দামুড়হুদার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোচিং বাণিজ্যে

স্টাফ রিপোর্টার:কোচিং বাণিজ্য বন্ধে চুয়াডাঙ্গার জেলা প্রশাসক নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। চুয়াডাঙ্গা জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান, কোচিং সেন্টারের পরিচালক, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও জেলা পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাবৃন্দের সাথে মতবিনিময় সভাও করেছেন জেলা প্রশাসক। সভায় বেশকয়েকটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রেরণ ও তা বাস্তবায়ন করে জেলা প্রশাসক বরাবর প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য বলা হয়। কিন্তু তাতে কী? কোচিং লোভী শিক্ষকরা ঠিকই কৌশলে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো মহাবিদ্যালয় ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পর চুয়াডাঙ্গায় এবার কোচিং বাণিজ্যে সম্পৃক্ত হয়েছেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও। এমনই অভিযোগ পাওয়া গেছে জেলার দামুড়হুদা উপজেলার কালিয়াবকরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে। ওই এলাকার সচেতন অভিভাবকরা ওই অভিযোগ করেন।
অভিযোগসূত্রে জানা গেছে, মিজানুর রহমান এক যুগেরও বেশি সময় থেকে কালিয়াবকরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদটি শূন্য থাকায় প্রায় ৬ বছর থেকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন তিনি। সেই থেকেই তার বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতাসহ নানা অভিযোগ ওঠে। তিনি বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের দিয়ে ক্লাস না করিয়ে কালিয়াবকরী গ্রামের ‘আশার আলো’ (তেঁতুলতলা) নামের একটি কোচিং সেন্টারে শিক্ষার্থীদের যেতে বাধ্য করেন। বিদ্যালয়ে অভিভাবক সমাবেশে অভিভাবকদের ডেকে ওই কোচিং সেন্টারে তাদের ছেলে-মেয়েকে পাঠানোর জন্য অনুরোধ করেন। বিদ্যালয়ে এসে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেয়ার ভয়ভীতিও দেখান। সম্প্রতি বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণার দিন অভিভাবকদের ডেকে আবারও ওই কোচিং সেন্টারে তাদের ছেলে-মেয়েকে পাঠানোর জন্য বলেন। সমাপনী পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর ওই কোচিং সেন্টারের লোকজনকে সাথে নিয়ে প্রত্যেক অভিভাবকের বাড়ি গিয়ে ওই কোচিং সেন্টারে তাদের ছেলে-মেয়েকে পাঠানোর জন্য বলেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন সচেতন অভিভাবক জানান, একজন সরকারি চাকরিজীবী কিভাবে কোচিঙে যেতে শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করছেন যেখানে সরকার কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করতে আইন তৈরি করছে? তাছাড়া জেলা প্রশাসক কোচিং বাণিজ্য বন্ধে পত্রিকায় প্রচার-প্রচারণা করছেন। কিন্তু তা তোয়াক্কা না করেই তিনি ওই কোচিঙে শিক্ষার্থীদের পাঠাচ্ছেন। ওই কোচিং সেন্টার থেকে বিকাশের মাধ্যমে মাসোহারা নিচ্ছেন বলে এলাকায় জোর গুঞ্জন রয়েছে। শুধু তাই নয়, সমাপনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের প্রশংসাপত্র দিতেও নিচ্ছেন মোটা অঙ্কের টাকা। এতে বিপাকে পড়েছেন এলাকার খেটে খাওয়া দরিদ্র মানুষ। এর আগে তিনি মোটা টাকার বিনিময়ে বিদ্যালয় থেকে বয়স প্রমাণের ভুয়া প্রত্যয়নপত্র দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জন্মসনদ পেতে সহযোগিতা করতেন। এতে এলাকায় বাল্যবিয়ের হার বৃদ্ধি পায়। তৎকালীন দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিষয়টি জানতে পেরে তাকে তলব করেন। সে দফায় ক্ষমা চেয়ে পার পেয়ে যান তিনি। এছাড়া প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় নকল ও অসাধু উপায় অবলম্বনে সহযোগিতার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। সে দফায়ও ক্ষমা চেয়ে পার পান তিনি। এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের সভাপতি জুলফিকার আলী ভুট্টো জানান, অনেক অভিভাবক ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে তার কাছে কোচিঙের বিষয়ে অভিযোগ করেছেন। পরে তাকে সতর্ক করা হয়েছে। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত শিক্ষক মিজানুর রহমান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, অভিভাবকরা মিথ্যা কথা বলছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, বিষয়টি লিখিতভাবে কোনো অভিভাবক জানায়নি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ওই এলাকার সচেতন অভিভাবকরা।

Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।