নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাঃ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের দেড় বছরের ডিপ্লোমা ইন প্রাইমারি এডুকেশন (ডিপিএড) কোর্স বাতিল করে ১০ মাস মেয়াদি প্রাইমারি টিচার বেসিক ট্রেনিং (পিটিবিটি) কোর্স চালু করেছিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। সরকারের এই সিদ্ধান্ত ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট।
আরো পড়ুন:প্রাথমিকের বৃত্তির ফল প্রকাশ কাল
এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি জ্যেষ্ঠ মোমতাজ উদ্দিন ফকির। তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী শুভ্র বসু। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
পরে আইনজীবী শুভ্র বসু জানান, গত বছরের ২২ নভেম্বর এবং ১৯ ডিসেম্বর ‘পরিমার্জিত প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ শিক্ষাক্রম স্টিয়ারিং কমিটির গ্রহণ করা সিদ্ধান্ত ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে প্রাইমারি টিচার বেসিক ট্রেনিং (পিটিবিটি) কোর্স পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।
চার সপ্তাহের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি), জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমির মহাপরিচালক (ডিজি), প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক (প্রশিক্ষণ), জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমির উপপরিচালককে (মূল্যায়ন) রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
পিটিআইগুলোর এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের কর্তৃপক্ষ হিসেবে কাজ করে থাকে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি (নেপ)।
হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে নেপ এর মহাপরিচালক (ডিজি) শাহ আলম বলেন, হাইকোর্টের আদেশের বিষয়ে এখনও কোনো তথ্য পাইনি। আদেশের কপি হাতে পাওয়ার পর বিস্তারিত জানাতে পারব।
গত বছরের ২২ নভেম্বর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত ‘পরিমার্জিত প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ শিক্ষাক্রম স্টিয়ারিং কমিটির’ দ্বিতীয় সভায় কয়েকটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এগুলো হলো ডিপ্লোমা ইন প্রাইমারি এডুকেশন (ডিপিএড) এর নাম পরিবর্তিত হয়ে প্রাইমারি টিচার বেসিক ট্রেনিং (পিটিবিটি) হবে। কোর্সের মেয়াদ ১৮ মাসের পরিবর্তে ১০ মাস হবে। এবং ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে তা কার্যকর হবে।
এরপর এবং ১৯ ডিসেম্বর ‘পরিমার্জিত প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ শিক্ষাক্রম স্টিয়ারিং কমিটির’ সভায় প্রশিক্ষণের মেয়াদ ১০ মাস করার সিদ্ধান্ত হয়। এর মধ্যে ৬ মাস প্রশিক্ষণ হবে পিটিআইয়ে এবং বাকি ৪ মাস প্র্যাকটিস টিচিং। ওই ৪ মাসের প্রশিক্ষণ বিদ্যালয়ে হবে।
শিক্ষা প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তে প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটগুলোতে (পিটিআই) নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এই সিদ্ধান্তকে আইনের লঙ্ঘন উল্লেখ করে তাদের পক্ষ থেকে গত ১৮ ডিসেম্বর আইনি নোটিশ দেওয়া হয়। ওই নোটিশের পর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় বাংলাদেশ পিটিআই কর্মকর্তা সমিতির আইন সম্পাদক ও ফেনী পিটিআইয়ের ইনস্ট্রাক্টর (বিজ্ঞান) মোহাম্মদ জাকির হোসেন চলতি মাসের শুরুর দিকে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন।
রিটে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি), জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমির মহাপরিচালক (ডিজি), প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশিক্ষণ), জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমির উপপরিচালককে (মূল্যায়ন) বিবাদী করা হয়।
রোববার ওই রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে আদালত রুলসহ আদেশ দেন।
বর্তমানে সারাদেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে ৬৫ হাজার ৫৬৬টি। এগুলোয় চার লাখের মতো শিক্ষক আছেন।
বর্তমানে দেশের ৬৭টি পিটিআইয়ের অধীনে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণ নিতে হয়। এটি সব শিক্ষকের জন্যই বাধ্যতামূলক। একসময় এই প্রশিক্ষণ কোর্সটি ছিল এক বছর মেয়াদি। তখন এর নাম ছিল সার্টিফিকেট ইন এডুকেশন (সিইনএড)। কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে হওয়া জাতীয় শিক্ষানীতি, ২০১০–এ এই কোর্সের মেয়াদ এক বছর থেকে বাড়িয়ে ১৮ মাস (দেড় বছর) করার কথা বলা হয়। এরপর শিক্ষানীতির সুপারিশ ও শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে ২০১২ সালে প্রথমে সাতটি বিভাগীয় শহরে অবস্থিত পিটিআইয়ে পরীক্ষামূলকভাবে দেড় বছর মেয়াদি কোর্স চালু করা হয়।
গুরুত্ব বিবেচনা করে এই কোর্সের নাম দেওয়া হয় ‘ডিপ্লোমা ইন প্রাইমারি এডুকেশন’। এভাবে পর্যায়ক্রমে ২০১৯ সাল থেকে দেশের সব কটি পিটিআইয়ে এই কোর্স শুরু করা হয়। পিটিআইগুলোর এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের কর্তৃপক্ষ হিসেবে ময়মনসিংহে অবস্থিত জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি (নেপ) কাজ করে থাকে।