যে কোনো রোগের প্রাদুর্ভাব যখন বাড়ে তখনই গবেষকরা ওই রোগের প্রতিষেধক আবিষ্কারের চেষ্টা করেন। কোভিড-১৯ সংক্রমণে বিশ্ব যখন টালমাটাল অবস্থায় তখন গবেষকরা এর প্রতিষেধক আবিষ্কারে নামেন। খুব কম সময়ে আবিষ্কার করেন কোভিড-১৯ প্রতিরোধী টিকা।
বাংলাদেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যখন প্রতি বছরই ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বাড়ছে তখন প্রশ্ন উঠেছে এডিসবাহিত এই জ্বর প্রতিরোধে টিকা আবিষ্কারের কাজ কতটা এগিয়েছে। কারণ, টিকার মাধ্যমে ডেঙ্গু প্রতিরোধ করা গেলে অনেক জীবন বাঁচানো সম্ভব হবে।
জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরেই বিজ্ঞানীরা ডেঙ্গুর টিকা নিয়ে গবেষণা করছেন। টিকা আবিষ্কারের চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশ। এই চেষ্টায় সফলতা পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ডেঙ্গভ্যাক্সিয়া’ এবং জাপান ‘কিউডেঙ্গা’ টিকা। এই দুটি ভ্যাকসিনের পর ডেঙ্গুর ভ্যাকসিন আবিষ্কারে আরো কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা গবেষণা চালাচ্ছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং প্রিভেনটিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ২০২২ সালে জাপানের টাকেদা ফার্মাসিউটিক্যাল ডেঙ্গুর টিকা ‘কিউডেঙ্গা’ আবিষ্কারের ঘোষণা দেয়। এটি কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। কিউডেঙ্গা ডেঙ্গুর লক্ষণ প্রতিরোধ করে ৮০ দশমিক ২০ শতাংশ এবং হাসপাতালে ভর্তি প্রতিরোধ করে ৯০ দশমিক ৪ শতাংশ।
ইতোমধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, অস্ট্রিয়া, আইসল্যান্ড, ব্রাজিল, ইন্দোনেশিয়াসহ আরো কয়েকটি দেশ কিউডেঙ্গা ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে। ৪ বছর বয়স থেকে এই টিকা দেয়া যায়। ৩ মাসের ব্যবধানে ২টি ডোজ শরীরের ত্বকের নিচে দিতে হয়। ইন্দোনেশিয়ায় ২ ডোজ টিকার দাম ৮০ ইউএস ডলার। কিউডেঙ্গা জীবনব্যাপী প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে।
এছাড়া ইউএসএর সানোফি-পাস্তুুর ইনকরপোরেশন ‘ডেঙ্গভ্যাক্সিয়া’ নামের একটি টিকা এনেছে। একবার ডেঙ্গু হওয়ার পরই শুধু এই টিকা নেয়া যায়। প্রতি ডোজের দাম ১১৩ দশমিক ৭৫ ডলার। সিঙ্গাপুরসহ অনেক দেশে এই টিকা অনুমোদিত। ভারতের প্যানেসিয়া ফার্মাসিউটিক্যাল ও সেরাম ইনস্টিটিউট যৌথভাবে একটি টিকা নিয়ে কাজ করছে। এটি ৩য় পর্যায়ের ট্রায়ালের শেষ ধাপে রয়েছে।
তবে এখন পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডেঙ্গুর কোনো টিকাকে অনুমোদন দেয়নি। এশিয়ার ডেঙ্গুপ্রবণ দেশ ইন্দোনেশিয়ায় কিউডেঙ্গা ভ্যাকসিনের ব্যবহার শুরু হয়েছে। ইন্দোনেশিয়ার অভিজ্ঞতা পর্যবেক্ষণ করে এবং আমাদের দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতির বিবেচনায় এই টিকা আনার এবং ব্যবহারের বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।
এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, যেহেতু পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে ডেঙ্গু ব্যাপক আকারে হয় না- তাদের দেশে এটি বড় সমস্যা নয়, সেজন্য ডেঙ্গু নিয়ে প্রথম সারির গবেষণা খুব একটা হয়নি। জাপান এবং ইউএসএ দুটি টিকা আবিষ্কার করেছে। হাতে কোনো সুযোগ না থাকায় কয়েকটি দেশ এই টিকা ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে।
তবে এই টিকার ঝুঁকি আছে বলে তারা ব্যাপকভাবে ব্যবহার করতে পারছে না। কারণ, ডেঙ্গুর অনেক ধরন আছে। আগে একটি এবং পরবর্তীতে আরেকটি ধরন দিয়ে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। যাকে টিকা দেয়া হবে তিনি আগে সংক্রমিত হয়েছেন কিনা, হলে কোন ধরন দিয়ে সংক্রমিত হয়েছেন- এটি বোঝার উপায় নেই। সেজন্য একটু ঝামেলা।
ডেঙ্গু নিয়ে আরো ১০/১৫টি টিকা গবেষণাধীন রয়েছে উল্লেখ করে ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, আমরা আগেও দেখেছি শতাধিক টিকা পরীক্ষামূলক পর্যায়ে থাকলেও পরবর্তীতে ৫/৬টি টিকা বাজারে এসেছে। টিকার ক্ষেত্রে ১০ শতাংশের বেশি সাফল্য আসে না। এটিকেই সফল বলে বিবেচনা করা হয়। আমাদের দেশে ব্যাপকভাবে ডেঙ্গু হচ্ছে। এজন্য আমাদের উচিত যে কোনো ভালো গবেষণার অংশীজন হওয়া। কোনো গবেষণার ফেস-২, ফেস-৩ এ আমরা যুক্ত হতে পারি।