দফায় দফায় মনোনয়নের তালিকা প্রকাশ করেও নির্ধারিত আসন পূরণ করতে পারছে না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদভুক্ত উর্দু, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য, সংস্কৃত এবং পালি অ্যান্ড বুড্ডিস্ট স্টাডিজ বিভাগ। গত বছর এ চার বিভাগের মোট ১৩০টি আসন কমানো হলেও এসব বিভাগে ভর্তি হতে আগ্রহী শিক্ষার্থীর খরা দেখা যাচ্ছে।
উর্দু, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য, সংস্কৃত এবং পালি অ্যান্ড বুড্ডিস্ট স্টাডিজে শিক্ষার্থী ভর্তির কার্যক্রম এখন কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটের মাধ্যমে হয়ে থাকে। গত ৬ মে এই ইউনিটের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা হয়। নতুন এ শিক্ষাবর্ষের শ্রেণি কার্যক্রমও গত মাস থেকে শুরু হয়েছে। অথচ এখনো মোট ১২৯টি আসন ফাঁকা আছে উর্দু, ফারসি, সংস্কৃত ও পালি বিভাগে।
আরো পড়ুন: ৪৩তম বিসিএসের ভাইভা শুরু আজ
বর্তমানে উর্দু বিভাগে আসনসংখ্যা ৭০, ফারসিতে ৭৫, সংস্কৃতে ১১০ আর পালিতে আসন আছে ৫০টি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তালিকা বলছে, উর্দু বিভাগে ৪৩টি, ফারসিতে ২৪টি, সংস্কৃতে ৩৮টি এবং পালিতে ২৪টি আসন এখনো ফাঁকা রয়েছে। কয়েক দফায় শিক্ষার্থী মনোনয়ন দেওয়া হলেও এসব বিভাগে আসন পূরণ হয়নি। ফাঁকা আসনগুলো পূরণে আবারও শিক্ষার্থী মনোনয়নের তালিকা প্রকাশের পাশাপাশি মাইগ্রেশনের সুযোগ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন কলা অনুষদ ও আসন ফাঁকা থাকা বিভাগগুলোর দায়িত্বশীল শিক্ষকেরা। এরপর দ্রুতই আসনগুলো পূরণ হয়ে যাবে বলে তাঁদের ধারণা।
চাহিদা কম হলেও বিপুল খরচ
পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা উর্দু। ১৯৭১ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে গণহত্যার জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা না চাওয়ায় ২০১৫ সালে দেশটির সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সেই থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থী বা শিক্ষকের একাডেমিক উদ্দেশ্যে পাকিস্তানে যাওয়ার সুযোগ নেই।
বাংলাদেশে উর্দু ভাষার কোনো প্রায়োগিক ক্ষেত্র নেই, নেই কোনো বাজার-চাহিদাও। তবু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্দু বিভাগে প্রতি শিক্ষাবর্ষে ৭০ জন করে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হচ্ছে। এর আগের শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত এখানে প্রতিবছর ভর্তি করা হতো ১১০ জন করে।
দেশে প্রায়োগিক ক্ষেত্র বা বাজার-চাহিদা নেই সংস্কৃত, পালি অ্যান্ড বুড্ডিস্ট স্টাডিজ এবং ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিষয়েরও। প্রতিবছর যথাক্রমে ১১০, ৫০ ও ৭৫ জন করে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হচ্ছে এসব বিভাগে। বছর বছর শিক্ষার্থী ভর্তি করা হলেও এসব বিভাগে স্নাতক-স্নাতকোত্তর করা শিক্ষার্থীদের সংশ্লিষ্ট ভাষার জ্ঞান ও দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
একসময় সংস্কৃত ও পালি নামে একটি বিভাগ ছিল। ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষ থেকে এটি ভেঙে দুটি বিভাগ চালু হয়। একটি পালি অ্যান্ড বুড্ডিস্ট স্টাডিজ, অন্যটি সংস্কৃত বিভাগ। এ দুই বিভাগে যথাক্রমে ১১ ও ১০ জন করে শিক্ষক রয়েছেন। অন্যদিকে, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য এবং উর্দু বিভাগে শিক্ষক আছেন নয়জন করে।
এসব বিভাগে বিপুল শিক্ষার্থীকে সেবা দিতে দরকার হচ্ছে প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারীও। ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ও নানা ধরনের ভাতায় বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যয় হচ্ছে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা (২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষ)। উর্দু বিভাগে এ ব্যয় ১ কোটি ৫৬ লাখ টাকা, সংস্কৃত বিভাগে ১ কোটি ৯৭ লাখ টাকা আর পালি অ্যান্ড বুড্ডিস্ট বিভাগে এ ব্যয় ১ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ, এ চার বিভাগে বেতন-ভাতায় বছরে ব্যয় হয় প্রায় ৭ কোটি টাকা।