জাবি প্রতিনিধি, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ : সমাবর্তনের আগে গাউন পরে উল্লাসে মেতেছেন গ্র্যাজুয়েটরা।সমাবর্তনের আগে গাউন পরে উল্লাসে মেতেছেন গ্র্যাজুয়েটরা। ছবি: আরিফ ফয়সাল শাওন
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ষষ্ঠ সমাবর্তনকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস বিরাজ করছে। ১৫ হাজার গ্র্যাজুয়েট অপেক্ষায় রয়েছে ২৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য সমাবর্তনের। তবে রেজিস্ট্রেশন ফি ও প্রক্রিয়াগত জটিলতা, খাবার, সমাবর্তনের লোগো ও বক্তা, সমাবর্তনে গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধির ভাষণ না থাকাসহ বিভিন্ন বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
আরো পড়ুন: বিজ্ঞপ্তি দিয়েও ফলাফল প্রকাশ করেনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়
সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলম সভাপতিত্ব করবেন। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং সমাবর্তন বক্তা হিসেবে থাকবেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
গত ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে সমাবর্তনে নিবন্ধনকারী শিক্ষার্থীদের গাউনসহ উপহার সামগ্রী প্রদান কার্যক্রম শুরু হয়। এরপরই ক্যাম্পাসে উৎসবের আমেজ দেখা যায়। গাউন পরে বিভিন্ন স্থানে দল বেধে ছবি তুলতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের।
সমাবর্তনে নিবন্ধনকারী গ্র্যাজুয়েট জাহিদ হাসান বলেন, ‘স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের জন্য একসঙ্গে ৪ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়। এ ছাড়া স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে পৃথকভাবে ২ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে নিবন্ধন করা গেছে। আর এমফিল ডিগ্রির শিক্ষার্থীরা ৬ হাজার টাকা, পিএইচডি ৭ হাজার টাকা এবং সাপ্তাহিক কোর্সের সনদধারীরা ৮ হাজার টাকা দিয়ে নিবন্ধন করেছেন। এই ফি আমাদের অনেকের কাছেই অতিরিক্ত মনে হয়েছে।’
জাহিদ হাসান আরও বলেন, ‘এ ছাড়া সাপ্তাহিক কোর্সের শিক্ষার্থীদের সমাবর্তনে অংশগ্রহণের বিষয়টিও আমাদের পছন্দ হয়নি। তাদের অংশগ্রহণ বন্ধের দাবি জানিয়েছিলাম কিন্তু প্রশাসন মানেনি।’
এদিকে খাবার নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে অনেকে। সমাজবিজ্ঞান অনুষদের গ্র্যাজুয়েট আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘শুনেছি আমাদের খাবার হিসেবে দেওয়া হবে ছোট একটি বান পিৎজা, এক স্লাইস কেক, সন্দেশ, চিকেন ফ্রাই, আপেল এবং পানি। ৩১১ টাকা মূল্যের এই খাবারটি নাশতা হিসেবে দেওয়া হবে।’
এদিকে নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক এক গ্র্যাজুয়েট বলেন, ‘সমাবর্তন প্রত্যেক গ্র্যাজুয়েটের জীবনের একটি আনন্দময় মুহূর্ত। এই মুহূর্তটুকু শেয়ার করার জন্য পরিবারের দু-একজন লোক থাকবেই আমাদের সঙ্গে। কিন্তু সমাবর্তনের দিন গ্র্যাজুয়েট ছাড়া আমাদের সঙ্গে আসা কোনো অতিথির জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হয়নি। খাবার যেটি রাখা হয়েছে সেটিও নাশতা।’
এ ছাড়া আজ বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানায়, সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অর্থায়নে স্বর্ণপদকের ব্যবস্থা করা হয়নি। প্রাইভেট ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে সিন্ডিকেট কর্তৃক অনুমোদিত হয়ে একাডেমিক ফলাফলের স্বীকৃতি পাচ্ছেন ১৬ জন শিক্ষার্থী। এমনকি সমাবর্তনে গ্র্যাজুয়েটদের প্রতিনিধি হিসেবে কাউকে বক্তব্য দেওয়ারও সুযোগ হবে না।
এ ব্যাপারে উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলম বলেন, ‘এবার সমাবর্তন আয়োজনের জন্য সময় কম পেয়েছি। আগামীবার থেকে ডিনস অ্যাওয়ার্ড চালু করে নিজস্ব অর্থায়নে স্বর্ণপদক ও সেরা গবেষকদের স্বীকৃতি দেওয়া হবে। আর সমাবর্তনে আগে থেকেই গ্র্যাজুয়েটদের বক্তব্য দেওয়ার রেওয়াজ নেই।’
কোনো টেন্ডার ছাড়াই ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে সমাবর্তনের প্যান্ডেল তৈরির ব্যাপারে প্যান্ডেল কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক বশির আহমেদ বলেন, ‘আমরা খুবই অল্প সময় পেয়েছি। এত স্বল্প সময়ে টেন্ডার দিয়ে প্যান্ডেল তৈরি করা সম্ভব হতো না। তাই ডিপিএম (ডিটেক্ট পারচেজ মেথড) ব্যবহার করে প্যান্ডেল তৈরি করা হচ্ছে।’
সমাবর্তনের খাবারের বিষয়ে আপ্যায়ন কমিটির সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আলমগীর কবির বলেন, ‘এবার গ্র্যাজুয়েট ও আমন্ত্রিত অতিথির সংখ্যা বেশি হওয়ায় মধ্যাহ্ন ভোজের দিকে না গিয়ে আমরা প্যাকেটজাত নাশতা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। বিকেলের নাশতা হিসেবে এটিকে যথেষ্ট বলে মনে হয়েছে। এ ছাড়া খাবার বিতরণের জন্য চারটি বুথ স্থাপন করা হবে।’
এদিকে উইকেন্ড কোর্সের শিক্ষার্থীদের সমাবর্তনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেনি প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক রাশেদা আখতার বলেন, ‘অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে উইকেন্ড কোর্সের শিক্ষার্থীরা সমাবর্তনে অংশ নিতে পারে। যেহেতু তারাও আমাদের শিক্ষার্থী। তাই সমাবর্তনে অংশ নিতে তাদের কোনো বাধা নেই।’
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নুরুল আলম বলেন, ‘উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর ষষ্ঠ সমাবর্তন আয়োজনের সংকল্প ব্যক্ত করেছিলাম। এত স্বল্প সময়ের মধ্যে সমাবর্তন আয়োজন করতে পেরে আমি অভিভূত। সমাবর্তন সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের জন্য আপনার সহযোগিতা কামনা করছি। পারস্পরিক সহযোগিতা এবং সৌহার্দ্যমূলক সম্পর্কের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নেব এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করছি।’
প্রসঙ্গত, ষষ্ঠ সমাবর্তনে অংশগ্রহণের জন্য মোট রেজিস্ট্রেশন করেছেন ১৫ হাজার ২১৯ জন গ্র্যাজুয়েট। এদের মধ্যে নিয়মিত স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্নকারী ১১ হাজার ৪৪৪ জন, উইকেন্ড প্রোগ্রামের ৩ হাজার ৪৬১ জন ও এমফিল-ডিগ্রির ৩৪ জন ও পিএইচডি সম্পন্নকারী ২৮০ জন রয়েছেন।