রাজিব,ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনে থাকা ছাত্রলীগ পিছু হটেছে। পদত্যাগের দাবিতে সংগঠনটি আলটিমেটাম দিলেও এবার বলছে ভিসির বিরুদ্ধে তাদের কোনো আন্দোলন নেই। যারা ইতিহাস বিকৃতির জন্য দায়ী তাদের শাস্তি চায় ছাত্রলীগ।
শুক্রবার রাত ৯টার দিকে ভিসির সঙ্গে বৈঠকে শেষে বেরিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ এবং সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসাইন।
আধা ঘণ্টার বেশি সময় বৈঠক শেষে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইতিহাস বিকৃতির জন্য যারা জড়িত তাদেরকে তদন্তের মাধ্যমে বের করে আনা এবং তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণই আমাদের প্রধান দাবি। ভিসি আমাদেরকে এই দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়েছেন। তাই আমরা আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহার করলাম।’
ছাত্রলীগ নেতাদের এই ঘোষণার পর ভিসির বাসার সামনে অবস্থানরত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা চলে যান। এর মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটে দিনভর আন্দোলনের।
১ জুলাই শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি স্মরণিকা প্রকাশ করে। এই স্মরণিকার প্রকাশক ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ৯৫ বছর উদযাপন কমিটির সদস্যসচিব সৈয়দ রেজাউর রহমান ‘স্মৃতি অম্লান’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ লেখেন। এতে তিনি মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের পরিচিতি তুলে ধরতে গিয়ে লেখেন, ‘জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি, সাবেক সেনাপ্রধান ও একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা।’
দুপুরে টিএসসিতে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের আলোচনা সভা চলাকালে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রেজাউর রহমানের লেখাটি ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতার দৃষ্টিতে আসে। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, ছাত্রলীগ নেতা ও শিক্ষকরা প্রতিবাদ জানান। উপাচার্য তাৎক্ষণিক ওই স্মরণিকা বাজেয়াপ্ত ও স্মরণিকা কমিটি বাতিল ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানান।
সভা শেষে দুপুর ১২টা থেকে পৌনে ১টা পর্যন্ত ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রেজাউর রহমানকে তার কার্যালয়ে তালাবন্দি করে রাখেন। প্রতিবাদে তারা স্মরণিকায় আগুন ধরিয়ে দেন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আমজাদ আলী ঘটনাস্থলে গিয়ে রেজাউর রহমানকে তালামুক্ত করে বের করে নিয়ে যান। দুপুর আড়াইটার দিকে উপাচার্য আরেফিন সিদ্দিক গাড়িতে করে তার বাসভবনের সামনে এলে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়ে গাড়ি ভাঙচুর করেন। একপর্যায়ে তারা উপাচার্যের গাড়িতে কিল-ঘুষি দেন এবং জুতা দিয়ে আঘাত করেন। পরে বিকাল পৌনে ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ অফিসের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উপাচার্যের অনুমতিতে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্টারকে অব্যাহতি দেয়ার বিষয়টি জানানো হয়।
রেজিস্ট্রারকে অব্যাহতির পর কিছুক্ষণের জন্য আন্দোলন কিছুটা থামলেও পরে ছাত্রলীগ ভিসির পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। রাত আটটার মধ্যে ভিসি পদত্যাগ না করলে আগামীকাল শনিবার থেকে ঢাবিতে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের হুমকি দেয় ছাত্রলীগ। এ সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ভিসিকে ‘রাজাকার’ উল্লেখ করে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। রাত আটটার দিকে ভিসির সঙ্গে বৈঠকে বসেন ছাত্রলীগ নেতারা। বৈঠকে অভিযুক্তদের বিচারে ভিসির আশ্বাস পেয়ে ছাত্রলীগ আন্দোলন থেকে সরে আসার ঘোষণা দেয়।