জুতা পায়ে শিক্ষকদের প্রভাতফেরি, পবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ

Image

নিজস্ব প্রতিবেদক,২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৩:

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পবিপ্রবি) অমর একুশে ফেব্রুয়ারি ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে জুতা পায়ে প্রভাতফেরীতে অংশগ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। ২১ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) সকাল ৭ টায় উপাচার্যের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত প্রভাতফেরীতে এ ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত খালি পায়ে থাকলেও একাধিক শিক্ষক ও কর্মকর্তাকে জুতা পায়ে দিয়ে প্রভাতফেরীতে অংশগ্রহণ করনে। এদের মধ্যে মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. ফজলুল হক, পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অনুষদের সহকারী রেজিস্ট্রার মোঃ মনিরুজ্জামান, শের-ই-বাংলা হল-২ এর সেকশন অফিসার আব্দুস সালাম, শিক্ষা ও বৃত্তি শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার মোঃ আতাউর রহমানকে প্রথম সারিতে জুতা পায়ে প্রভাতফেরীতে অংশগ্রহণ করতে দেখা গেছে।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে এমন কর্মকাণ্ড সরাসরি শহীদদের প্রতি অবমাননা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা। তারা জানান, এ ধরণের ঘটনা এবারই প্রথম নয়। এর আগেও একাধিকবার প্রভাতফেরিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের জুতা পায়ে দিয়ে এতে অংশগ্রহণ করতে দেখা গেছে।

আরো পড়ুন: ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগকে স্মরণ করল পাবিপ্রবি

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক জানান, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে এ ধরণের অবমাননা শুরু থেকেই হয়ে আসছে। ভাষা শহীদদের প্রতি শিক্ষকের মতো দায়িত্বশীল জায়গায় থেকে এরকম কর্মকাণ্ড কখনোই কাম্য নয়।

তবে, শুধুমাত্র প্রভাতফেরী-ই নয়, ২১ ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে পুস্পার্ঘ্য অর্পণের সময় সঞ্চালক একাধিকবার খালি পায়ে প্রভাতফেরীতে অংশগ্রহণ করার অনুরোধ করলেও বেশ কয়েকজনের জুতা পায়ে অংশগ্রহণকে প্রশ্নবিদ্ধ করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিষয়টি নিয়ে একাধিক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, শিক্ষকের মতো দায়িত্বশীল জায়গায় থেকে জাতীয় দিবসে যদি এ ধরণের কর্মকাণ্ড ঘটে তবে কি শিখবে অন্যরা?

এদিকে, শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের প্রভাতফেরীতে জুতা পায়ে অংশগ্রহণের অভিযোগ থাকলেও শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে দিনের অপর প্রভাতফেরীতে চিত্রটি ছিলো সম্পূর্ণ ভিন্ন। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নেতৃবৃন্দ ও অন্যান্য সাধারণ শিক্ষার্থীদের খালি পায়েই প্রভাতফেরীতে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়।

জুতা পায়ে প্রভাতফেরীতে অংশগ্রহণের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের বয়োজ্যেষ্ঠ প্রফেসর ড. ফজলুল হক বলেন, আমি অনেক আগে থেকেই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যেয়ে ভাষা শহীদের স্মরণ করে আসছি। তবে আজ যেটা হয়েছে সেটা একদমই ঠিক হয়নি, আমার কিছু শারীরিক সমস্যা রয়েছে যার কারণে খালি পায়ে হাঁটা কিছুটা কষ্টসাধ্য। একারণে বাধ্য হয়ে জুতা পরেছি।

শের-ই-বাংলা হল-২ এর সেকশন অফিসার আব্দুস সালাম অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, এটা আমার জন্য অনেক বড় একটি অন্যায় হয়েছে, কোন ভাবেই জুতা পায়ে দিয়ে এ শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠানে যাওয়া উচিত হয়নি ভবিষ্যতে এ বিষয়টির ব্যাপারে সতর্ক থাকবো।

এ বিষয়ে যোগাযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত বলেন, বিষয়টি নিয়ে এর আগেও বিভিন্ন জায়গায় কথা বলেছি। অনেকে এমন একটি জাতীয় বিষয়ের গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারেন না বলেই এ ঘটনা ঘটেছে। যদিও অনেক বয়োজ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা রয়েছে, কিন্তু শহীদদের স্মরণে এমন একটি আয়োজনে সকলেরই সতর্ক থাকা উচিত।

উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০২৩ উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয় দিবস উদযাপন কমিটি মঙ্গলবার শহীদ মিনারে পুস্পার্ঘ্য অর্পণ, জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন, প্রভাতফেরি, কালো ব্যাজ ধারণ ও আলোচনা সভার আয়োজন করে।

Image Not Found

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।