ডেস্ক,২৩ এপ্রিল ২০২২ঃ শনিবার সকাল আটটায় শুরু হবে ঈদযাত্রার ট্রেনের টিকিট বিক্রি। তার ২১ ঘণ্টা আগে শুক্রবার সকাল ১১টায় তেজগাঁও স্টেশনে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছেন মো. ফারুক।
করোনার কারণে গত দুই বছর যেতে পারেননি। এবার ঈদ করতে পরিবার নিয়ে যাবেন জামালপুরে। চাই ট্রেনের টিকিট। ঈদে টিকিট সোনার হরিণ হয়ে যায় বলে আগেভাগেই লাইন ধরেন। তারপরও প্রথম হতে পারেননি। তার আগে আরও একজন এসেছেন।
শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে তেজগাঁও স্টেশনে সমকালের সঙ্গে কথা বলেন ফারুক। এই স্টেশন থেকে জামালপুর ও ময়মনসিংহ জেলার আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট বিক্রি হয়। এক নম্বর কাউন্টারের সামনে পত্রিকা বিছিয়ে আধশোয়া হয়ে ছিলেন তিনি।
এখানে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ৫৫ জন সিরিয়াল দিয়েছেন এক নম্বর কাউন্টরে। দুই নম্বর কাউন্টারে সিরিয়াল দিয়েছেন ৩০ জন। রাতভর যারা আসবেন তাদের সিরিয়াল রাখা হবে খাতায়। সকাল আটটায় এ সিরিয়াল অনুযায়ী সবাই লাইনে দাঁড়াবেন।
একদিকে বৃষ্টির কারণে পুরো এলাকা কাদায় মাখামাখি তার ওপর মশার বেজায় উৎপাত। রোজার রাত কাটবে কী করে- এমন প্রশ্নে জবাবে ফারুক জানালেন, ঘুমিয়ে, আড্ডা দিয়ে পার করে দেবেন। তারা বাসা খিলগাঁওয়ের নন্দীপাড়ায়। অত দূর যাওয়া সম্ভব হবে না ভোররাতে। তাই আশেপাশের কোনো দোকানে সাহরি সেরে নেবেন।
ফারুক বললেন, বৃহস্পতিবার তিনি যান কমলাপুরে ২৫ এপ্রিলের ট্রেনের টিকিটের জন্য। পাননি। তাই তেজগাঁওয়ে এসে লাইন ধরেছেন। অনলাইনেও টিকিট বিক্রি হবে- তা বাদ দিয়ে স্টেশনে কেনো রাতভর লাইনে ধরা? এ প্রশ্নে তিনি বললেন, ‘অনলাইনের ভরসা নেই। খালি ঘোরে। ঢোকা যায় না। টিকিট পাওয়া যায় না। ঢাকার থেকে চৌরাস্তা পর্যন্ত ভীষণ যানজট। রাস্তাও বেহাল। পরিবার নিয়ে বাসে যাওয়া সম্ভব নয়। ‘তিস্তা এপপ্রেস’র একটি কেবিনসহ ছয়টা টিকিট দরকার, পুরো পরিবারকে নিয়ে গ্রামে যেতে। তাই দুই দিনের কাজকাম মাথায় তুলে স্টেশনে পড়ে আছি।’
ফকিরাপুল থেকে আসা আল-আমিনের বক্তব্যও অভিন্ন। তিনি এসেছেন শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টায়। অনলাইনে ভরসা নেই, আর মহাসড়কের দুর্ভোগ পেরিয়ে পরিবার নিয়ে গ্রামে যাওয়ার সাহস নেই। সে কারণে ট্রেনই ভরসা। যাবেন জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে। স্ত্রী, সন্তানদের নিয়ে একটু স্বাচ্ছন্দ্যে বাড়ি ফিরতে কষ্ট করে রাত জাগছেন স্টেশনের চত্ত্বরে।
এবারের ঈদযাত্রায় ট্রেনের টিকিট কাটতে জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মনিবন্ধনে ফটোকপি লাগবে। তেজগাঁও কলেজের শিক্ষার্থী আকিবুল ইসলাম পরিচয়পত্র নিয়ে প্রস্তুত হয়েই এসেছেন। তিনি যাবেন ইসলামপুরে। তিস্তা, ব্রক্ষপুত্র, যমুনা, অগ্নিবীনা কিংবা দেওয়ানগঞ্জ স্পেশাল যে ট্রেনের পাবেন, সেই ট্রেনেই বাড়ি যাবেন।
শুধু তেজগাঁও নয় কমলাপুর থেকে টেলিফোনে খবর মিলল, সেখানেও সন্ধ্যা থেকেই লাইন ধরেছেন টিকিট প্রত্যাশীরা