নিজস্ব প্রতিবেদক,১১ সেপ্টেম্বর:
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরে (ডিপিই) গত এক বছরে দুজন মহাপরিচালক (ডিজি) পরিবর্তন হয়েছেন। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ২০১৯ সালের ২০ জানুয়ারি ভারপ্রাপ্ত সচিব হিসেবে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয় মো. আবু হেনা মোস্তফা কামালকে। এরপর মহাপরিচালক পদে ওই বছরের ৩০ জানুয়ারি নিয়োগ পান (অতিরিক্ত সচিব) এ এফ এম মনজুর কাদির। দায়িত্ব পালন শেষে গত ৩১ ডিসেম্বর অবসরে যান তিনি। এক বছরের কম সময় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এরপর গত ১২ জানুয়ারি মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান অতিরিক্ত সচিব মো. ফসিউল্লাহ্। পরদিন কাজে যোগ দেন। বছর পূর্ণ না হতেই তিনিও অবসরে যাচ্ছেন। তার শেষ কর্মদিবস আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর।
এই পরিস্থিতিতে শিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, মহাপরিচালকরা কাজ বুঝে নিতে না নিতেই তাদের বিদায় নিতে হয়। ফলে সমস্যা ও সংকট চলে বছরের পর বছর। এই পরিস্থিতির উত্তরণ চান শিক্ষক-কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, চুক্তিতে হলেও একজন ব্যক্তিকে মহাপরিচালক হিসেবে কমপক্ষে তিন বছর রাখা জরুরি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব ও সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের বর্তমান মহাপরিচালক আগামী ১৪ সেপ্টেম্বরের পরে থাকবেন না, অবসরে যাবেন। এটা সত্যিই হতাশার। কারণ কাজ বুঝে না নিতে নিতেই মহাপরিচালকরা বিদায় নেন। আবু হেনা মোস্তফা কামাল পদোন্নতি পেয়ে বদলি হয়ে চলে গেলেন। তিনি ভালো কিছু উদ্যোগ নিয়েছিলেন, শেষ করতে পারেনি। এরপর এ এফ এম মঞ্জুর কাদির এসেছিলেন, কিন্তু কিছু উদ্যোগ নিতে না নিতেই তিনিও অবসরে গেছেন।’
মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ আরও বলেন, ‘এরপর ফসিউল্লাহ্ স্যারকে পেয়েছিলাম। আমার দেখা মতে তিনি সবচেয়ে কর্ম-উদ্যোমী মানুষ। তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিয়ে সমস্যার সমাধান করতে পারেন। দায়িত্ব নেওয়ার একবছর না হতেই তাকেও চলে যেতে হচ্ছে। এভাবে কাজ বুঝে নিতে না নিতেই মহাপরিচালকরা বিদায় নেওয়ায় মাঠ পর্যায়ের শিক্ষক-কর্মকর্তারা ভোগান্তিতে পড়েন। একজন মহাপরিচালকে কমপক্ষে তিন বছর রাখা প্রয়োজন। যদি তাকে মহাপরিচালক হিসেবে চুক্তিতে আবারও নিয়োগ করা হয় তাহলে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবেন।’
মন্ত্রণালয়ের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, প্রাথমিক শিক্ষার প্রয়োজনেই মো. ফসিউল্লাহ্ মহাপরিচালক হিসেবে চুক্তিতে নিয়োগ পেতে পারেন। কারণ যেসব উদ্যোগ তিনি নিয়েছেন নতুন মহাপরিচালক আসলে তা পিছিয়ে যেতে পারে। তৃতীয় প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিপি ৩) এবং চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির (পিইডিপি ৪) বাস্তবায়ন পিছিয়ে পড়তে পারে।
বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতির মুখপাত্র এস এম ছায়িদ উল্লাহ বলেন, ‘অধিদফতরে যারা ডিজি হিসেবে আসছেন, তারা যখন সবকিছু বুঝে উঠছেন, তখনই তাদের অবসরের সময় চলে আসছে। ডিজিরা এসে প্রতিশ্রুতি দেন, আর কাজ শুরু করতে না করতেই চলে যান। আমরা এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ চাই। শিক্ষকদের সমস্যা সমাধানে কমপক্ষে তিন বছরের জন্য মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন এমন কাউকে চাই। কারও চাকরি শেষ হলেও চুক্তি করে হলেও তিন বছর রাখা প্রয়োজন।
এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন বলেন, ‘তাকে (মো. ফসিউল্লাহ্) চুক্তিতে রাখলে প্রাথমিক শিক্ষার লাভ হতো। কিন্তু বিষয়টি সরকারের।’
শিক্ষকরা বলছেন, বেশির ভাগ মহাপরিচালক কম সময়ের জন্য থাকায় তাদের নেওয়া উদ্যোগ কাজে আসে না। নতুন মহাপরিচালক নতুন করে উদ্যোগ নেন। এতে ব্যাহত হয় প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন কাজ।
প্রসঙ্গত, দেশে ৬৫ হাজার ৬২০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক রয়েছেন প্রায় চার লাখ। এছাড়া অধিদফতরের অধীনে বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও অফিস রয়েছে।