নিজস্ব প্রতিবেদক: জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে বাংলা ব্যবহার সময়ের দাবি বলে মন্তব্য করেছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। তিনি বলেন, বাংলা ভাষা বিশ্বের অনেক ভাষার চাইতে বৈজ্ঞানিক এবং সমৃদ্ধ। প্রযুক্তিগত জটিলতাও কাটিয়ে উঠছি আমরা। ১৯৫২ সালে তরুণরা রক্ত দিয়ে মায়ের ভাষার অধিকার রক্ষা করেছেন। এখন আমরা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষাকে বৈশ্বিক রূপ দেব।
‘জাতিসংঘে বাংলা চাই’ স্লোগানকে সামনে রেখে দেশের শীর্ষ নিউজ পোর্টাল জাগো নিউজ২৪.কম- এর অনলাইন আবেদন কর্মসূচির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রাণ-আরএফএল সেন্টারে এই কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে দাবির পক্ষে বক্তব্য রাখেন, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের প্রধান নির্বাহী আহসান খান চৌধুরী, প্রাণ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইলিয়াছ মৃধা, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বিপণন পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল, জাগো নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম এর সম্পাদক সুজন মাহমুদ ও প্রধান বার্তা সম্পাদক মহিউদ্দিন সরকার। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সহকারী সম্পাদক ড. হারুন রশীদ। এ সময় জাগো নিউজের প্রধান প্রতিবেদক মনিরুজ্জামান উজ্জ্বলসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। আলোচনায় অংশ নিয়ে মন্ত্রী বলেন, বাংলা ভাষার ইতিহাস সবারই জানা। রক্ত দিয়ে ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা করার ইতিহাস দ্বিতীয়টি আর নেই। ভাষার নামেই প্রতিষ্ঠা পেয়েছে ‘বাংলাদেশ’। তিনি বলেন, ভাষাকেন্দ্রিক আন্দোলনের হাজার বছরের ইতিহাস থাকলেও চূড়ান্ত আন্দোলনের রূপায়ন ঘটে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি। ১৯৭০ সালে বঙ্গবন্ধু প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে সর্বত্র বাংলা ভাষার প্রচলন ঘটবে। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালেই বঙ্গবন্ধু বাংলা ভাষার ব্যবহার এবং উন্নয়নে নানা উদ্যোগ নিয়েছিলেন। প্রশাসন, ব্যাংক, আদালত এমনকি সেনা কমান্ডেও বাংলার ব্যবহার নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়েছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর হত্যার পরেই বাংলা ভাষার প্রতি অবহেলা আর উদাসীনতা নেমে আসে। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশ বেতারকে বাংলাদেশ রেডিও নামকরণ করেন। বাংলার পরিবর্তে রোমান হরফ ব্যবহারে জোর দিতে থাকেন, বলেন মন্ত্রী। বাংলার প্রতি অবহেলা এখনও বিরাজমান উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখনও অনেকে মনে করেন, বাংলা ভাষা আন্তর্জাতিকমানের হতে পারবে না। এটি হচ্ছে আমাদের মানসিক সংকীর্ণতা। এমন প্রবণতা হচ্ছে কাক হয়ে ময়ূরের পালক ধারণ করা। এই প্রবণতার মাধ্যমে নিজের মাকে অস্বীকার ও মাতৃভাষার প্রতি অবজ্ঞা করা। নিজ মা ও ভাষাকে অবহেলা করে কেউ স্ব জাতিতে বড় হতে পারে না।
তিনি বাংলা ভাষার উন্নয়নে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, এমন কোনো ভাষা নেই, যার ডিজিটাল রূপ নেই। বাংলা ভাষারও ডিজিটাল রূপ রয়েছে। ‘জাতিসংঘে বাংলা চাই’ এই দাবি জোরালো করতে হলে প্রযুক্তির আরও উৎকর্ষ সাধন করতে হবে। আমাদের তরুণ মেধাবীরাই সে প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। প্রযুক্তির ব্যবহারের কারণেই ইংরেজির উপর নির্ভরতা কমে যাচ্ছে।বাংলা ভাষার উন্নয়নে সরকার বিশেষ একটি প্রকল্পও হাতে নিয়েছে বলে জানান মন্ত্রী, যা আগামী বছর নাগাদ শেষ হবে। আর এটি হলে জাতিসংঘে বাংলা ব্যবহারের যে দাবি, তাতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
মোস্তাফা জব্বার বলেন, জাতিসংঘে বাংলার ব্যবহার নিশ্চিত করতে স্ব-স্ব জায়গা থেকে দাবি তুলতে হবে। এই দাবির সার্বজনীন রূপ দিতে হলে মিডিয়াকেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। জাগো নিউজ এমনই একটি আওয়াজ তুলেছে। এ কর্মসূচির উদ্বোধন করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। অনলাইনে আবেদনের মাধ্যমে এই দাবি সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছি।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের বাইরে থেকে যেকোনো ব্যক্তি তার নাম এবং ই-মেইল অথবা মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে আবেদন (পিটিশন) করতে পারবেন। কর্মসূচি শেষে জাতিসংঘের মহাসচিব বরাবর আবেদনটি পৌঁছে দেয়া হবে। মাসব্যাপী এই কর্মসূচিতে সহায়তা করছে শীর্ষ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ‘প্রাণ’।