অবশেষে চূড়ান্ত হচ্ছে নতুন শিক্ষাক্রমে মূল্যায়ন পদ্ধতি। এতে বার্ষিক ও অর্ধবার্ষিক (ষান্মাষিক) মূল্যায়ন প্রক্রিয়া সাতটি ধাপ বা স্কেলে নির্ধারণ করা হতে পারে। আর ২০২৬ খ্রিষ্টাব্দ থেকে এসএসসি পরীক্ষা হতে পারে ডিসেম্বরে। এভাবেই ‘প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল’ তৈরি করছে শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।
যে সাতটি স্কেলে মূল্যায়ন পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে সেগুলো হলো-প্রারম্ভিক (Elementary), বিকাশমান (Developing), অনুসন্ধানী (Exploring), সক্রিয় (Activating), অগ্রগামী (Advancing), অর্জনমুখী (Achieving) ও অনন্য (Upgrading)।
এই সাত স্কেলের বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চূড়ান্ত মূল্যায়ন সনদ বা ট্রান্সক্রিপ্টে মূল্যায়নের সাত পর্যায়ের স্কেলে যোগ্যতা ও পারদর্শিতার সূচকের বিষয়টি অভিভাবক ও অংশীজনদের অবহিত করার ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।
আরো পড়ুন: উপবৃত্তি পাচ্ছেন কারিগরির ৭৭ হাজার শিক্ষার্থী
এ বিষয়ে এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম বলেন, ২৬ মে মূল্যায়ন কমিটির আরেকটি সভা হবে। সেখানে অনুমোদনের পর সেটি আমরা এনসিসি সভায় অনুমোদনের জন্য উঠাবো। এটি আনুষ্ঠানিকতা।
শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, চলতি মাসেই নতুন শিক্ষাক্রমের মূল্যায়ন পদ্ধতি চূড়ান্ত করার কথা বলা হয়েছে। সেই লক্ষ্যে ৩১ মে এর আগেই এনসিসি’র সভা আহ্বান করার উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড। এ বোর্ডে অনুমোদনের পর নতুন শিক্ষাক্রমের মূল্যায়ন প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করবে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড।
নতুন শিক্ষাক্রমে জিপিএ (গ্রেড পয়েন্ট এভারেজ) এবং নম্বরের মাধ্যমে শিক্ষার্থী মূল্যায়ন পদ্ধতি উঠে যাচ্ছে। সেখানে একজন শিক্ষার্থীর অগ্রগতি বোঝাতে নম্বর বা গ্রেডের পরিবর্তে ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ ও বৃত্ত ব্যবহার করার কথা বলা হয়েছে। ত্রিভুজ হচ্ছে সবচেয়ে দক্ষ বা ভালো, বৃত্ত হচ্ছে মোটামুটি ভালো এবং চতুর্ভুজ হলো- উন্নতি প্রয়োজন।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, মূল্যায়ন খুব দ্রুতসময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন শুরু হবে। আমরা কিছুদিনের মধ্যেই এনসিটিবি থেকে মূল্যায়নের ম্যানুয়াল পেয়ে যাবো। সেটি পেলেই আমাদের কার্যক্রম শুরু হয়ে যাবে।
মূল্যায়নের ওপর সারা দেশের শিক্ষকদের বিভিন্ন স্তরে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, সেটার, মডারেটর, পরীক্ষক, প্রধান পরীক্ষক, ইনভিজিলেটর….সমস্ত টায়ারে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।
নতুন শিক্ষাক্রমে (কারিকুলাম) প্রথমবার এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ২০২৬ খ্রিষ্টাব্দে। এ পরীক্ষার নাম ও মূল্যায়ন পদ্ধতির ধরন ঠিক করতে গত ৫ মার্চ ১৪ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ কমিটির সদস্যরা এ পরীক্ষার নাম ‘মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি)’ রাখার পক্ষে মতামত দিয়েছেন। তবে প্রচলিত রীতি অনুয়ায়ী বছরে শুরুর দিকে না হয়ে এ পরীক্ষা নেয়া হবে বছরের শেষে, ডিসেম্বরে।
প্রসঙ্গত, ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দ থেকে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষা হয়ে আসছে। নতুন শিক্ষাক্রমের বাস্তবায়ন শুরুর পর এই পরীক্ষা থাকবে নাকি উঠে যাবে সে নিয়ে নানা আলোচনা চলে আসছে। এবার সে আলোচনার ইতি ঘটবে।
এর আগে ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদান শুরু হয়। চলতি শিক্ষাবর্ষে দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু হয়। ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দে পঞ্চম ও দশম শ্রেণী, ২০২৬ খ্রিষ্টাব্দে একাদশ ও ২০২৭ খ্রিষ্টাব্দে দ্বাদশ শ্রেণীতে এই শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের কথা রয়েছে। আর এবার ৮ম ও ৯ম শ্রেণীতে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা ২০২৬ খ্রিষ্টাব্দে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবেন।