নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে সর্বমোট ৬ হাজার ১১০ আসনে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পুনর্গঠিত ৪টি ইউনিটে (কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিট, বিজ্ঞান ইউনিট, ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিট এবং চারুকলা ইউনিটে) অনুষ্ঠিত হবে এ পরীক্ষা। নির্দিষ্ট এ আসনের বিষয়ে চলতি মাসের শেষের দিকে বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়ে দেবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
আরো পড়ুন: ১৫ দিন অনুপস্থিত থাকলে নোবিপ্রবিতে ভর্তি বাতিল
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, চলতি বছরের ভর্তি পরীক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন সংখ্যায় পরিবর্তন আসছে না। ২০২১-২২ সেশনের সমান অর্থাৎ অপরিবর্তিতই থাকবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ২০২০-২১ সেশনে বিশ্ববিদ্যালয়টির মোট আসন সংখ্যা ছিলো ৭১২৫টি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন সংকট ও পড়ার গুণগত মান বৃদ্ধিতে ডিনস কমিটি বিশ্ববিদ্যালয় বরাবর আসন সংখ্যা কমানোর আবেদন জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০২১-২২ সেশনে ১০১৫টি আসন কমিয়ে ৬ হাজার ১১০টি আসনে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
পুনর্গঠিত ৪টি ইউনিট হলো- কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিট, বিজ্ঞান ইউনিট, ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিট এবং চারুকলা। চলতি বছরে ৪টি ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষার নাম আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রাম। এ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় নির্ধারিত আসনসংখ্যার মধ্যে কোটার আসনও অর্ন্তভুক্ত থাকবে। তবে ওয়ার্ড কোটা (শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী কোটা ) স্বতন্ত্রভাবে বিবেচিত হবে।
আরও পড়ুন: আগে ভর্তি নিয়েও প্রায় অর্ধেক আসন খালি থাকছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আব্দুল বাসির দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা গুণগত মান ঠিক রাখতে গতবছর ডিনস কমিটি বসে আসন কমানোর সুপারিশ করেছিলো। যার ফলে এক হাজারের অধিক আসন কমানো হয়েছে। এবছর আসন কমানোর কোনো পরিকল্পনা নেই। তাই এবারও সেটা অপরিবর্তিত থাকছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, ঢাবির সব কিছুর জন্যই আলাদা নীতি-নির্ধারনী কমিটি রয়েছে। তারা যেই সিদ্ধান্ত রেখেছে আসনের ব্যপারে সেটা নির্দিষ্ট এবং অপরিবর্তনীয়। এবছর আগের মতই আসন সংখ্যা অপরিবর্তিত থাকবে। পরবর্তীতে যদি বিশ্ববিদ্যালয় মনে করে তাদের আসন কমানো বা বাড়ানো প্রয়োজন; তাহলে আলোচনা সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সূত্রে জানা গেছে, ২০২২-২৩ সেশনে কলা অনুষদের ১৭টি বিভাগে নির্ধারিত আসন রয়েছে ১ হাজার ৩৬০টি। এদের মাঝে প্রতি বিভাগ হিসেবে বাংলায় ১২০, ইংরেজিতে ১২০, আরবিতে ১০০, ফারসি ভাষা ও সাহিত্যে ৭৫, উর্দুতে ৭০, পালি ও বুড্ডিস্ট স্টাডিজে ৫০, ইতিহাসে ১১০, দর্শনে ১২০, ইসলামিক স্টাডিজে ১০০, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে ১১০, তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনায় ৬৫, ভাষাবিজ্ঞানে ৭০, সংগীতে ৬০, বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতিতে ৬০ ও নৃত্যকলা বিভাগে ৩০টি, থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজে ২৫টি আসন রয়েছে।
ফ্যাকাল্টি অফ বিজনেস স্টাডিজ (এফবিএস) অনুষদের ৯টি বিভাগের জন্য এবারের বরাদ্দকৃত আসন ১০৫০টি। স্বতন্ত্র বিভাগ হিসেবে ম্যানেজমেন্ট, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস, মার্কেটিং ও ফাইন্যান্স এ চারটি বিভাগের প্রতিটিতেই আসন সংখ্যা ১৫০টি, ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস, ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ও ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট এ তিন বিভাগের প্রতিটিতে ১০০টি, ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের আসন ১০০টি, অর্গানাইজেশন স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড লিডারশিপ বিভাগে ৫০টি আসন রয়েছে।
সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের বিভাগের ১৬টি বিভাগের মোট আসন সংখ্যা মোট ১০৬৫টি। বিভাগ হিসেবে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ১৫০টি, আন্তর্জাতিক সম্পর্কে ৮০টি, সমাজবিজ্ঞানে ১৫০টি, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতায় ৬০টি, লোকপ্রশাসনে ৯০টি, শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়নে ৪০টি, উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজে ৪০টি, ক্রিমিনোলজিতে ৫০, কমিউনিকেশন ডিজঅর্ডারসে ৩০টি ও জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগে শিক্ষার্থী আসন ৫০টি।
এছাড়াও ২০২১-২২ সেশনে আসন বৃদ্ধি করা বিভাগের মাঝে অর্থনীতিতে ১৩০টি, পপুলেশন সায়েন্সেসে ৪০টি ও ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগে ৪০টি, নৃবিজ্ঞানে ৫৫টি , টেলিভিশন ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফিতে ৩০ টি ও প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিকেশন স্টাডিজে ৩০টি শিক্ষার্থী আসন রয়েছে।
জীববিজ্ঞান অনুষদে আটটি বিভাগের মোট আসন রয়েছে ৪৯৫টি। তার মধ্যে মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশে ১০০টি, উদ্ভিদ বিজ্ঞানে ৭০টি, প্রাণিবিদ্যায় ৮০টি ও মনোবিজ্ঞানে ৮০টি।জিন প্রকৌশল ও জীব প্রযুক্তি বিভাগে ২৫টি আসন রয়েছে।
ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি অনুষদে পাঁচটি বিভাগের মধ্যে নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ৩০টি ও রোবোটিকস অ্যান্ড মেকাট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ২৫টি আসন নির্ধারণ করার কথা বলা হয়েছে।
এছাড়া ফার্মেসি অনুষদে আসন সংখ্যা ৭৫টি ও আইনে ১১০টি এবং চারুকলা অনুষদের আটটি বিভাগের মোট আসন ১৩০টি রয়েছে। আর ১০টি ইনস্টিটিউটের মোট আসন সংখ্যা রয়েছে ৮৭৫টি। এদের মাঝে শিক্ষা ও গবেষণায় ১২০টি, সমাজকল্যাণ ও গবেষণায় ১০০টি ও আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে ১৪০টি এবং পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞানে ৪০টি ও তথ্যপ্রযুক্তিতে ৫০টি আসন রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় পুনর্গঠিত ৪টি ইউনিট আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারী থেকে ২০ মার্চ রাত ১১:৫৯ মিনিট পর্যন্ত অনলাইনে আবেদন প্রক্রিয়া চালু থাকবে। আর কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা ৬ মে, বিজ্ঞান ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা ১২ মে, ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা ১৩ মে এবং চারুকলা ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা (সাধারণ জ্ঞান ও অংকন) ২৯ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হবে। পরীক্ষা সকাল ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে।
চারুকলা ইউনিট’ ব্যতীত অন্য ৩টি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা ঢাকাসহ ৮টি বিভাগীয় শহরে অনুষ্ঠিত হবে। পূর্ণমান ১০০ নম্বরে হবে এ পরীক্ষা। তবে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার সমন্বিত ২০ নম্বরসহ মোট ১২০ নম্বরের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে।
কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিট, বিজ্ঞান ইউনিট, ব্যবসা শিক্ষা ইউনিটের ১০০ নম্বরের পরীক্ষায় ৬০ এমসিকিউ ও ৪০ লিখিত অংশ থাকবে। এমসিকিউ ৬০ নম্বরের জন্য প্রতিটি শিক্ষার্থী সময় পাবে ৪৫ মিনিট এবং লিখিত ৪০ নম্বরের জন্য ৪৫ মিনিট সময় থাকবে। চারুকলার ১০০ নম্বরেের মধ্যে সাধারণ জ্ঞান ৪০ নম্বরের জন্য সময় বরাদ্দ ৩০ মিমিট এবং অঙ্কনের জন্য ৬০ নম্বরের জন্য ৬০ মিনিট সময় পাওয়া যাবে।