অানন্দবাজার ডেস্ক: মহেন্দ্র সিংহ ধোনি নাকি বরাবরের নির্বিকার চরিত্র!
অপ্রত্যাশিত সিরিজ হারের পর সাংবাদিক সম্মেলন তখন মাঝপথে। ভারতীয় সাংবাদিকদের কেউ একজন প্রশ্নটা জিজ্ঞেস করলেন ভারত অধিনায়ককে— আপনি কি ক্রিকেটটা আর উপভোগ করছেন? মনে হচ্ছে না, ওয়ান ডে অধিনায়কত্বেও এ বার একটা বদল দরকার? ঠিক যা করে বিরাট কোহলিকে টেস্টে আনা হয়েছে?
“আপনাদের যদি মনে হয় আমার জন্যই ভারতীয় ক্রিকেট ডুবছে, আমাকে সরিয়ে দিলেই সব সমস্যা মিটে যাবে, তা হলে দিন না। আমাকে সরিয়ে দিন,” মীরপুরের প্রেস কনফারেন্স রুমে কথাগুলো যখন বলছেন ভারত অধিনায়ক, প্রশ্নকর্তাদের স্তব্ধ দেখায়। এর চেয়ে অনেক বেশি উথাল-পাথাল সময়ের মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন ধোনি। জাতীয় মিডিয়া কিছু একটা খুঁজে পেলেই তাঁকে প্রবল ভাবে টেনে নামাতে চেষ্টা করেছে। কিন্তু এত অভিমানী তাঁকে কোনও দিন দেখায়নি। রবিবাসরীয় মীরপুরই প্রথম।
“আমি তো বলিনি আমাকে নিয়ে এসো। ক্যাপ্টেন করে দাও। আমি তখনই দায়িত্ব নিয়েছিলাম, যখন আমাকে নিতে বলা হয়েছিল। আজ যদি মনে হয় সেই দায়িত্বটা অন্য কাউকে দিলে ভাল হয়, তা হলে সেটাই হোক। আমার কোনও সমস্যা নেই। আমার কাছে দেশের হয়ে খেলাটাই সবচেয়ে বড় গর্ব,” উত্তরকে নিজেই দীর্ঘায়িত করে চলেন ধোনি। বলতে থাকেন, “আর ভারতীয় মিডিয়া আমাকে খুব ভালবাসে। আমি হলাম এমন একটা লোক, যাকে কোনও কিছু হলেই দোষী হতে হয়। সেটা তো হতেই হবে, না? কারণ আমার জন্যই তো সব কিছু হয়ে থাকে। আর দেখুন না, আপনাদের প্রশ্ন শুনে বাংলাদেশ মিডিয়াও কী রকম হাসছে!”
আসলে উত্তেজনার থার্মোমিটার প্রথম থেকেই চড়ছিল। ধোনি ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে প্রশ্নের চক্রব্যূহে ফেলে দেওয়া হয়। বলা হতে থাকে, আপনি কেন স্টুয়ার্ট বিনিকে নিলেন না? অজিঙ্ক রাহানেকে কোন যুক্তিতে টিমের বাইরে রাখলেন? মনে হয় না, এটা আপনার জীবনের সবচেয়ে জঘন্য ব্যর্থতা?
ভারত অধিনায়ক প্রথম দিকে শান্ত ছিলেন। প্রেস কনফারেন্স রুমে ঢোকার সময়ই তাঁকে ‘মওকা মওকার’ বিদ্রুপ উপহার দিয়েছে বাংলাদেশ জনতা। রাহানে-প্রসঙ্গ পর্যন্তও মেজাজ ধরে রেখেছিলেন। বলছিলেন, “যে উইকেটে পেস থাকে, সেখানে রাহানে খুব ভাল ব্যাট। কিন্তু এই উইকেটটা অন্য রকম ছিল।” কিন্তু স্টুয়ার্ট বিনির প্রসঙ্গ ওঠামাত্র পাল্টা দিতে থাকেন ধোনি। জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, কেন স্টুয়ার্টকে নেওয়া হল না? ধোনি শ্লেষ মেশানো উত্তর দেন, “আমি তো বললাম যে, পেসার কমাতে চেয়েছিলাম। তার পরেও আপনারা বলছেন, স্টুয়ার্টকে কেন খেলাইনি। আরে, ক্যাপ্টেন তো আমি। টিমের যেটায় ভাল হবে বলে মনে হয়েছে, সেটা করেছি। আপনি যে দিন ইন্ডিয়া ক্যাপ্টেন হবেন, সে দিন দল নির্বাচন করবেন না হয়!”
টিম ইন্ডিয়ার সাপোর্ট স্টাফ পাল্টানোর প্রয়োজন আছে কি না, তা নিয়েও বিদ্রুপ উড়ে আসে। ধোনি বলে দেন, “যাক, এত দিন পর তা হলে আপনারা ডানকান ফ্লেচারকে মিস করছেন! আর শুনুন, যে সাপোর্ট স্টাফকে পাল্টানোর কথা আপনারা বলছেন, তারাই কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার ওয়ান ডে-র সময় দুর্দান্ত কাজ করেছিল। আর দুমদাম কাউকে কোচ করে এনে বসিয়ে দেওয়ার দরকার আছে কি? রবি শাস্ত্রী তো আছেন, তাঁকে আপনাদের পছন্দ হচ্ছে না?”
কিন্তু এগুলো তুলনায় কিছুই না। পরের যন্ত্রণাবিদ্ধ অভিব্যক্তি, টুকরো অভিমান— সেগুলো আরও বেশি প্রভাবশালী হয়ে থেকে গেল। ভারতকে সাফল্যের শিখরে তুলে দেওয়ার কথাও একবার উঠেছিল। অভিমানী ধোনি বলে দেন, “আমি কখন বললাম যে দেশকে সাফল্যের চূড়োয় তুলেছি?” পরে অন্ধকার শের-ই-বাংলা দিয়ে ড্রেসিংরুমের দিকে হাঁটতে হাঁটতে ঘনিষ্ঠদের কাউকে কাউকে ধোনি নাকি বলে দেন, তিনি সাংবাদিক সম্মেলনে যা বলেছেন ভেবেচিন্তেই বলেছেন। তাঁর প্রয়োজন দেশের ক্রিকেটের কাছে ফুরিয়েছে মনে হলে, তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হোক।
প্রয়োজনে আজই দেওয়া হোক!