নিজস্ব প্রতিবেদক ,৬ এপ্রিল ২০১৯ : সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষকদের টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেডের বিষয়ে সহজ সমাধান আর হলো না। ২০১৫ সালের জাতীয় বেতন স্কেল ঘোষণার পূর্বে প্রাপ্য টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেডের দাবিতে দীর্ঘদিন অধিদপ্তর মন্ত্রণালয়ের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোনো ফল না পেয়ে আদালতে যেতে হলো শিক্ষকদের। ইতোমধ্যে টাইম স্কেল ও সিলেকসন গ্রেডের বিষয়ে রিট দায়ের করা হয়েছে।
এছাড়া গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর সারাদেশেব্যাপী প্রধানমন্ত্রীর বরাবর ১৯৯৭ থেকে ২০০২ ব্যাচের সহকারী শিক্ষকদের বকেয়া ২য় টাইম স্কেল প্রদান, ২০০৫ ও ২০০৬ ব্যাচের শিক্ষকদের বকেয়া প্রথম টাইম স্কেল প্রদান এবং ২০০৯ থেকে ২০১১ ব্যাচের সহকারী শিক্ষকদের নবম গ্রেড প্রদান করার দাবি সংবলিত একটি স্মারকলিপিও প্রদান করেছিলো বাংলাদেশ সহকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি। তাত্ওে কোনো ফল পায়নি শিক্ষকরা।
প্রায় ৬হাজার শিক্ষক কোন্ অজানা কারণে প্রাপ্য টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পাচ্ছেন না তা তারা জানেন না। শিক্ষা এবং অর্থ মন্ত্রণালয় একে-অপরের উপর দায় চাপিয়ে দিয়েই তাদের দায়িত্ব শেষ করছেন। দুই মন্ত্রণালয়ের চিঠি চালাচালিতে কোনো সমাধান না দেখে আদালতের স্মরণাপন্ন হতে বাধ্য হলেন শিক্ষকরা ।
চলতি বছরের ১১ মার্চ বকেয়া টাইম স্কেল আদায়ে বাংলাদেশ সহকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি (বাসমাশিস) ও ১২৬৮ জন শিক্ষকের পক্ষে প্রথম রিটটি করেন নবাবপুর সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মো. আব্দুস সালাম । ওই রিটের প্রেক্ষিতে জাতীয় বেতন স্কেল ২০০৯ এর ৭/২ এবং ৭/ ৯ ধারা অনুসারে যোগদান থেকে চাকরিকাল গণনা করে ৪বছর পূতিতে সিনিয়র গ্রেড ৮বছর পূতিতে ১ম টাইম স্কেল ১২ বছর পূতির্তে ২য় টাইম স্কেল কেন দেয়া হবেনা মর্মে রুল জারি করেন আদালত। চার সপ্তাহের মধ্যে শিক্ষা সচিব এবং মাউশির মহাপরিচালকসহ পাঁচজনকে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
আবার ২০১৫ সালে সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বিলোপের বিধান চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন ভোলার ফজিলাতুন্নেসা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের মোহাম্মাদ আলী বেলালসহ দেশের বিভিন্ন বিদ্যালয়ের ৩৮৮ জন সরকারি শিক্ষক। সেই রিটের উপর শুনানি শেষে চলতি বছরের ১১ এপ্রিল সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষকদের সিলেকশন গ্রেড এবং টাইমস্কেল বাতিল করার সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত। চার সপ্তাহের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শিক্ষাসচিব এবং শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ পাঁচজনকে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
গত বছরের ১২ এপ্রিল ১৯৯ ব্যাচের ১৬৫ জন শিক্ষক টাইম স্কেল সংক্রান্ত আরেকটি রিট দায়ের করেন মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মো. মঈন উদ্দীন। সেই রিটেও জবাব চেয়ে রুল জারি করেছে আদালত।
প্রথম রিটকারী এবং টাইম স্কলে ও সিলেকশন গ্রেড বাস্তবায়ন উপ-কমিটির আহবায়ক মো. আব্দুস সালাম জানান, আদালতের আদেশ অনুযায়ি ৪ সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো জবাব আদালতে দাখিল করেন নি। ঈদের পর শুনানী হবে বলে তাকে জানান মামলার আইনজীবিরা। তিনি বলেন, শিক্ষামন্ত্রণালয় ইচ্ছা করলেই টাইমস্কেল মঞ্জুরি আদেশ জারি করতে পারেন। যেহেতু শিক্ষকদের পাওনা টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেডে ২০১৫ সালের জাতীয় বেতন স্কেলে জারি হওয়ার পূর্বের এবং অর্থ মন্ত্রণালয় ২০০৯ সালের জাতীয় বেতন স্কেল অনুসারে জটিলতা নিরসনে ইতিবাচক সম্মতিও প্রদান করেছেন। কিন্তু অর্থমন্ত্রণালয়ের এই সম্মতি প্রদান করে দেওয়া চিঠিকে অস্পষ্ট বলে শিক্ষামন্ত্রণালয়ের কিছু কর্মকর্তা। তবে অর্থমন্ত্রণালয় থেকে এই চিঠিকে স্পষ্ট বলে উল্লেখ করেছিলেন।
অষ্টম বেতন কাঠামোর বাস্তবায়ন শুরু হয় ২০১৫ সালের ১জুলাই থেকে। যেখানে টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাতিল করা হয়েছিলো। আর সহস্রাধিক সহকারী শিক্ষক টাইমস্কেল পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেন ২০১৩/২০১৪ সালে। এই হিসেবে এসব শিক্ষক এক/দুইবছর আগেই টাইম স্কেল সুবিধা পাওয়ার কথা। কিন্তু দুই মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তহীনতা, সমন্বয়হীনতা ও ক্ষেত্রবিশেষ গাফিলতির কারণে হাইস্কুলের শিক্ষকরা এই আর্থিক ও মর্যাদার সুবিধা থেকে বঞ্চিত। ২০১২ সালের সরকার এক গেজেট জারি করে সহকারী শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণীর পদ মর্যাদা দেয় এবং পদ অনুযায়ী তাদের দুটি টাইমস্কেল ও একটি সিলেকশন গ্রেড পাওয়ার কথা। কিন্তু ২০১৫ সালের পে-স্কেল আদেশ অনুযায়ী সিলেকশন গ্রেডও টাইমস্কেল বিলুপ্ত করা হয়।
গত ২১ মে মির্জা বায়জিদ আহমেদ নামের একজন শিক্ষক ফেসবুকে হতাশা ব্যাক্ত করে বলেন, গত বছরই চাকুরিকাল ৮ বছর পূর্ণ হয়েছে। আশা ছিল, একটা টাইমস্কেল পাবো; নিজের বেতনভাতা উন্নীত হবে; সামাজিক ও অর্থনৈতিক আন্তঃ এবং আন্তঃপ্রতিযোগিতায় নিজের অবস্থান আরেকটু এগিয়ে যাবে। কিন্তু সেই আশা জাতীয় বেতনস্কেল ২০১৫ এর কুচক্র-কুটকৌশলের জিঞ্জিরে আটকা পড়ে গেল। অতঃপর, যা পেলাম তা শুধু একরাশ চাপাকান্না। এতদিনে বুঝে গেছি, `শিক্ষক` নামক এই নিরীহ শ্রেণিগোষ্ঠীকে নিয়ে স্বপ্রণোদিত হয়ে ভাববার মতো এই বাংলাদেশে একজনও নেই, হ্যাঁ, একজনও না! কেনই বা ভাববে, শিক্ষকরা কি কারো ক্ষমতা রক্ষায় ও কুক্ষিগতকরণে অবদান রাখতে পারে? বাদ দিন, “জাতির কারিগর” নামক একটা ভাওতাবাজি। পান থেকে চুন কষলেই আজ যে কেউ শিক্ষকদের মাথায় গোবর লেপ্টে দেয়, কলার ধরে, থাপ্পড় মারে, ঘুষি মেরে নাক ফাটিয়ে দেয়। এই হচ্ছে শিক্ষকদের বর্তমান সামাজিক অবস্থান। আফসোস!!
জানা যায় “জাতীয় বতেন স্কলে, ২০০৯ এর ৭(২) ধারা অনুযায়ী ১০ম গ্রডেে নিয়োগপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকগণের ০৮ বছর চাকরকিাল পূর্ণ হয়েছে ২০০৫ ও ২০০৬ ব্যাচের এমন ১,৩৩৫ জন সহকারী শিক্ষক/শিক্ষিকা ৮ম গ্রেডে‘প্রথম টাইম স্কেলে’ এবং ১২ বছর চাকুরিকাল পূর্ণ হয়ছেে ২০০১ ও ২০০২ ব্যাচের এমন ১,৩১৩ জন সহকারী শিক্ষক/শিক্ষিকা ৭ম গ্রডেে ‘দ্বিতীয় টাইম স্কেল’ প্রাপ্য। আর ৭(৯) ধারা অনুযায়ী ২০০৯, ২০১০ ও ২০১১ ব্যাচের প্রায় ৩০০০ হাজার শিক্ষক চাকরির ৪ বছর পূর্তিতে ৯ম গ্রেডে সিলেকশন গ্রেডে যথাক্রমে ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে প্রাপ্য হয়ছেন।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক মাধ্যমিক প্রফেসর ড. মো. আবদুল মান্নান এডুকেশন বাংলা’কে বলেন, আমি মনে করি জাতীয় বেতন স্কেল ঘোষণার পূবেরর্ প্রাপ্ত টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড শিক্ষকরা পাবার অধিকার রাখে। শিক্ষামন্ত্রণালয়্ও এ ব্যাপারে আন্তরিক। শুনেছি অর্থমন্ত্রণালয়ে এ বিষয়টি আটকে আছে। তবে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড সংক্রান্ত আদালতে রিটের বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত নন বলে জানান।