল এনে দিতে পারেনি।
নিউইয়র্ক নগরের স্কুলের উপাচার্য এলিজাবেথ রোজ বলেন, ‘স্কুলগুলো নিরাপদ হওয়া উচিত। আমরা নিয়মিতভাবে স্কুলগুলো পর্যবেক্ষণ করছি। একই সঙ্গে স্কুলশিক্ষার্থীদের বহিষ্কার–সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্যও পর্যালোচনা করছি, যাতে করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়। এটি আমাদের অগ্রাধিকার তালিকার শীর্ষে রয়েছে। সংকটের কারণ অনুসন্ধানের পাশাপাশি আমরা সার্বক্ষণিক সতর্কাবস্থায় রয়েছি। একই সঙ্গে সংকট মোকাবিলায় প্রতিটি স্কুলে প্রয়োজনীয় সহায়তাও দেওয়া হচ্ছে।’
এর আগে গত ২ মার্চ এনওয়াইপিডির প্রকাশিত প্রতিবেদনেও নিউইয়র্কের স্কুলগুলোয় অপরাধ বৃদ্ধির পরিসংখ্যান উঠে আসে। ওই প্রতিবেদনমতে, বড় ধরনের অপরাধ ও এর কারণে গ্রেপ্তার—দুই–ই বেড়েছে ভীষণভাবে। নিউইয়র্কের স্কুলগুলোর শিক্ষার্থীদের এ ধরনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত হওয়ার ঘটনা গত বছরের চতুর্থ প্রান্তিকে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এই সময়ে বিভিন্ন স্কুলে সংঘটিত অপরাধের কারণে ৩৯৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর আগের বছরের একই সময়ে এই গ্রেফতার সংখ্যা ছিল ৩৭৩।