নবজাতকের স্নান নিয়ে ভুল ধারণা

ডা. অমৃত লাল হালদার:
‘ওর বয়স কত? স্নান করিয়েছেন?’- শরীর অপরিচ্ছন্ন দেখে প্রশ্ন করলাম। ‘কী বলেন স্যার!’ বলে তারা আকাশ থেকে পড়লেন। ‘মাত্র সাতদিন বয়স। নাভিও পরে নাই এখনো!’

হ্যাঁ। শিশুর স্নান নিয়ে আমাদের দেশে প্রচলিত আছে নানা ধরনের ভুল ধারণা ও কুসংস্কার। কয়েকটি জেনে নেওয়া যাক।

নাভি পরার আগে স্নান নিয়ে কুসংস্কার রয়েছে। এর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। স্বাভাবিক ওজনের একটি সুস্থ ও সঠিক ওজনের শিশুকে (ওজন ২.৫ থেকে ৪ কেজি) জন্মের তিনদিন (৭২ ঘণ্টা) পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই স্নান করানো উচিত। নাভি না পড়লেও করানো যায়। তবে খেয়াল রাখুন, নাভি যেন ভেজা না থাকে। সুতি কাপড় বা টিস্যু দিয়ে ভালোভাবে শুকিয়ে নিন। তবে কম ওজনের অসুস্থ দুর্বল শিশুর দেহের তাপমাত্রা অনেক সময় বেশি কমে যেতে পারে বলে দেরি কিছুটা করা যেতে পারে। তা না হলে স্বাভাবিকভাবে একটি নবজাতক শিশুকে পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত করতে তিনদিনের বেশি দেরি করবেন না। বরং গোসলটাই জরুরি।

ঠান্ডা লেগে যাওয়া বিষয়েও কুসংস্কার রয়েছে।

নিয়মিত ফোটানো হালকা গরম পানিতে স্নান করালে শিশুর ঠা-া লাগার তেমন কোনো সুযোগ নেই। গরম ও আর্দ্র আবহাওয়ায় স্নান না করালেই বরং শিশু অস্বস্তি বোধ করে, বারবার ঘেমে যায়। এই ঘাম বসে গিয়ে ঠা-া লাগার আশঙ্কা থাকে। এ ছাড়া অপরিচ্ছন্ন ও নোংরা থাকলে চর্মরোগ বা ছত্রাক সংক্রমণ হতে পারে। তাই যে কোনো আবহাওয়ায় ছোট-বড় সব শিশুকে প্রতিদিন হালকা গরম পানিতে স্নান করানো দরকার। বৃষ্টির দিন, মেঘলা দিন বা আবহাওয়া ঠা-া থাকলে একান্ত না করাতে চাইলে হালকা গরম পানিতে আরামদায়ক সুতি কাপড় ভিজিয়ে শরীর মুছে দিন। স্নানের সময় ফ্যান বন্ধ রাখুন। দ্রুত শুকনো কাপড় বা তোয়ালে দিয়ে শরীর মুছে জামাকাপড় পরিয়ে দিন। এতে ঠা-া লাগবে না। মাথা ও চুলে যেন পানি জমে না থাকে, সেদিকেও লক্ষ্য রাখুন।

ছোট-বড় কারোর স্নানের পানিতে ডেটল, স্যাভলন, সেনিটাইজার বা অ্যান্টিসেপটিক দ্রবণ ব্যবহার করা উচিত নয়। অ্যান্টিসেপটিক দ্রবণ বা সাবান ত্বকের উপকারী জীবাণু বা ব্যাকটেরিয়াও ধ্বংস করে। ফলে ত্বকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ব্যাহত হয় ও ক্ষতিকর জীবাণুর সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়ে। তা ছাড়া এগুলো বেশ কড়া রাসায়নিক, যা ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। এমনিতে নবজাতক শিশুরা বাইরের ধুলা-ময়লার সংস্পর্শে আসে না, তাই রোজ সাবান দেওয়ারও দরকার নেই। সপ্তাহে এক বা দুদিন সাবান ও শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন।

লেখক : শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ

আবাসিক চিকিৎসক, শিশু ও নবজাতক বিভাগ,

বারডেম জেনারেল হাসপাতাল-২

(মহিলা ও শিশু হাসপাতাল), সেগুনবাগিচা, ঢাকা। ০১৭১৬৭৯৫৫২৫

Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।