মুরাদ হোসেন,ঢাকা,২৭ নভেম্বর: সদ্য জাতীয়করণকৃত (রেজিঃ বেসরকারি ) প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ১৪/৭/২০০৮ খ্রিঃ এর পূর্বে প্রধান শিক্ষকের কোন পদই বিদ্যমান ছিলোনা।
শুধুমাত্র দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনার স্বার্থে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের ১ নং (এক) ক্রমিকে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষককে মাত্র ৫০ (পঞ্চাশ) টাকা ভাতা প্রদানের মাধ্যমে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের সুযোগ প্রদান করে এমপিওভুক্ত করা হয়েছিলো| ১৪-৭-২০০৮ খ্রিঃ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের স্মারক নং প্রাগম/বিদ্যা-১/৮ জি-৭/৯৮ ( অংশ) ২৫৩ এর পরিপত্র মোতাবেক রেজিঃ বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহে (জাতীয়কর) শিক্ষা ও ব্যবস্থাপনার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার এ সকল বিদ্যালয়ে বিদ্যমান শিক্ষকের ৪টি পদের একটিকে উন্নীতকরণের মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক পদ সৃষ্টির সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছেন।
সে হিসেবে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়গুলোতে ১৪/৭/২০০৮ তারিখে প্রধান শিক্ষকের পদটি হলেও মূলত প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২/৫/২০১০ স্মারক নং প্রাগম/বিদ্যা-১/৮এ-১/২০০৯ -৬৭৫ এর প্রজ্ঞাপন মোতাবেক বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন ও পরীবিক্ষণ ইউনিটের ১১-৫-২০১০ তারিখ স্মারক নং ১১৭/৬৪ এর প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়গুলোর এসএমসির মাধ্যমে পদোন্নতি প্রদান, সংশ্লিষ্ট উপজেলা শিক্ষা কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে, সংশ্লিষ্ট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার কর্তৃক শিক্ষক নিয়োগ ও যাছাই বাছাই কমিটির সুপারিশের নিরিখে পদোন্নতি প্রাপ্তদের বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন ও পরীবিক্ষণ ইউনিট ঢাকা পর্যায়ক্রমে ২০১০, ২০১১, ২০১২ ও ২৬/৬/২০১৩ পর্যন্ত পদোন্নতি প্রাপ্ত ( সদ্য জাতীয়করণকৃত) প্রধান শিক্ষকগণকে প্রধান শিক্ষকের বেতনস্কেলে (৫৫০০-১২০৯৫/-) এমপিও ভুক্তকরণ করেছিলেন|
অর্থাৎ ২০০৮ সাল থেকে তাদেরকে প্রধান শিক্ষক হিসাবে গননা করা শুরু করলে কারও টাইমস্কেল পাবার কথা নয়। কিন্তু এক শ্রেণির সরকারী কর্মকর্তারা অসৎ উপায় অবলম্বন করে চুয়াডাঙ্গাসহ সারা দেশে জাতীয়করনকৃত শিক্ষকদের টাইমস্কেল সুবিধা দিচ্ছে। সেক্ষেত্রে তারা
(খ) চাকুরীকাল গণনার ক্ষেত্রে পদোন্নতি প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বেলায় সহকারী শিক্ষকের ক্ষেত্রে সহকারী শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকের ক্ষেত্রে প্রধান শিক্ষক উভয়ের সমষ্টির ভিত্তিতে চাকুরীকাল গণনা করতে বলায় (যদিও শর্তটি কেবলমাত্র চাকুরি গণনা ও ইনক্রিমেন্ট সুবিধার প্রয়োজনে ) তবুও এ নির্দশনাকে নিজেদের সুবিধার মানসে ভূল ব্যাখ্যা দিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের স্মারক নং ৩৮.০০০৭. ০১৫.০০০.০৩.০০.২০১৩.৮১১০৫ তারিখঃ ০৯ নভেম্বর ২০১৪ এর টাইমস্কেল প্রাপ্তির ক্ষেত্রে প্রচলিত বিধান অনুসরনের নির্দেশনাকে গোপনে রেখে (উপজেলা শিক্ষা বিভাগ ও হিসাবরক্ষণ অফিস থেকে বিধি ও নিয়ম বর্হিভূত ভাবে (১৪/৭/২০০৮ তারিখের পরে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি প্রাপ্তির পরে ১/২/৩ বছরের সময় ব্যবধানে ) ১/২/৩ টি টাইমস্কেল সুবিধা প্রদান করেছেন।
শূধুমাত্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের উন্নীত বেতন নির্ধারণ চিঠি ইস্যু হয়েছে । ১৫ নভেম্বর ২০১৭ সংক্রান্ত একটি জিও অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের বাস্তবায়ন অনু বিভাগ থেকে জারি করা হয়েছে যার নং ০৭.০০.০০০০ .১৬১.৩৮.০০.০০১.১৭.২৩১ । এর ফলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকেরা এখন থেকে প্রধান শিক্ষক পদের উন্নীত স্কেলে বেতন পাবেন।
এটি ৯ মার্চ ২০১৪ থেকেই কার্যকর হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে। অর্থ বিভাগের বাস্তবায়ন অনু বিভাগের সহকারি সচিব মো: সামীম আহসান স্বাক্ষরিত সরকারি ওই আদেশে বলা হয়েছে, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদের বেতন স্কেল উন্নীতকরণের ফলে উন্নীত বেতন স্কেলে বেতন নির্ধারণের জটিলতা নিরসনের লক্ষ্যে সরকার নিন্মরৃপ নীতিমালা অনুসরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
বেতন স্কেল উন্নীত হওয়ার আগে সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকেরা যিনি যে সংখ্যক টাইমস্কেল পেয়েছেন বা প্রাপ্য হয়েছেন, উন্নীত বেতন স্কেলের ওপরে সেই সংখ্যক টাইম স্কেল গণনা করে বেতন স্কেল উন্নীত করার অব্যবহিত আগে তার সর্বশেষ আহরিত বা প্রাপ্য মূল বেতনের ভিত্তিতে বেতন স্কেল উন্নীতকরণের তারিখে সরাসরি নির্ণীত সর্বশেষ স্কেলের কোন ধাপে মিললে ওই ধাপে, ধাপে না মিললে বিএসআর প্রথম খণ্ডের ৪২(১)(২) বিধি অনুসরণে নিম্নধাপে বেতন নির্ধারণ করে অবশিষ্ট টাকা পিপি হিসেবে প্রদান করতে হবে এবং ওই পিপি পরবর্তী বার্ষিক বেতন বৃদ্ধিতে তা সমন্বয়যোগ্য হবে।
বেতনস্কেল উন্নীত হওয়ার আগে পদোন্নতিপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকেরা প্রধান শিক্ষক পদে যিনি যে-সংখ্যক টাইমস্কেল পেয়েছেন বা প্রাপ্য হয়েছেন, উন্নীত বেতন স্কেলের উপরে সেই সংখ্যক টাইম স্কেল গণনা করে বেতন স্কেল উন্নীত করার অব্যবহিত আগে তার সর্বশেষ আহরিত বা প্রাপ্য মূল বেতনের ভিত্তিতে বেতন স্কেল উন্নীতকরণের তারিখে সরাসরি নির্ণীত সর্বশেষ স্কেলের কোন ধাপে মিললে ওই ধাপে, ধাপে না মিললে বিএসআর প্রথম খণ্ডের ৪২(১)(২) বিধি অনুসরণে নিন্মধাপে বেতন নির্ধারণ করে অবশিষ্ট টাকা পিপি হিসেবে প্রদান করতে হবে এবং ওই পিপি পরবর্তী বার্ষিক বেতন বৃদ্ধিতে তা সমন্বয়যোগ্য হবে।
গ) ওই পদ্ধতিতে বেতন নির্ধারণকালে মাঝখানে কোন বেতনস্কেল বা গ্রেডে বেতন নির্ধারণ করা যাবে না।
২০১৪ সালের ৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা সপ্তাহের অনুষ্ঠানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের বেতন স্কেল দু’ধাপ উন্নীত করে দ্বিতীয় শ্রেণীর পদ মর্যাদা ঘোষণা দেন। সহকারী শিক্ষকদের এক ধাপ বেতন স্কেল উন্নীত করার ঘোষণা দেন। কিন্তু প্রধান শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণীর পদ মর্যাদার ভিত্তিতে বেতন স্কেল নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে প্রধানশিক্ষক সমিতির দীর্ঘ প্রায় তিন বছরের দাবি ও আন্দোলন এবং দফায় দফায় অর্থ মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে শিক্ষক নেতাদের বৈঠকের প্রেক্ষিতেই এ আদেশ জারি হয়েছে।
পূর্বের প্রায় সাড় ৩৭০০০ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে প্রায় ১২০০০ বিদ্যালয়ে দায়িত্বপালন করছেন সিনিয়র সহকারি শিক্ষকবৃন্দ, আবার ২০০৯,২০১০,২০১৩ সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত প্রায় ৪৫০০ শিক্ষকবৃন্দ ও পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মরত প্রায় ১৭০০০ প্রধান শিক্ষক বাদ দিলে মাত্র সরাসরি প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত সর্বোচ্চ ৪৫০০ থেকে ৫০০০ প্রধান শিক্ষক ক্রস্পন্ডিং সুবিধা পাবেন।
অথচ সদ্য জাতীয়করণকৃত বিদ্যালয়ের নেতারা প্রচার মাধ্যমে প্রকাশ করে চলেছেন ৩২০০০ প্রধান শিক্ষক ক্রস্পন্ডিং সুবিধা পাবেন। সদ্য জাতীয়করণকৃত প্রধান শিক্ষকদের প্রায় ১০০০০ প্রধান শিক্ষক ২/৩ টি
টাইমস্কেলের বিধি উপেক্ষা করে চুয়াডাঙ্গাসহ সারাদেশে জাতীয়করন শিক্ষকদের টাইমস্কেল সুবিধা গ্রহন করেছে ।
অনিয়মতান্ত্রিক টাইমস্কেলে বেতন ভাতাদি উত্তোলন করায় এখনিই প্রতি শিক্ষক প্রতিমাসে প্রায় ৩৫০০ থেকে ৪০০০ টাকা অতিরিক্ত উত্তোলন করে আসছেন। তার উপরে সেই অবৈধ টাইমস্কেলগুলো গণনা করে যদি ক্রস্পন্ডিং সুবিধা নেয় তা হলে ঐ সকল প্রধান শিক্ষকের প্রতি মাসে প্রতিজনে প্রায় ১২০০০ থেকে ১৪০০০ টাকা বেতন ভাতাদিসহ অতিরিক্ত উত্তোলিত হবে।
সদ্য জাতীয়করণকৃত প্রধান শিক্ষকেরা সেই অনিয়তান্ত্রিক সুবিধাদি নেয়ার জন্য উপজেলা শিক্ষা অফিসে জোর তদবির করে যাচ্ছেন।তাদের টাকার লোভে অনেক সৎ কর্মকর্তারা জরিয়ে পড়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে সচিব বরাবর আবেদন দাখিল করা হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা হিসাবরক্ষণ বিভাগে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন সদ্য জাতীয়করণকৃত প্রধান শিক্ষকগণের টাইমস্কেল সুবিধা নেয়া কোন ভাবে বিধিসম্মত নয় তবে যেহেতু অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষ টাইমস্কেলগুলো মঞ্জুর করেছেন সেহেতু সেই কর্তৃপক্ষকেই এটি বাতিল করে পুণঃ বেতন নির্ধারণের আদেশ দিতে হবে । আর তবেই তাদের কর্তৃক অতিরিক্ত গৃহীত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা হবে। এখন জনমনে প্রশ্ন হচ্ছে এই বিপুল অর্থ লোপাটের দায় কার ? শিক্ষা বিভাগের নাকি , হিসাব রক্ষণ অফিসের ?