নিজস্ব প্রতিবেদক,২৫ সেপ্টেম্বর। জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদক ২০১৭-এ শিক্ষক(পুরুষ) ক্যাটাগরিতে ঢাকা জেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছেন কেরাণীগঞ্জের শিক্ষক জনাব শাহিনুর আল-আমীন। তিনি কেরাণীগঞ্জ উপজেলার চুনকুটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসাবে কর্মরত আছেন। তিনি বাংলাদেশ বেতারের একজন তালিকাভূক্ত গুণী কন্ঠশিল্পী, বাংলাদেশ টেলিভিশনেও মাঝে মাঝে তিনি গান পরিবেশন করেন। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী জনাব শাহিনুর আল-আমীন ১৯৯৯ সালে নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলাধীন খামার মাথাভাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে প্রথম যোগদান করেন। তিনি ২০০৫ সালে ঢাকা জেলার কেরাণীগঞ্জ উপজেলায় বদলী হয়ে আসেন। কালিয়া উপজেলায় তিনি তার শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে এতটাই জনপ্রিয় ছিলেন য়ে, তার বদলী ঠেকাতে বিদ্যালয় ও তার বাড়ি ঘেরাও হয়েছিল। একই সাথে কান্নার রোল পড়ে গিয়েছিল।
এবছর জনাব শাহিনুর আল-আমীন ঢাকা বিভাগের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক(পুরুষ) নির্বাচিত হয়ে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছেন। বিগত ৫/৮/২০১৭ তারিখে তিনি ঢাকা জেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হন। বিভাগীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ হওয়ায় তার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, ”আমি শিশুদের স্বপ্ন দেখাই,ওদের নিয়ে নিজেও স্বপ্ন দেখি। আমার বাবাও একজন আদর্শিক শিক্ষক ছিলেন, শিক্ষকতা আমার রক্তে মিশে আছে। শিক্ষকতা আমার পেশা এবং নেশা দুটোই। আমি ঢাকা জেলা ও ঢাকা বিভাগে শ্রেষ্ঠ হওয়ায় আমার সারাটা শিক্ষকতা জীবনের কাজের স্বীকৃতি পেয়েছি, দায়িত্ব আরো বেড়ে গেল। আমি আমার দায়িত্ববোধ থেকে কাজ করি: করব। আমাকে যারা সহযোগিতা করেছেন তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।” খোঁজ নিয়ে জানা গেল, তিনি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছে খুবই প্রিয়। তিনি মাঝে মাঝে শিক্ষার্থীদের শ্রেণি কক্ষের বাইরে নিয়ে পাঠে নতুন মাত্রা যোগ করেন, ফলে শিখন-শেখানো হয় আনন্দের। জনাব শাহিনুর আল-আমীন পাঠ্যসূচির বাইরেও কিছু নতুন বিষয়ের উপর পাঠ দান করে থাকেন, যেমন- প্রকৃতি পাঠ, সৌন্দর্যবোধ, স্বপ্ন চার্ট, লাইফ স্কিল ইত্যাদি। এসমস্ত কাজে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাকে সহযোগিতা করেন। শিক্ষক শাহিনুর আল-আমীন বাংলা, ইংরেজি ও সংগীত বিষয়ের একজন দক্ষ মাস্টার ট্রেইনার। তিনি প্রাথমিক শিক্ষা ডিপার্টমেন্ট এর একজন স্বনামধন্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হিসাবে ডিপার্টমেন্ট এর সকল জাতীয় অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে অংশ নেন এবং ২০১১ সালে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রনালয়ের সাংস্কৃতিক দলের সদস্য হিসেবে সরকারি সফরে ইন্দোনেশিয়া গমন করেন। তাছাড়া ‘ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অব টিচার্স ইউনিয়নস’ এর এক্সিকিউটিভ সদস্য হিসেবে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সেমিনারে শ্রীলংকা ও ভারতের দিল্লী, হায়দারাবাদ, নালগোন্ডা, পাটনা, নাগপুর, গুজরাট ও ভুবনেশ্বর গমন করেন। ২০১৫ সালে তিনি ‘ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অব টিসার্স ইউনিয়নস’্-এর দিল্লী সম্মেলনে সদস্য পদে নির্বাচন করে বিজয়ী হন।
সংগীতে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ২০১০ সালে রুরাল জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন প্রদত্ত ডক্টর মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ স্মৃতি পদক পান এবং ২০১১ সালে ফটোজার্নালিস্ট প্রদত্ত স্বাধীনতা পুরষ্কারে ভূষিত হন । তিনি সকলের নিকট দোয়া প্রার্থণা করেছেন।